ইসরায়েলিদের ফায়ার ওয়ার্কস খুব প্রিয়। থার্টি ফার্স্ট নাইট বা বিশেষ বিশেষ রাত্রিতে তারা দল বেঁধে ফায়ার ওয়ার্কস দেখে।
জনগণের মতামতই তো গণতন্ত্র। বিশ্ব গণতন্ত্রের মহান ধারক ব্যারাক ওবামার প্রশ্রয়ধন্য ইসরায়েলি গণতন্ত্রের এভাবেই সেবা করে যাচ্ছে সে দেশের রাজনীতিবিদ আর সেনাবাহিনী। এই মহান গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে যদি কিছু শিশু, তরুণী আর ফিলিস্তিনী পুরুষ মারা যায়, যাক না। বৃহত্তর স্বার্থে তুচ্ছ কিছু মানুষের মৃত্যুতে কী যায় আসে পৃথিবীর?
ইউক্রেনের রুশ বিদ্রোহীদের অবসর কাটে পাখি শিকার করে। সম্প্রতি ইউক্রেনের ঘিরিঙ্গিতে তাদের আকাশে পাখিদের আনাগোনা ধারণাতীতভাবে কমে গেছে। তারা তাই ইদানীং পাখির মতো দেখতে ছোট ছোট উড়োজাহাজ গুলি করে পাখি শিকারের আনন্দের ঘাটতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিচ্ছে। পুতিনের ধর্মপুত্র এসব বিপ্লবীদের মনোরঞ্জন তো বিশ্ব মানবতার স্বার্থেই জরুরি। হোক না তার পরিণতিতে ২৯৮জন সাধারণ যাত্রীসহ মালয়েশিয়ান বেসামরিক বিমান ভূপতিত!
ক’দিন ধরেই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের অমানবিক, নিষ্ঠুর আক্রমণের কারণে মনটা ভালো নাই। তার উপর আজ সকাল থেকে আমার সারা শরীর কাঁপছে। ঘুম ভেঙে বিছানায় মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটে ইউক্রেনের আকাশে আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী বিমানটির ধ্বংসের খবরটা পড়ার পর থেকেই সারাদিন অস্বাভাবিক এক অস্থিরতার মধ্যে আছি। গত বছরের জুলাই মাসে আর এ বছরের এপ্রিল মাসে আমি এই উড়োজাহাজটিতে করে আমস্টারডাম থেকে সিডনি যাবার পথে কুয়ালালামপুরে গিয়েছি। সেই উড়োজাহাজটি আজ কতিপয় যুদ্ধবাজের নিষ্ঠুর খামখেয়ালিপনার শিকার হয়ে ২৯৮ জন নিরীহ-সাধারন মানুষসহ ইউক্রেনের আকাশে বিধ্বস্ত!
আকাশে উড্ডয়নরত বিমানের কামরা জুড়ে কত মানুষের কত স্বপ্ন খেলা করে। হয়তো কোনো প্রেমিকার কাছে ছুটে যাচ্ছিল প্রেমিক। হযতো কোনো তৃষ্ণার্ত ঠোঁট প্রতীক্ষায় ছিল প্রিয় মানুষের স্পর্শের জন্য। হয়তো সন্তান আসবে বলে দিন গুনছিল বাবা-মা। হয়তো ছুটি কাটিয়ে প্রিয় মাটিতে ফিরছিল ভ্রমণপ্রিয় মানুষের দল। সবকিছু নিমিষে ধ্বংস হয়ে গেল ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে। এখন শুরু হবে ব্লেম গেম। পুতিন বলবে এটা ইউক্রেনের কাজ। ওবামা চাইবে এই সুযোগে চিরশত্রু রাশিয়াকে একহাত নেবার। আর স্ব স্ব রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিভক্ত হয় পড়বে। আর আমরা আমজনতারা দেখব, ইউক্রেনের রুশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পড়ে আছে ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানটির ধ্বংসাবশেষ। অথচ এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, রীতিমতো বিশাল এক অপরাধ। এই অপরাধের বিচার হবে তো?
হে মহান ব্যারাক ওবামা! হে মহান ভ্লাদিমির পুতিন! আপনাদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মাশুল দিতে গিয়ে আমরা কি একটু স্বস্তিতে মরতেও পারব না?
ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, কবি ও চিকিৎসক। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াস্থ নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত। ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৪