যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব তত বেশী প্রকট হয়ে উঠছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করতে ব্যর্থ হয়ে জামায়াত-বিএনপি আন্দোলনের ইতি টানে।
জনগণ ঠিকমত জানেও না কিসের দাবিতে এই লাগাতার হরতাল-অবরোধ, তাদের রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া নিয়ে হাটে-মাঠে-ঘাটে কিংবা রাজপথে কোন আলোচনাই নাই। আছে শুধু দেশ জুড়ে শঙ্কা, এই বুঝি যানবাহনে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারল সন্ত্রাসীরা।
জামায়াত-বিএনপির আন্দোলনকে আর রাজনৈতিক বলা যাচ্ছে না, বরং জঙ্গিবাদের সকল শর্ত পূরণ করেই তারা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে খালেদা- তারেক গং ক্ষীণ গলায় বলছে, এসব পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস আসলে সরকারের কাজ। অথচ এ পর্যন্ত যারাই পেট্রোল বোমা বা ককটেলসহ গ্রেফতার হয়েছে তারা প্রায় সবাই জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মী কিংবা ভাড়াটে সন্ত্রাসী। দেশবাসীও জানে কারা এই পেটোল বোমা- ককটেল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া জনগণও এখন এহেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
আজকাল প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও জনগণের হাতে ধৃত হয়ে গণপিটুনি খাচ্ছে বোমাবাজ-ককটেলবাজরা, অথবা পুলিশ কিংবা র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা পড়ছে। দেশব্যাপী এত মানুষ পেট্রোল বোমায় নিহত হলেও তা নিয়ে বিএনপির মাথা ব্যথা নাই। অথচ পেট্রোল বোমাবাজ- ককটেলবাজ সন্ত্রাসীরা আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হলেই জামায়াত-বিএনপির মায়াকান্না শুরু হয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংসার পেতে বসা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গ্রেফতারে দেশবাসী তার নিষ্ফল আস্ফালন আর চাপাবাজির হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল। কিন্তু সে স্বস্তি আদৌ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এখন আবার গোপন আস্তানায় লুকিয়ে থেকে তালেবানি কায়দায় হুংকার দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
রাজপথে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তেমন দেখা না পাওয়া গেলেও প্রতিদিনকার বিবৃতিতে তারা সরকারের শেকড় তিনবেলা উপড়ে ফেলে দিচ্ছেন। পেট্রোল বোমা আর ককটেল মেরে জনগণকে সাময়িকভাবে সন্ত্রস্ত করে রাখা যায়, তবে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা যায় না এই সত্য বুঝবার মত মেধা বিএনপিতে যে নাই তা নয়।
তবে দুটো কারণে জামায়াত - বিএনপি আজ এত মরিয়া। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো, দ্বিতীয়ত, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় গিয়ে আবার হাওয়া ভবন কায়দায় লুটপাট করা। সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে পরাজিত জামায়াত-বিএনপি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের কাছ থেকেও সবুজ সংকেত পাচ্ছে না।
এমতাবস্থায় আর কতদিন এভাবে আন্দোলন টেনে নিতে পারবেন তা নিয়ে স্বয়ং বিএনপি শিবিরেই আজ সংশয়! জনগণও জামায়াত-বিএনপির উপর থেকে মুখ সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। জামায়াতের খপ্পরে পড়ে বিএনপির মত বড় একটি রাজনৈতিক দলের এহেন করুণ পরিণতি দুঃখজনক।
সর্বশেষ, ক্ষমতায় গেলে জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটের উদ্যোগে আন্দোলনের নামে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় বীর উপাধি দেবার ঘোষণায় দেশব্যাপী জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে ক্যান্টনমেণ্টে জন্ম নেওয়া, আইএসআইয়ের আশীর্বাদধন্য দল বিএনপি আসলে আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকেই অপমান করেছে।
জামায়াত-বিএনপির বর্তমানের অপ্রাসঙ্গিক আন্দোলনে সহায়ক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নার মত জনবিচ্ছিন্ন কতিপয় রাজনীতিবিদ এবং সুশীলরা। সম্প্রতি ইন্টারনেট এবং পত্রিকায় মাহমুদুর রহমান মান্নার দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ফোনালাপ দুটির কথোপকথন শুনলে রাজনীতির ভিলেন মান্নাদের মুখোশ আমাদের সামনে টুপ করে খুলে পড়ে।
স্কুল জীবনে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন করা মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রথম প্রেমের স্মৃতির মতই জামায়াত ও তার দোসর বিএনপির প্রতি পক্ষপাত আজো বিদ্যমান। জামায়াত-বিএনপিকে ক্ষমতায় নেবার জন্য বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাসকারী বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সাথে আলোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-তিনটে লাশ ফেলবার আয়োজন করছেন মান্না সাহেব, যাতে সরকারকে কায়দামত নাড়া দেওয়া যায়। এক নাম না জানা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র করছেন যাতে শেখ হাসিনার সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনা যায়।
এই দুটো ফোনালাপ ফাঁসের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে টক শো কিংবা রাজনৈতিক মঞ্চ কাঁপানো মান্নাদের চরিত্র আজ দিনের আলোর মত উন্মোচিত হল। ক্ষমতায় যাবার কিংবা পাশে থেকে উচ্ছিষ্ট পাবার লোভে কামাল-মান্নারা আজ মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে এসব সুশীলরূপী কুশীলদের কুমতলব বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। দেশবাসী চাক বা না চাক, তাদের আজ শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা চাই।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বাংলাদেশে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখল কঠিন হয়ে গেছে। যদি কেউ সে ঝুঁকি নিতে চায়ও, ভবিষ্যতে তাকে সে জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, এবং বিচারে অবৈধ ক্ষমতা দখল প্রমাণিত হলে সর্ব্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে অনির্বাচিত সরকারের জন্য ক্ষমতায় আরোহন সম্ভব হলেও প্রস্থানটা আর সহজ হবে না। জেনে শুনে তাই বাঘের পিঠে সওয়ার হবে কে? মাহমুদুর রহমান মান্নারা তাই এই মুহূর্তে যতই জামায়াত-বিএনপি বা তৃতীয় কোন শক্তির ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখেন না কেন, তা বাস্তবায়নের কোন সুযোগ নাই। বরং অবাস্তব এসব স্বপ্ন দেখতে গিয়ে মান্নারা আবার বিছানা ভিজিয়ে না ফেলেন!
প্রেসক্লাবের সামনে গণমিছিলের ডাক দিয়ে সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ড. কামাল কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্না হাওয়া! চারিদিকে জোরালো দাবি উঠেছে, দেশদ্রোহী খুনি মান্নাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। দেখা যাক, গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার এখন কী করে?
ডঃ আবুল হাসনাৎ মিল্টন: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কবি ও চিকিৎসক। ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫