বিএনপি বরাবরই ভারত বিরোধী রাজনীতি করে এলেও বিজেপি প্রধান অমিত শাহ এর ব্যাপারে ভারত প্রীতি দেখে অবাকই হতে হয়। এর চেয়ে অবাক হতে হয় বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল, যারা কিনা একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, তারা কি করে স্রেফ একটা বানোয়াট মিথ্যা খবর দলটির কার্যালয় থেকে প্রেস রিলিজ আকারে প্রকাশ করে?
তাদের দাবি ছিলো, খালেদা জিয়াকে ফোন করে অমিত শাহ তার খোঁজ খবর নিয়েছেন।
কি অদ্ভুত এই আমরা, আর আমাদের মনসিকতা! দুই দিন আগে বড় করে একটা খবর ছাপা হলো ভারতের বিজেপির কোন নেতা নাকি খালেদা জিয়াকে ফোন করে তার শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। এতে বিএনপির লোকজনদের সেকি উল্লাস! এখন আবার দেখা যাচ্ছে, পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে বিজেপির ওই নেতা নাকি খালেদা জিয়াকে ফোনই করেনি, উল্টো খালেদা জিয়া অনেক বার চেষ্টা করে তাকে ফোনে পাননি!
এখন দেখছি আওয়ামী লীগের লোকজনদের উল্লাস! এই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোকজনদের উল্লাসের মাঝে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক কোথায়!
ভারতের কোথাকার কোন পার্টি নেতা কার শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিলো এ নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সব পত্রিকা সংবাদ শিরোনাম করে, টেলিভিশন গুলো ব্রেকিং নিউজ করে। দুই দল মিলে কখনো মন খারাপ করে, আবার কখনো উল্লাসও প্রকাশ করে। অথচ আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশে গেলে সে সব দেশের মানুষজন জানতেও পারে না তারা সেখানে গেছেন কিনা। এমনকি অন্য দেশে তাদের রিসিভ করার জন্য সে দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী নন, কোনো মন্ত্রী বা সরকারি কর্মকর্তা হাজির হন। সংবাদপত্রের শিরোনাম হওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার।
আর আমরা কিনা ভারতের কোন নেতা কাকে ফোন করে কার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিচ্ছেন সেটা নিয়ে ব্রেকিং নিউজ করি, দলগুলো কেউ উল্লাস করে, কেউ মন খারাপ করে।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, দেশে বর্তমানে অবরোধ চলছে। বিএনপির অবরোধ কবে শেষ হবে কারো জানা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখে মনেও হচ্ছে না এ নিয়ে তারা চিন্তত। না সরকার এ নিয়ে আলাপ আলোচনায় বসছে, না বিএনপি অবরোধ, হরতাল থেকে সরে আসছে। এদিকে কৃষকের উৎপাদিত শীতকালীন সবজি শহর অঞ্চলে পৌঁছুতে পারছে না। ঢাকা শহরে যে সবজির কেজি ৫০ টাকা, দেখা যাবে গ্রামে সেটি ২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; অনেকে আবার পচে যাবার জন্য ফেলেও দিচ্ছে। কিন্তু অবরোধের কারণে সেগুলো বিক্রি করতে পারছে না। কৃষকের অবস্থান তাহলে কোথায়! এ সব কৃষকের কথা কি কেউ ভাবছে! সবাই এখন ব্যস্ত ভারতের কোন নেতা ফোন করেছেন তা নিয়ে। এ থেকেই বুঝা যায়, মেরুদণ্ডহীন আমাদের রাজনীতি। আসলে আমরা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছি! নাকি এখনো দাঁড়াতেই পারিনি!
আমিনুল ইসলাম, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫