সংবাদটা শুনে শুধু একটা কথাই মনে হলো- সাকিবের বিরুদ্ধে অন্যায় করা হলো। আশরাফুল কেলেংকারীতে যেমন হতাশা গ্রাস করেছে, তার চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে সাকিবের প্রতি বিসিবির এ অন্যায্য ও আগ্রাসী ভূমিকায়।
রাগ এবং আবেগের উর্ধ্বে উঠে বিচার করতে হয়, বিসিবি সেটা করতে পারেনি বোধহয়। আগামী ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো সাকিব আল হাসানকে। দেড় বছর দেশের বাইরে খেলায় দেওয়া হল নিষেধাজ্ঞা।
সাকিব আল হাসানকে শাস্তি দেয়ার জন্য বোর্ড যেন জন্য ওঁত পেতে ছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে শাস্তি দিল। সেটা লঘু পাপে গুরুদণ্ড নয়, একেবারে মৃত্যুদণ্ড। একটা প্লেয়ারকে দেড় বছর আটকে রাখার মানে পাপন সাহেবেরা জানেন? তার পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য এটাই যথেষ্ট।
দেড় বছর বিদেশে খেলতে পারবেন না সাকিব। প্রশ্ন হতে পারে, জনাব পবনরা কি এমন সুপুত্র প্রসব করেছেন যে আগামী দেড় বছরের মধ্যে বাইরের ক্লাবগুলো খেলার জন্য ডাকবে? আছে কেউ? আছেন সাকিবই। বাংলাদেশ বলতে বাইরের ক্রিকেট দুনিয়া তাকেই চেনে। তিনিই দেশকে যা কিছু তুলে ধরেছেন। সাকিবই একমাত্র বাংলাদেশি ব্র্যান্ড। তাকেই মি. পাপন আগামী এক বছর দেশের বাইরে খেলতে অনাপত্তি দিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
সাকিবের দোষটা কি? তিনি একসময় ক্ষেপে গিয়ে 'ডাক মারা' সিনিয়রদের সমালোচনা করেছিলেন? তার জন্য তার উপর ক্রুদ্ধ? তাকে দেখে নেওয়ার চেষ্টা? সেসব সিনিয়ররা নিজেদের অর্জনের দিকে তাকিয়েছেন কি? বর্তমানে যারা বোর্ডের হর্তাকর্তা তাদের অর্জনটা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি কারণে, ক্রিকেটীয় নয়।
সাকিবের সব কিছুতেই যেন দোষ খোঁজা হচ্ছিল। স্ত্রীকে ইভ টিজারদের হাত থেকে বাঁচাতে গেলেন এটা তার দোষ হল। কি অদ্ভুত! স্টার হয়েছেন বলে স্ত্রীর মান সম্মান রক্ষা করার অধিকার থাকবেনা। আইনের দোহাই দিয়ে বেড়ার এপাড়ে দাঁড়িয়ে ওপাড়ে স্ত্রীর লজ্জা দেখতে হবে? হুমকি দেয়া হল শাস্তি দেয়া হবে। সিলেটে অটোগ্রাফ না দেয়ায় তাকে ও তার স্ত্রীকে গালাগাল করায় সাকিব ক্ষেপে যান, এজন্য শাস্তির হুমকি দেয়া হয়। বিচার বসল। ইএসপিএন এর ক্যামেরা ক্রুর সাথে দুষ্টুমির ছলে করা অশালীন অঙ্গভঙ্গীর পর মাফ চেয়েও রেহাই পাননি তিনি।
শাস্তি দিলাম। এবারও আবেগীয় আচরণের জন্য তাকে শাস্তি দিলাম। সবসময় তাকেই কেন? আমরা কি আমাদের ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে মেধাবী প্লেয়ারটিকে যতনে রেখেছি? তার বদলে তাকে খুঁচিয়েছিই বেশী। অথচ নির্লজ্জের মত ভুলে যাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের যা কিছু অর্জন পুরাটাই সাকিব কেন্দ্রিক।
জিল্লুরপুত্র ধর তক্তা মার পেরেক স্টাইলে বিসিবি চালাতে চাচ্ছেন। এভাবে স্কুল চালানো যায় বড়জোর। কিন্তু খেলার মত প্রতিভা বা সুকুমার কর্ম অসম্ভব। প্রতিভাবানরা বেখেয়ালী হন, একটু রগচটা হন। তাদের বকে দিতে হয়। কেয়ারফুলি হ্যান্ডেল করতে হয়। যাতে প্রতিভা নষ্ট না হয়। শৃংখলাও যাতে ঠিক থাকে। এমন হলে তো শেন ওয়ার্ন, শোয়েব আখতারদের বছরের পর বছর নিষিদ্ধ করতে হয়। তারা করেছেন কী?
ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা হলে পিতা হতে হয়। পুত্রের দোষ ঢেকে রাখতে হয়। তাকে আদরে সামলে রাখতে হয়। আদি কালের মাস্টারদের মতো পিটিয়ে ছাল তুলে নয়। পাপন সাহেবরা জানেন না বোধহয়, পিটিয়ে চামড়া তুলে গরু দিয়ে হাল চাষ করানো যায়। কিন্তু ক্রিকেট খেলানো যায় না। নাজমুল হক পাপন সেই ফর্মুলায় পা দিয়ে বোর্ড চালাতে চাচ্ছেন কেন বুঝলাম না। তার আমলেই ক্রিকেট এর অর্জন নিম্নগামী। ব্লগে জানলাম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে তুলে এনে শেখ হাসিনা তাকে ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি বানিয়েছেন। তার কাছ থেকে এর বেশী আশা করি কী করে বলুন তো? ক্রিকেটের বারোটা এরাতো বাজাবেই।
মনোয়ার রুবেল: লেখক, কলামিস্ট, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৪