ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

বিশাল পুঁজির দেশ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ

রাগীব কিবরিয়া, অনুবাদ/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৪
বিশাল পুঁজির দেশ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ

সম্প্রতি কানাডার বিশ্বখ্যাত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের গ্লোবাল সার্ভিস লোকেশন ইনডেক্সে আউটসোর্সিংসহ খুবই আকর্ষণীয় ও লাভজনক বিনিয়োগের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকাটিতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও দ্রুত ব্যবসা ত্বরান্বিতকরণের উপযোগী বেশ কয়েকটি দেশের তালিকা দেয়া হয়।

তাতে প্রথমবারের মতো ২৬তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। ৫১টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপের মধ্যে অর্থনৈতিক বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।   

গত মাসে ‘দি পিউ’ রিসার্চ সেন্টার নামের অপর একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। অর্থনীতি ও বিনিয়োগ ইস্যুতে জনমত নিয়ে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়। গত জুন পর্যন্ত ৪৪টি দেশের মধ্যে এই জনমত জরিপ চালানো হয়। এ জরিপের ভিত্তিতে দুটি রিপোর্ট তৈরি হয়। এখন পর্যন্ত একটি প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত রিপোর্টটিতে অবিশ্বাস্যভাবে এসব দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশকে বড় ধরনের সম্ভাবনায় দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্বে মুক্ত বাজার অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সহায়ক দেশ হিসেবে (বাণিজ্য, বিনিয়োগের জন্য ৮৫ শতাংশ সহায়ক) তালিকাভুক্ত করা হয়।  

শীর্ষে আছে ভিয়েতনাম। দেশটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দিক থেকে কমপক্ষে ৯৫ শতাংশ সহায়ক। এরপরেই হলো বাংলাদেশের অবস্থান। এরপরে আরো তিনটি দেশ রয়েছে— দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ঘানা।   

মূলত এসব রিপোর্ট বর্তমান বাংলাদেশকে বিচার করার ও দেখার বিভিন্ন ফ্রন্ট খুলে দিয়েছে। রিপোর্টগুলো করার আগে মতামত জরিপে যেসব প্রশ্ন করা হয়, সেগুলো ছিল বাণিজ্যের ঘাটতি, লাভ-লোকসান এবং মুক্ত অর্থনীতির ভবিষ্যত নিয়ে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য পরিস্থিতি কতটা আশা-হতাশার, কতটা অপর্যাপ্ততা ও ভারসাম্যহীনতার, একইসঙ্গে মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য পুরো প্রেক্ষাপট কতোটা সহায়ক এসব বিষয়ে। এসব প্রশ্নের উত্তরে যে মতামত উঠে এসেছে তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশই হবে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশ্বের পরবর্তী সবচেয়ে বড় লাভজনক অঞ্চল।  

জরিপগুলোর চিত্রে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ স্তরে রয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ মুক্ত বাণিজ্যের ভালো সমর্থক। কারণ তারা মনে করে, মুক্ত বাণিজ্য ব্যাপকভাবে তাদের কর্মসংস্থান ও ভালো পারিশ্রমিক পাওয়ার মতো কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পক্ষে। এমনকী মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ ও ক্ষেত্র সৃষ্টি সম্পর্কে বাংলাদেশে যে জনমতামত উঠে এসেছে সেটাও ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি।        

মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য ভারত যেখানে ৭২ শতাংশ সহায়ক সেখানে বাংলাদেশ তার চেয়ে ৮ গুন বেশি অনুকূলে এবং পাকিস্তান যেখানে ৬২ শতাংশ অনুকূলে সেখানে বাংলাদেশ তার চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি মুক্তবাণিজ্য বান্ধব। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে যে সংকট ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে তারপরও বাণিজ্যিক উন্নয়নের ব্যাপারে এ দেশের মানুষের অবস্থান ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক। এরকম অবস্থার মধ্যেই ‘কোনোমতে ভালো’-এ প্রশ্নে বাংলাদেশের ৯১ শতাংশ মানুষ বলেছে তারা ‘খুবই ভালো’। যেখানে তুলনামূলকভাবে ৭৬ শতাংশ ভারতীয় মনে করে, তারা খুব ভালো। তার মানে ভারতের চেয়ে বাণিজ্যিক উন্নয়নের প্রশ্নে ভারতের চাইতে বাংলাদেশীদের আশাবাদ অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।        

সাক্ষ্য প্রমাণ থাকায় এসব তথ্যকে সত্য বলতে হবে। গত দু-দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এমন জায়গাতেই চলে আসছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমানে চীনের পরেই বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় তৈরি পোশাক রপ্তানির দেশ হিসেবে নিজের অবস্থানকে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, গত কয়েক বছরে ৫ হাজার পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও এই খাত থেকে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে পোশাক খাতের সম্প্রসারণের ফলে দেশে অভাবনীয় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। শুধু এই খাত থেকেই কমপক্ষে ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।     

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং পোশাক কারখানার পরিবেশসহ ইত্যাদি কারণে এসব কারখান বন্ধ হওয়ায় ২০১৪ সালে অন্তত ২৪ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার আয় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট ইতিবাচক ও সম্ভাবনাময়। গ্লোবালাইজেশনের ফলে এ সম্ভাবনা আরো ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সুতরাং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিভিন্ন হিসাব নিকাশে দেখা যায়, আগামী দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বড় ধরনের পুঁজি গড়ে তোলার ও সঞ্চালনের বিশাল ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।   

সূত্র: এসডি এশিয়া

অনুবাদক: শাহাদাৎ তৈয়ব

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।