ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

রোববার নোয়াখালী গণহত্যা দিবস

ফয়সল মোকাম্মেল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৪
রোববার নোয়াখালী গণহত্যা দিবস শ্রীপুর গণহত্যার স্মরণে স্মৃতিসৌধ

ঢাকা: ১৫ জুন নোয়াখালী জেলাবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তাক্ত ইতিহাসের এ দিনটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ নয়টি মাসের প্রতিটি দিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে হাজার হাজার বাঙালি স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিল।



আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নাম না জানা লাখো শহীদদের সঙ্গে তারা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়। নোয়াখালী জেলা সদর দফতর মাইজদী শহরের উপকণ্ঠে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডভুক্ত উপশহর সোনাপুরের পূর্বপাশে এ ঘটনাস্থল।

১৯৭১ সালের ১৫ জুন নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন শ্রীপুর এবং করিমপুর গ্রামের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। প্রকাশ্যে  বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার টেকনিক্যাল হাই স্কুলের সেনাছাউনী থেকে উন্মাদের মতো ছুটে এসে এলোপাতাড়িভাবে গুলি বর্ষণ করে।

হানাদার বাহিনী ২ ঘণ্টার হত্যাযজ্ঞে তিনটি গ্রামের ১১৫ জন নিরাপরাধ বাঙালিকে হত্যা করে। সেদিন বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল শত শত শিশু-কিশোর, নর-নারী ও বৃদ্ধ।

এ দিন ৫টি ট্রাক ও ২টি জিপে করে এসে তারা শ্রীরামপুর গ্রামের প্রবেশ পথে আহমাদিয়া হাইস্কুল মাঠে অবস্থান নেয়। এখান থেকে তারা এগুতে থাকে পূর্বদিকে। বুলেটের আঘাতে হত্যা করতে থাকে অগণিত মানুষকে। পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় সবকিছু।

বিশিষ্ট সাংবাদিক আলমগীর ইউসুফ জানান, সেই দিন শ্রীপুর গ্রামের বৃদ্ধ সৈয়দ মুন্সি গলায় কোরআন শরীফ ঝুলিয়ে হানাদারদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও তার দুই পুত্র আলী করিম ও আলী হায়দারকে বাঁচাতে পারেননি। তার সামনেই তার পুত্রদের হত্যা করে বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় হানাদারা।

হানাদাররা সৈয়দ মুন্সির বাড়িতে প্রবেশের আগে আহমদিয়া হাই স্কুলের সামনে তার আরেক পুত্র আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে। একই সময় পাকিস্তানি হানাদাররা দক্ষিণ সোনাপুরের হোমিও ডাক্তার আবু ফররার দোকানে ঢুকে তাকে ও চিকিৎসা নিতে আসা এক মা এবং তার  দুই মাসের শিশু কন্যাকে গুলি করে হত্যা করে।

দেবেন্দ্র দাস নামে এক মুচির হাতে জুতা পালিশ করানের পরও এক পথচারীর হাতে পানি পান করার পর হানাদাররা দু’জনকেই হত্যা করে। শুধু এ তিন গ্রামের মানুষকে নয়, অনেক নিরীহ পথচারীকে হানাদারদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে।

শ্রীপুরের সৈয়দ মুন্সির বাড়িতে আবদুল মতিনের তিন ভাই আলী হোসেন, আলী করিম, আলী হায়দার খান সেনাদের বুলেটে শহীদ হয়েছেন। জীবিত দুই ভাইÑ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে।

লাশের ওপর দাঁড়িয়ে লুণ্ঠন করেছিলো মা-বোনদের হাতের বালা আর গলার হার, নগদ অর্থ সম্পদ। ভয়ে ভীত মা-বোনদের আর্তনাদ আর হাহাকারে গাছের পাতা নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

শ্রীপুর গ্রামের অধিবাসী সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার ফজলুল হক বাদল জানান, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি এসব গ্রামের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন,  অনেক যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও ২৯ মার্চ  জেলার সরকারি অস্ত্রাগার লুণ্ঠনসহ মুক্তিযুদ্ধের সহযোগিতার কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মেজর বোখারীর নেতৃত্বে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়।

তাণ্ডব শেষে ছাউনিতে ফিরে যাবার পথে তারা মাইজদী  কোর্টে মু্ক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল মালেক উকিল, শহীদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি, আব্দুর রশীদ ও সাখাওয়াত উল্লার পুরাতন হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত বাসভবনগুলোতে অগ্নিসংযোগ করে।

এই গণহত্যায় ঠিক কতজন নিহত হন তার সঠিক হিসাব কেউই দিতে পারেনি । তবে শ্রীপুর আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে স্থাপিত শহীদ স্মৃতি ফলকে ৫৫ জন শহীদের নাম ঠাঁই পেয়েছে।

১৯৭১-এর স্মৃতি বিজড়িত ১৫ জুনের সেই ঘটনা শ্রীপুর ও করিমপুরবাসীই শুধু নয়, সমগ্র নোয়াখালী জেলাবাসীও আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। নোয়াখালীর পৌরসভার চেয়ারম্যান রবিউল হোসেন কচির বিশেষ উদ্যোগে সেখানে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ। স্মৃতির মিনার তুমি হবে শতবর্ষের ঐতিহাসিক স্মৃতি তোমাকে দেখে আমরা ওদের স্মরণে আজো মাথানত করি।

ফয়সল মোকাম্মেল, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।