ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রীকে বরখাস্ত করুন

মনোয়ার রুবেল, কনট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রীকে বরখাস্ত করুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান

সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এক তরুণী সপ্তাহ খানেক আগে ইনবক্স করেছেন। তার ছোট ভাইয়ের পিএসসি পরীক্ষা।

তিনিই তাকে পড়ান। ছোটভাইয়ের পরীক্ষায় তিনি খুবই লজ্জিত। কারণ প্রাইমারির প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে প্রতিদিন। তার পরিবারের সবচেয়ে ছোট মানুষটার জীবনের প্রথম পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে এটা জেনে তিনি খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। বললেন- ভাইয়া কিছু করেন।

কিছু কি করার সত্যিই আমাদের আছে? সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল অনেকদিন ধরে লিখছেন, বলছেন। তাতে কি কাজ হয়েছে? বরং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অপপ্রচারকারীদের ধরে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন। তার কাছে মনে হয়েছে ব্যক্তি জাফর ইকবাল কিংবা গোষ্ঠী জাফর ইকবালরা তার শত্রু। তাদের লক্ষ তাকে ক্ষমতাচ্যূত করা। তাই তারা পত্রিকায় লিখে, বলে তাকে গদিচ্যূত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন! তিনি এ কথা বলেছেনও!

প্রাইমারির ছোট ছোট মানুষগুলোকে আমরা চুরি শিখিয়ে দিচ্ছি- এর দায় কার? এই মানুষগুলো যখন বড় হবে, যখন শিখবে জানবে তখন কেমন হবে তাদের নীতিবোধ। তারা জন্ম থেকে পাপ কে পূণ্য জেনে বড় হচ্ছে।

আমরা এক বিকারগ্রস্ত সমাজ নিয়ে বড় হচ্ছি কি? বিকারগ্রস্তরা শিশুদের প্রশ্নফাঁস করছে। বিকারগ্রস্ত আমরা। বিকারগ্রস্ত আমাদের মন্ত্রীও। এসএসসি, এইচএসসি প্রশ্ন ফাঁসের পর মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পুরো ব্যাপারটি অস্বীকার করেছিলেন। এর আগে তিনি সংসদে সত্য এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন-  "গত পাঁচ বছরে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি"।

কোন সন্দেহ নেই নাহিদ সাহেব ব্যর্থ মন্ত্রী। তিনি শুধু জারিজুরি করে মন্ত্রী হয়ে আছেন। জনাব নাহিদ এতটাই ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন যে লাজ শরমের মাথা খেয়ে বলেছেন- "আমাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ''
ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের প্রশ্নফাঁস অভিযোগের পরই তিনি এই দাবি করেছিলেন।

এই ব্যক্তি আমাদের মন্ত্রী।   মন্ত্রী বলেই তাকে আমরা সম্মান দিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ বলব।

আমার ধারণা, নাহিদ সাহেব 'অপপ্রচার'কারীদের উপর ঝাল মিটাচ্ছেন। প্রশ্নফাঁস হলে 'অপপ্রচারকারীরা' প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে থাকেন। তারা শিশুদের, ছাত্রদের খুব ভালোবাসেন। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা চিন্তা করেন। নাহিদ সাহেব সেই কষ্টই দিচ্ছেন 'অপপ্রচারকারী'দের। মন্ত্রী হয়ে পুরো জাতিকে শাস্তি দিচ্ছেন।

বাচ্চাদের প্রশ্নফাঁস নিয়ে সবাই খুব কষ্টে আছেন। যার সঙ্গেই কথা বলেছি সবাই কাঁদো কাঁদো মুখ হয়ে আছেন। ছোট শিশুগুলো বুঝতে পারছে তাদের নিয়ে কিছু একটা ঘটছে সারাদেশে। কিন্তু তারা পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারছেনা। এই ব্যাপারটা নিয়ে তারা কষ্টে আছে।

গণশিক্ষা মন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁসের দায় এড়াবেন না বলে পত্রিকায় একটি  বিবৃতি দেয়ার পরদিনই তার মন্ত্রণালয় পুরো দায় অস্বীকার করেছে। কিন্তু কেন? অস্বীকার করলেই কি সব দায় এড়ানো হয়? অস্বীকার করতে হবে কেন?

প্রাইমারির প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে। একটি পেজের নাম- আমরা প্রশ্ন ফাঁস করি। টুইটারে, কোচিং সেন্টারে, ফটোকপির দোকানে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রীরা পায় না। কেন পায় না?

কেউ যখন সমস্যা দেখেও বলে সমস্যা নেই, তখন বুঝি সেই লোক অপরাধে জড়িত। প্রশ্নফাঁসের ঘটনা অস্বীকার করায় যে কেউ বলতে পারি মন্ত্রী মহোদয় এই ঘটনায় জড়িত। যে কেউ এমন ধারণা করতে পারে। তা না হলে সমস্যা লুকাবেন কেন? তাদের লাভ কি? নিশ্চয় তার ব্যক্তিগত লাভ রয়েছে?

দেশের হাজার হাজার কোচিং সেন্টার চালায় জামায়াত-শিবির। কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি টাকা আয় করে। সেখান থেকে মন্ত্রণালয়ে টু পাইস ঢুকে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

ভেবেছিলাম ছোট মানুষের নিয়ে মানবিক কোন আকুতি দিয়ে লেখাটা শেষ করব। লিখতে লিখতে একদলা ক্রোধ জমছে বুকে। ক্লেদ জমেছে। এত অনাচার, আর অন্ধ কানা ল্যাংড়া দেখলে ক্রোধ না জমে উপায় নাই।

এই ব্যর্থ মন্ত্রীদের উপর ক্রোধ না জমাটাই অসুস্থতার লক্ষ্মণ।

মাননীয় প্রধান সমীপে প্রার্থনা, এসব ব্যর্থ ও প্যারালাইজড মন্ত্রীদের বহিষ্কার করুন। এদের ছেঁটে ফেলুন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচান। শিশুদের বাঁচান।

মনোয়ার রুবেল: অনলাইন এক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।