ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আহমদুল কবিরের ৯৩তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

সুমি খান, কনট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
আহমদুল কবিরের ৯৩তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি আহমদুল কবির (মনু মিয়া)

দৈনিক সংবাদ এর সাবেক প্রধান সম্পাদক ও দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবির (মনু মিয়া)  এর ৯৩তম জন্মদিন ৩ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।

আহমদুল কবির দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাও ছিলেন। এ দেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে তার সক্রিয় অবদান রয়েছে।

১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঘোড়াশালের ঐতিহ্যবাহী মিয়া বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। তাঁর মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন। ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।  

আহমদুল কবির ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। আপোসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক। মূলত তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা।

তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই একই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি  আহমদুল কবির দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত ছিলেন আদর্শবান এবং নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে।

তিনি সত্তরের দশকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমৃত্যু গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ছিলেন।   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম ভিপি ছিলেন আহমদুল কবির । ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতায় নিজেকে যুক্ত করেন। সংবাদপত্রকে তিনি তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও স্বকীয় প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ  দৈনিক 'সংবাদ'।

দৈনিক সংবাদ-এ বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি তার এই আদর্শ লালন করে গেছেন। কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়নের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন তিনি।

আমার সৌভাগ্য, আমার বাবা সাইফুদ্দিন খানের কল্যাণে আহমদুল কবীরকে কাছে থেকে দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আমার বাবার গুরুতর অসুস্থতায় আহমদুল কবীর অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বারডেমে নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকদের মাধ্যমে বাবার জরুরি অপারেশন করিয়ে সুস্থ করে তুলেছিলেন। এমন নেতা এবং নীতিনির্ধারকের আজ বড়ই অভাব। আজ তিনি বেঁচে থাকলে দেশের সাংবাদিকতা জগত,  রাজনীতি এবং ব্যবসা ক্ষেত্র গতিশীল নেতৃত্বে সমৃদ্ধ হতো। দেশের এমন সংকটকালে আহমদুল কবীরের স্মৃতির প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

সুমি খান: সাংবাদিক ও লেখক, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।