ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

খানদানি বড়লোক ।। আহসান হাবীব

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪
খানদানি বড়লোক ।। আহসান হাবীব

আমাদের এক বন্ধু যে নিজেকে দাবি করে সে এবং তার পরিবার হচ্ছে একমাত্র খানদানী পরিবার। তার হিসেবে সবাই খানদান না কেউ কেউ খানদানি (সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবির মতো আরকি!)।

যেমন সে এবং তার পরিবার খানদানি। খানদানি বড়লোকের হিসাবটা হচ্ছে... তারাই খানদান বড়লোক যাদের নিজস্ব পারিবারিক কবরস্থান আছে।
খবরে বা স্ক্রলে যখন বলা হয় বা দেখা যায়... ‘অবশেষে তার মরদেহ তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হল...। ’ তাহলে বুঝতে হবে সেই লোক আসলে একটি খানদানি বড়লোক পরিবারের সদস্য ছিলেন। এটাই হচ্ছে আমাদের খানদানি বড়লোক বন্ধুর ভাষ্য। আমরা অবশ্য তাকে ঘাটাই না সে যা বলে মেনে নিই। থাক বাপ তুই খানদানিই থাক। আর আমরা না হয় পানদানিই থাকি। সমস্যা কি?

কিন্তু গোলাম আযমের মৃত্যুর পর যখন ঘোষণা এলো তার মরদেহ তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হলো। তখন সবাই আমাদের সেই বন্ধুকে বললো, ‘বাংলাদেশে তাহলে তোদের পরিবার আর গোলাম আযমের পরিবার হচ্ছে খানদানি, দুজনেরই পারিবারিক কবরস্থান আছে, কি বলিস?’
বন্ধু মুখ গোজ করে থাকে। কিছু বলে না। (বিএনপির মতো)।  
বন্ধু মুখ গোজ করে থাকুক এই ফাঁকে একটা...

এক থানায় হঠাৎ ফোন এলো
-    হ্যালো ওসি সাহেব বলছেন?
-    হ্যাঁ কে?
-    স্যার ভয়ানক একটা খবর দিতে ফোন করেছি।
-    কি খবর?
-    এক জায়গায় শত শত লাশ মাটির নিচে। আপনি এখনি চলে আসুন।
-    কোথায় ঠিকানাটা বলুন।

ফোন দেয়া পাবলিক ঠিকানা বললো। ওসি সাহেব সঙ্গে সঙ্গে ফোর্স নিয়ে ছুটলেন। ঠিকানা মিলিয়ে হাজির হয়ে দেখেন সেটা একটু পুরোনো কবরস্থান। আর ফোনদাতা গায়েব মানে যাকে বলে দ্য ফিউজিটিভ।   

আবার খানদানি বড়লোকে ফিরে আসি।
বরং খানদানি বড়লোকরা তাদের জায়গায় থাকুন আমরা হালের বড়লোক নিয়ে একটু টক শো করি (মতান্তরে বক বক শো বা ফিস ফিস শোও হতে পারে...)। এক মহা বড় লোক বাড়ি বানাবেন। দেশের সেরা বিল্ডার্সের সঙ্গে কথা বললেন। টাকা তার সমস্যা না তিনি ‘সেইরকম’ একটা বাড়ি বানাতে চান। বিল্ডারকে বললেন তার বাড়ির প্রথম শর্ত হচ্ছে তার বাড়ির আন্ডারগ্রা‌উন্ডে একটা মুভি হল থাকতে হবে।
-    মানে? কি বলেন স্যার? আন্ডার গ্রাউন্ডে তো হবে গ্যারেজ।
-    না আমি একটা মিনি মুভি হল বানাতে চাই।
-    দেশেতো হলের অভাব নেই আলাদা করে নিজের বাসায় সিনেমা হলের মানে কি?  বিল্ডার একটু বিরক্ত!
-    কেন আমি আমার ঘনিষ্ট আত্মীয়স্বজন আর অতিথিদের নিয়ে বাছাই করা সব ছবি দেখবো নিজের মুভি হলে। আজকাল হলে যেসব বাংলা ছবি দেখায় পরিবার নিয়ে এসব দেখা যায়?  ছ্যা... ছ্যা...

-           দেখুন অসম্ভবকে সম্ভব করাই আমাদের কাজ। আপনি যেমনটা চাইবেন তেমনটাই হবে। আগে আর্কিটেক্টকে দিয়ে ডিজাইনটা করাই। আপনি বলুন আন্ডারগ্রাউন্ডে সিনেমা হল ছাড়া আপনার আর কী কী চাই বাড়িতে?
-    ছাদে একটা সুইমিংপুল হবে।
-    আর? 
-    আর একটা বাগান... ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের মতো হবে বাগানটা। কী পারবেন না? টাকা নিয়ে ভাববেন না... টাকা কোনো বিষয় না।
-    পারব স্যার।
-    গুড...

অবশেষে সেই হালের বড়লোকের বাড়ি তৈরি হলো। সেইরকম বাড়ি। আন্ডারগ্রাউন্ডে সিনেমা হল ছাদে সুইমিং হল তার উপরে চারদিকে বিম দিয়ে বাগান মানে ব্যাবিলনের শূন্যউদ্যান... সবই হলো। কিন্তু হঠাৎ বাড়ির মালিক বললো-
-    কিন্তু আমার গাড়ি কোথায় রাখবো?  মানে গ্যারেজ??
-    কেন আপনার বেড রুমে?
-    বেডরুমে??
-    কেন স্যার গ্যারেজের জায়গায় সিনেমা হল হলে বেডরুমে গ্যারেজ হতে অসুবিধা কোথায়? 

সব শেষে ম্যাকুয়াস বাইনাক্কির সেই মহান বাণী-
‘ বড়লোক হওয়া দোষের না... তবে তুমি যে ছোটলোক (!) ছিলে সেটা ভুলে যাওয়া দোষের ’।

লেখক: রম্য লেখক ও কার্টুন শিল্পী

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad