ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

ভারত কোন দিকে যাচ্ছে ।। আমেনা মহসিন

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৪
ভারত কোন দিকে যাচ্ছে ।। আমেনা মহসিন

ভারতে নতুন সরকার ক্ষমতা আরোহণের পর খুব বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি। কোন সরকারের নীতি বা কৌশল বুঝার জন্য এটা যথেষ্ট কম সময়।

তবে মোদি সরকারের গত কিছুদিনের ভূমিকাকে আমি পজেটিভই বলব। পজেটিভ বলব এ কারণে, মোদির অভিষেক অনুষ্ঠান যেভাবে সম্পন্ন হলো, তাতে একটা ইঙ্গিত ছিল। এর মাধ্যমে বুঝাতে চাইলেন, তিনি আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাইছেন।

এখানে অবশ্য তাঁর একধরনের রাজনীতিও জড়িয়ে আছে। কেননা মোদির দল গভীরভাবে আদর্শিক একটি দল।   একটি কমিউনাল পার্টি— যার ভেতর একটি কমিউনাল বেইজ রয়েছে। ফলে এমন একটি পার্টিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ একটু ভয় পারে— এটাই স্বাভাবিক। ফলে আমার মনে হয়, এটা ছিল দারুণ এক পরিকল্পনা। যে দলের গঠন একটি আর্দশকে ঘিরে, তেমন একটা দলের এমন উদ্যোগের মাধ্যমে একটা বার্তা পাঠানোর প্রয়োজন ছিল। এর মাধ্যমে একটা বার্তা পাঠাতে সক্ষমও হলো। তাঁর ইমেজের ব্যাপারে যে নেগেটিভ ব্যাপার ছিল, তাতে একটা প্রলেপ দিতে সক্ষম হলেন এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

ভারতের নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাপারটা যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে তাঁদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের এখানে আসছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন। এটা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এর মাধ্যমে বুঝা যায়, তাদের কাছে বাংলাদেশের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।  



আবার এর আরেকটি কারণ হতে পারে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শপথ অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি— বাংলাদেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণও রয়েছে। বাংলাদেশ একটি মুসলিম মেজরিটি কান্ট্রি। ভারতে বৃহৎ সংখ্যালঘু কিন্তু মুসলমানরাই। আর সেখানে যেসব দাঙ্গা হয়েছে, তার বেশিরভাগ ভারতীয় মুসলমানদের নিয়েই হচ্ছে। মোদি যে উন্নয়নের এজেন্ডা সামনে নিয়ে এসেছে, তার জন্য স্থিতিশীলতা খুবই দরকারী বিষয়। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা যেখানে মুসলিম মেজরিটি কান্ট্রি, সেখানে কোনমতেই ওরা আমাদের উপেক্ষা করতে চাইবে না। (আমি একবারের জন্যও বলছি না, মুসলিম কান্ট্রি, বলছি মুসলিম মেজরিটি কান্ট্রি। ) তৃতীয়ত হলো, মোদি সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতের লাস্ট্রসমূহে স্থিতিশীলতা চাইবেই। এখানে বাংলাদেশকে যেহেতু ধরা হয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে, তা মানবিক কারণেই হোক। তাছাড়া অতীতে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে এখানে দেখা গেছে। ভারতও কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রেখেছিল। ফলে বাংলাদেশ যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সব সংগঠনের জন্য মুক্তস্বর্গ না হয়ে ওঠে, তাও ওদের ভাবনায় আছে।

যদি ভারতের পলিসির দিকে একটু খেয়াল করি, তাহলে দেখব, তারা তাদের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে চাচ্ছে, প্রদেশ সমূহের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে চাচ্ছে। ভারতের এই অগ্রগতিগত পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই গুরত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভূ-রাজনৈতিক জায়গা থেকেও আমাদের অবস্থান কম গুরুত্বের নয়। আমি অনেকবারই বলেছি— আমরা নিজেরা নিজেদের ছোট করে দেখি। ভারতকে আমাদের প্রয়োজন আছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে ভারতেরও আমাদেরকে প্রয়োজন। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানগত কারণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আমরা মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র, সে হিসেবে আমরা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, একটা নেগেটিভ দিক রয়েছে এমন যে, জঙ্গীবাদের সঙ্গে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা লক্ষণীয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, স্টেট নয়, ওদেরকে নন-স্টেট স্পন্সর করছে। এসব সংগঠনকে নন-স্টেট স্পন্সর করলেও কন্ট্রোল করার জন্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটা ভাল সম্পর্ক দরকার। বাংলাদেশ যাতে কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন না করে, সে ব্যাপারেও ভারতকে নিশ্চিত হতে হবে। এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।

তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও বাংলাদেশ একটি রাইজিং পাওয়ার। এইসব বিবেচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ ভারতের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ভারত কোনমতেই চাইবে না এখানে একটা অস্থিরতা তৈরি হোক। তাছাড়া বাংলাদেশের যে পররাষ্ট্রনীতি, সেখানে কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসারিত হচ্ছে, জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো হচ্ছে। এটায় লক্ষণীয় বিষয়।

এ সময়টাকে বলা হচ্ছে বিশ্বায়নের যুগ। বলা হচ্ছে, দিজ সেঞ্চুরি ইন দ্য এশিয়ান সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিই তো হলো কীভাবে অনেক বেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের স্বার্থ যুক্ত করা যায়। পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়, একটা রাষ্ট্র কোন কোন ক্ষেত্রে শক্তিমান, আর কি কি দুর্বল বিষয় রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের তো অনেক স্ট্রং পয়েন্ট রয়েছে। সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অগ্রসর হবে।



লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়



বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘন্টা, ২৪ জুন, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।