ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

গানের নীড়ে গোপাল উড়ে

ফরিদ আহমেদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৪
গানের নীড়ে গোপাল উড়ে

এখন থেকে একশো আশি বছর আগের ঘটনা।

কলকাতার বউবাজারে রাধামোহন সরকার নামের একজন গণ্যমান্য লোক বাস করতেন সেসময়।

তিনি বিদ্যাসুন্দরের একটি যাত্রার দল গড়েন। এই ‘বিদ্যাসুন্দরের’ যাত্রাই কলকাতা বা বাংলাদেশের প্রথম শখের যাত্রা দল। রাধামোহন তখন ত্রিশ বছরের যুবক। যাত্রার মহড়া হতো রাতে। কিন্তু, সারাদিন ধরে তার বৈঠক হতো। বউবাজারের মতিলাল গোষ্ঠী, বাঁড়ুয্যে গোষ্ঠী, ধর গোষ্ঠী, সবাই এই যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। তখন যাত্রাপালায় মেয়েরা অভিনয় করতো না। যাত্রায় সখী সাজতেন রাজকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায়। এই ভদ্রলোক টেলিমেকসের অনুবাদ করেছিলেন।

একদিন দুপুরবেলা এরকমই এক বৈঠক চলছে। এমন সময় একজন ফেরিওয়ালা ‘চাই চাঁপাকলা’ বলে চিৎকার দিলো। ফেরিওয়ালার দুর্দান্ত মিষ্টি কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলেন বাবুরা। বিশ্বনাথ মতিলাল চাকরদের হুকুম দিলেন এই বলে যে, ‘ওরে কে আছিস, চাঁপাকলাওয়ালাকে ধরে আন। ’ চাকর-বাকরেরা বাইরে গিয়ে চাঁপাকলাওয়ালাকে ধরে নিয়ে এলো।

ফেরিওয়ালাকে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হলো। বাড়ি কোথায়? কি জাত, কোন বর্ণ, বাবার নাম কি, বয়স কতো, গান গাইতে জানে কি-না, ব্যবসায় কতো উপার্জন হয়, হেন কোনো প্রশ্ন নেই যা করা হলো না তাকে। বিব্রত তরুণ অবনত মস্তকে, মাটির দিকে চেয়ে বাবুদের সব প্রশ্নের উত্তর দিলো। তখন পর্যন্ত এই তরুণ জানে না যে, ঠিক এই মুহূর্তে ঘটে যাচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এখান থেকেই বিশাল এক বাঁক নেবে তার জীবন, সম্পূর্ণ আলাদা দিকে। তার স্বপ্ন-কল্পনার বাইরে সেই বাঁক। এটাই হবে তার ফেরিওয়ালা জীবনের শেষ দিন। এই পেশায় আর কোনো দিন তাকে নামতে হবে না।

প্রশ্নবাণ শেষে বিস্মিত, বিব্রত ও হতভম্ব তরুণকে রাধামোহন তাঁর যাত্রায় চাকরি দিলেন। দশ টাকা বেতন ধার্য হলো চাকরির।

উড়িষ্যাবাসী এই তরুণের নাম গোপাল। বাংলা গানের জগতে একদিন গোপাল উড়ে নামে বিখ্যাত হয়ে যাবেন, সেইদিন কেউ-ই তা জানতো না। এমনকি গোপালও জানতেন না। এর আগে গান গান নি তিনি কখনো, শেখেন নি কারো কাছেই এ বিদ্যা।

গোপালের জন্ম উড়িষ্যার কটক জেলার জাজপুর গ্রামে। অত্যন্ত গরিব ঘরের সন্তান ছিলেন তিনি। তার বাবা বেগুন আর আদার চাষ করে সংসার চালাতেন।

গোপালরা ছিলেন তিন ভাই। তিনি মধ্যম। গোপাল যখন কলকাতায় আসেন তখন আঠারো বা উনিশ বছর বয়সের সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণ তিনি। সেই আমলে লোকে অনেক অল্প বয়সে বিয়ে করতো, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। গোপালও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। কলকাতায় আসার আগেই বিবাহিত ছিলেন তিনি। গোপাল তখন গান গাইতে জানতেন না, কিন্তু তার গলার স্বর ছিল অসম্ভব মিষ্টি।

গোপালের নতুন চাকরিটা বেশ মজার। কাজ কিছু নেই। বাবুদের ওস্তাদ হরিকিষণ মিশ্রের কাছে গান শেখাই তার কাজ। প্রকৃতিপ্রদত্ত মেধার গুণে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে গানের দখল নিলেন গোপাল। ঠুংরি গান আয়ত্তে এসে গেলো তার। এক বছরের মধ্যেই দলের সব ছেলে ছোকরাদের চেয়ে বেশি গুণী হয়ে উঠলেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই এক বছরের মধ্যে গোপাল বাংলাটাকেও বশে নিয়ে এলেন। বলে না দিলে এখন আর কারো সাধ্য নেই যে, তিনি বাঙালি নন, এটা অনুমান করা। বাঙালিত্বে গোপালের এই রূপান্তর ভাষাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বেশভূষা, চালচলন, সবকিছুতেই বাঙালিদের অনুকরণ করে পুরোদস্তর বাঙালি হয়ে ওঠেন তিনি।

বছর দুয়েক মহড়া-টহড়ার পরে রাধামোহনের যাত্রা প্রদর্শনীতে এলো। ১৮৪২ সালে রাজা নবকৃষ্ণের বাড়িতে প্রথম আসর বসলো। এই আসরে গোপাল সাজলেন মালিনী। এই মালিনী সাজাটা এতোই অসাধারণ হয়েছিলো যে, দর্শকেরা ধরে নিয়েছিলো যে, সত্যি সত্যিই কোনো মেয়ে এই চরিত্রটা করছে। গোপাল সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। গায়ের রং বেশ ফর্সা, আকৃতিতে কিছুটা খাটো ও রোগা-পাতলা ছিলেন। গালে দাঁড়িগোঁফ কম ছিলো বলে বালকের মতো নিষ্পাপ চেহারা ছিলো তার। যাত্রাপালায় নারী চরিত্র করার আদর্শ চেহারা গঠন এটা। এর পূর্ণ সুযোগ নিয়ে গোপাল কাঁপিয়ে দিলেন আসর। মালিনীর গানে দর্শক মুগ্ধ, মালিনীর ভাবভঙ্গিতে দর্শক হৃদয় দগ্ধ।

গোপালের এই সাফল্যে, যাত্রার এই সাফল্যে রাধামোহনের আনন্দ দেখে কে। এক লাফে গোপালের বেতন দশ টাকা থেকে পঞ্চাশ টাকা হয়ে গেলো।

রাধামোহনের যাত্রার আসর আরো দু’বার বসেছিলো। একবার হাটখোলার দত্ত বাবুদের বাড়িতে। আর একবার সিমুলিয়ার ছাতু বাবুর বাড়িতে। চল্লিশ বছর বয়সে রাধামোহনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার দলেরও মৃত্যু হলো।

রাধামোহনের দলের সব জিনিসপত্র, সাজপোশাক গোপালের ভাগে এসে পড়লো। বিদ্যাসুন্দরের পালার পাণ্ডুলিপিও আছে তার কাছে। এ সবের ভরসাতেই গোপাল নিজেই এক দল গঠন করে বসলেন।

দলের মালিক এখন তিনি। সব ক্ষমতা তার নিজের হাতে। এই অধিকার বলে গোপাল রাধামোহনের বিদ্যাসুন্দরের পালা একেবারে পালটে ফেললেন। সহজ বাংলায় গান লিখে গোপাল নতুন পালার সৃষ্টি করলেন।

নিজের এই দলটা দশ বছর ধরে টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন গোপাল। তারপরেই তার মৃত্যু হয়। তখন তার বয়স মাত্র চল্লিশ বছর। যে দশ বছর তিনি দলটিকে চালিয়েছেন, সেই দশ বছরে গোপাল বাংলাদেশের সব বিশিষ্ট বারওয়ারীতে আসর পেয়েছেন। গানে তার এমনই উৎকর্ষ ছিলো যে, একবার যে তার গান শুনেছে, সে আর কখনোই তার গান ভুলতে পারবে না। যাত্রাপালা তার কাছে রাধামোহনের মতো শখের বিষয় ছিলো না। দরিদ্র মানুষ তিনি। এ থেকে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।

রাধামোহনের বিদ্যাসুন্দর পালাকে গোপাল তার নিজস্ব গান দিয়ে পালটে দিয়েছিলেন, এই মতকে অনেকেই মেনে নিতে পারেন নি। সুধীর চক্রবর্তী তার ‘বাংলা গানের সন্ধানে’ বইতে লিখেছেন,

“অনেকের মতে ‘গোপাল উড়ের টপ্পা’ নামে প্রসিদ্ধ গীতাভিনয়ের কোনো অংশই তাঁর রচনা নয়। সম্ভবত কৈলাস বারুই, শ্যামলাল মুখোপাধ্যায় ও ভৈরব হালদার সেই বিদ্যাসুন্দর পালার বাঁধনদার। গোপালের কৃতিত্ব হলো কলকাতার তখনকার হালকা জনরুচি বুঝে তাতে সুরারোপ, নৃত্যাংশ নির্মাণ এবং সমগ্র ব্যাপারটিকে সার্থকভাবে রূপায়িত করার কৌশল। ”

যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে আক্ষরিক অর্থেই একেবারে রাস্তা থেকে জাতে উঠে এসেছিলেন গোপাল উড়ে। সেই সুযোগকে দুই হাতে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ করেছিলেন বাংলা গানকে তার অপরিসীম প্রতিভা আর প্রাণান্ত পরিশ্রম দিয়ে। কিন্তু, এর বিপরীতটাও দেখি আমরা। পৃষ্ঠপোষকদের সঠিক পরিকল্পনা ও স্থির আদর্শের অভাবে প্রকৃত প্রতিভাও ধ্বংস হয়েছে বা বিপথগামী হয়েছে।

রূপচাঁদ পক্ষী ছিলেন গোপাল উড়েরই সমসাময়িক। গোপালের মতো তিনিও উড়িষ্যার লোক। তার বাবা উড়িষ্যা থেকে বাংলায় এসেছিলেন। রূপচাঁদ পাঠশালা ও ইংরেজি স্কুলে অল্পবিস্তর পড়াশোনাও করেছিলেন। সেকালের বেশ কয়েকজন ওস্তাদের কাছে গান-বাজনা শেখেন তিনি। গান রচনা ও সুর প্রয়োগে তার সহজাত প্রতিভা ছিলো। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক গানে তিনি দুর্দান্ত ছিলেন। এ বিষয়ে মাত্র একজনই ছিলেন যিনি তার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। তার নাম হচ্ছে প্যারীমোহন কবিরত্ন।

সেই সময়ে কোলকাতায় ধনীঘরের বখাটে ছেলেরা নানান জায়গায় গাঁজার আখড়া খুলেছিলো। বাগবাজারে এমনই এক আটচালায় রামনারায়ণ মিশ্র ‘পক্ষীর দল’ তৈরি করেন। মহারাজ গোপীমোহন ঠাকুর ছিলেন পক্ষী দলের একজন পৃষ্ঠপোষক।

ধনীর ছেলেপেলেদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক গানেই বেশি সময় দেন তিনি। আর এতে করে তার যে অসাধারণ প্রতিভা ছিলো তা থেকে বঞ্চিত হই আমরা। সঠিক পথে তার প্রতিভাটি ব্যবহৃত হয় নি। এ প্রসঙ্গে সুধীর চক্রবর্তী বলেন,

"বস্তুত সেকালের কলকাতায় নিছক রঙ্গব্যঙ্গ ও হাস্যপরিহাসমূলক একক গানে রূপচাঁদ ও প্যারী ছিলেন অতৃতীয় ব্যক্তিত্ব। তার মধ্যে রূপচাঁদের গানে ইংরাজি শব্দের ব্যবহার একেবারে অনবদ্য ও অভিনব। ‘লেট মি গো ওহে দ্বারী/আই ভিজিট টু বংশীধারী’ কিংবা ‘আমারে ফ্রড করে কালিয়া ড্যাম’ বর্গীয় গান বাংলা হাসির গানের অগ্রদূত। রূপচাঁদের গানেই আমরা সর্বপ্রথম পাই কোলকাতার বর্ণনা (‘ধন্য ধন্য কলিকাতা শহর স্বর্গের জ্যেষ্ঠ সহোদর’)। কিন্তু রূপচাঁদের রচিত ভক্তি ও দেহতত্ত্বের গান শুনলে বোঝা যায় কত বড় কবিত্বের সম্ভাবনা তাঁর রঙ্গব্যঙ্গের বেঠিক পথে ব্যয় হয়ে গেছে। "

গোপাল কতখানি জনপ্রিয় ছিলেন তার একটি ধারণা পাওয়া যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাস পড়লে। সেখানে গোপালের কথা উল্লেখ করা আছে। অন্তপুরবাসী নারীরাও তার গান সম্পর্কে অবগত ছিলো, তার গান ভালবাসতো।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতায় কুলবধূরা ছিলেন পর্দার অন্তরালে। এর মানে এই নয় যে, তখন সব নারীরাই পর্দা করতেন, থাকতেন অন্তঃপুরে। কুলবধূদের বাইরে বিশাল এক কর্মজীবী নারী শ্রেণী ছিলো। এদের কেউ ধোপানি, কেউ গয়লানি, কেউ ঢপওয়ালি, কেউ কীত্তুনে। জীবিকার টানে এরা নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। সমাজে অবাধ বিচরণ ছিলো তাদের। বাবু সমাজের অন্দরমহলে, শিক্ষিত ভদ্র সমাজের অন্তঃপুরেও এদের যাতায়াত ছিলো।

মালিনীরা অন্দরমহলে পৌঁছে দিতেন বটতলার বই। কেউ কেউ আবার গেয়ে শোনাতেন ঢপকীর্তন বা কথকতা। অবহেলিত কুলীন বধূ, কুলত্যাগিনী, বাল্যবিধবা, বয়স্কা বারঙ্গনারা সমাজের কোথাও ঠাঁই না পেয়ে স্থান নিতেন বৈষ্ণবতার। এরা মাঝারি মানের শিক্ষিত ছিলেন, মাঝারি মানের সঙ্গীতজ্ঞা ছিলেন। এরাই অন্দরমহলে গিয়ে কুলবধূদের শিক্ষা দিতেন বা গান গেয়ে শোনাতেন।

বিষবৃক্ষ উপন্যাসের প্রতিনায়ক দেবেন্দ্র নায়িকা কুন্দনন্দিনীকে দেখার আশায় হরিদাসী বৈষ্ণবীর ছদ্মবেশে অন্দরমহলে প্রবেশ করে। তাকে অন্দরমহলে দেখেই নারীরা নানাবিধ গানের ফরমাস আরম্ভ করলেন। সুধীর চক্রবর্তীর বই থেকে উদ্ধৃত করে বলি,
"কেহ চাহিলেন গোবিন্দ অধিকারি – কেহ গোপাল উড়ে। যিনি দাশরথীর পাঁচালী পড়িতেছিলেন তিনি তাহাই কামনা কাজ করিলেন। দুই-একজন প্রাচীনা কৃষ্ণবিষয় হুকুম করিলেন। তাহারই টীকা করিতে গিয়া মধ্যবয়সী ‘সখীসংবাদ’ এবং ‘বিরহ’ বলিয়া মতভেদ প্রচার করিলেন। কেহ চাহিলেন ‘গোষ্ঠ’- কোন লজ্জাহীনা যুবতী বলিল – ‘নিধুর টপ্পা গাহিতে হয়তো গাও, নহিলে শুনিব না। "

ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা গান হচ্ছে দেওয়া-নেওয়ার খেলা। এর ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে রয়েছে আদান-প্রদানের অগুণতি কিচ্ছা। জীবিকার টানে উড়িষ্যা থেকে বাংলায় এসে গোপাল আর রূপচাঁদ বাংলা গানে বৈচিত্র্য আনলেন। আর অন্যদিকে দুই বাঙালি নিধুবাবু আর কালী মির্জা গেলেন পশ্চিমে। সেখান থেকে আনলেন গানের রূপনীতির অভিনবত্ব। নিধুবাবু পাঞ্জাবি দ্রুতচালের টপ্পাকে ভেঙে তৈরি করলেন নিজস্ব টপ্পা। আর কালী মির্জা দিল্লি ঘরানার খেয়াল ও টপখেয়ালকে আত্মস্থ করে বাংলা গানের সৃষ্টিশীলতাকে আরো সম্প্রসারিত করলেন।

গোপাল উড়ের লেখা দুটো গান।

(১)
হায়, রসিক সুজন, নারীর মনোরঞ্জন।
প্রিয়া সনে সঙ্গোপনে করেন সুখ-আলাপন। ।
ছলে বলে কৌশলে, মালিনীরে ফাঁকি দিলে,
উভয়ের প্রেম অন্তঃশীলে, বহে ফল্গুনদী যেমন।
কি সুন্দর শুনিতে বিদ্যাসুন্দর উপাখ্যান,
মাটীর ভিতর আনাগোনা, আর কার সাধ্য বলনা,
বিনা দৈব্যেরই ঘটনা, না হয় ঘটন।
যেমন রতিপতি, তার চেয়ে বিদ্যাপতি,
মাটীর ভিতর একি রীতি, উভয়ে গমনাগমন
বতসর পনর ষোল হইল বয়ঃক্রম। ।
ভবে মরে রাজা রাণী হইবে কেমন।

(২)
হায় হায়, বিষম বিষম চিন্তা, ভেবে প্রাণ যায়,
মরি হায় হায়।
বিপত্তে সম্পত্ত হয়, এতে যদি মান রয়,
সেই মোক্ষ এ সময়, যদি তারে পায়;-
হায়, কেন মাটি খেয়ে প|ড়ালাম বিদ্যায়। ।
দিবানিশি ঐ কথা, কারে কব মর্ম্ম ব্যথা,
যেই দুঃখ সর্ব্বদা হতেছে আমায়।
কবে এ কুদিন যাবে, সুপ্রভাত রজনী হবে,
বিদ্যা বিদ্যায় হারাবে, পাবে কে কোথায়। ।
গুণসিন্ধু-রাজসুত, রূপে গুণে অদ্ভুত,
সর্ব্বগুণে গুণযুত, সকল বার্ত্তায়।
হায়, বর আনিতে গঙ্গাভাট গেছে কাঞ্চীপুর,
সে আসিলে তবে মম দুঃখ দূরে যায়। ।
হায়, দিবসে না হয় তৃপ্তি করিলে ভোজন।
হায় হায়, নিশিতে না  হয় নিদ্রা করিলে শয়ন।
হায় হায়, লাজ বাজে,
লোকমাঝে কহা নাহি যায়। ।

লেখক: বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব শিক্ষক, মুক্তমনার প্রাক্তন মডারেটর। বর্তমানে টরন্টোতে বসবাসরত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।