হোটেলে নানা রকম কাবাব পাওয়া যায়। মুরগি গরু ও খাসির কাবাব।
দেশ উন্নত হয়েছে। আগে এসিডদগ্ধ হয়ে পুড়তো নারী। এখন রাজনীতিদগ্ধ হয়ে পুড়ছে মানুষ। কয়লা হচ্ছে দেশ। দেশের ষোলোকোটি জনতা। কারো বিকার নেই। কেউ উদ্বিগ্ন হচ্ছে না। কেবল যাদের উদ্বিগ্ন হওয়াতে কিছু এসে যায় না, তারা হতবাক হচ্ছেন। তারা বিহ্বল হচ্ছেন। আর যাদের চিন্তায় ঘুচতে পারে এই সংকট। বন্ধ হতে পারে কাবাব বানানোর খেলা। তারা চিন্তিত নন। তারা নির্বিঘ্নে শীতঘুমে দিন পার করছেন। উষ্ণতার জালে নিজেকে জড়িয়ে রাখছেন। মাঝখান থেকে নষ্ট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাবনা। লাখো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আশ্চর্য! যে মানুষগুলো তাদের ক্ষমতার সিঁড়িতে পা রাখতে সাহায্য করে। যে মানুষগুলো নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে নেতা বানাচ্ছে তাদের। তারাই পুড়িয়ে মারছে এই মানুষগুলোকে। তারাই কাবাব বানাচ্ছে সাধারণ জনতাকে। আর বসে বসে তারা কাবাবের আগুনে উষ্ণ হচ্ছেন। কতোজন মানুষ কাবাব হলে বন্ধ হবে এই খেলা?
দুই দলের খেলায় কে জিতবে। কখন জিতবে। সেই আশায় বসে আছি আমরা। আর নেতারা কষছেন ভবিষ্যত হিসাব। দুই দলই দাঁড়িয়ে আছে খাদের কিনারায়। যেখান থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দুই দলেরই। আর যে দল পড়ে যাবে সাধারণ জনতার মতো তারাও কাবাব হবে। তাই মগজে এখন একটাই পোকা—‘খেলা থামানো যাবে না। ’
‘চলছে চলবে। প্রতিহত করা হবে। ’ এই দুটি বাক্য ছাড়া যেন রাজনীতিতে এখন আর কোনো বাক্য নেই। সব উদ্দেশ্য বিধেয় জমাট হয়েছে ওই একটি বাক্যে। এই বাক্য দুটি মানুষের ভাগ্যে কী রেখেছে দেখছে না তারা। অফিসে বেতন নেই, ফ্যাক্টরিতে কাজ নেই, পরিবহনে যাত্রী নেই, দোকানে বিক্রি নেই, বাজারে তরকারি নেই, দিনশেষে পেটে ভাত নেই। চারদিকে এই নেই-এর মধ্যে মানুষকে আবদ্ধ রেখেছে ক্ষমতালোভীরা। আর বসে বসে গণতন্ত্রের উদাহরণ বানাচ্ছেন মানুষের কাবাব।
বুদ্ধিজীবীরা ব্যস্ত বিশ্লেষণে। টকশোতে তারা গলা খেকিয়ে অপরাধী নির্ণয় করছেন। দোষী কে? আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি, নাকি জামায়াত। অথচ তার আগে দেশ পোড়ানো বন্ধ করা উচিত। মানুষকে কাবাব বানানো বন্ধ করা উচিত। সেই দিকে কারো দৃষ্টি নেই।
বিএনপি মানুষ পুড়ছে। তারা অপরাধী। তারা দেশের শত্রু। আওয়ামী লীগের মাথা মগজে এটাই খেলছে সবসময়। এতো মোটা গলায় কেন বলতে হয়, ২০১৯ সালের আগে সংলাপ নয়। এসব খিস্তি খেউড় এখন আর মানুষ পছন্দ করে না। কেন একটা সমাবেশ করতে দেয়া হবে না অপজিশন পার্টিকে। একটা সমাবেশে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেতো সরকারের।
বিরোধী পক্ষকে অমানুষ হলে চলবে না। তাদেরও বুঝতে হবে। মানুষ পুড়িয়ে এভাবে আন্দোলন হয় না। আপনাদের যুদ্ধ নেতাদের সঙ্গে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে নয়। পারলে রাজধানীতে তাহরির স্কয়ার গড়ে তুলে প্রতিরোধ করুন। না পারলে হাতে চুড়ি পরে বসে থাকুন। মানুষ মানবতাকে পুড়িয়ে কোন সাহসে তাদের কাছে ভোট চাইবেন। সেই ভোটের পাতে কি লাথি পড়বে না?
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫