ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মেলবোর্নে জয় আসবেই, তারেক?

ড. শাখাওয়াৎ নয়ন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫
মেলবোর্নে জয় আসবেই, তারেক? সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমান

ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক খুলতেই লাল-সবুজের একটি পোস্টার চোখে পড়লো, তাতে লেখা ‘জয় আসবেই’। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলছে।

একের পর এক শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ খেলে আগামী ১৯ মার্চ তারা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে।

ইতোমধ্যে, সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে দেশপ্রেমের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই ভার্চুয়াল জগতের পদাতিক দুই দেশের সমর্থকরা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, তোপ চালাচ্ছেন সমানে সমান।

টাইগার এবং টাইগার সমর্থকদের একটাই কথা- ‘বিনাযুদ্ধে নাহি দিব সুচাগ্র মেদেনী’। তারুণ্যের এই জয়যাত্রায় মিডিয়া এবং সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম যারপরনাই রকমের সরব। এই যে এতো উত্তেজনা, চারদিকে এতো আয়োজন! কিন্তু আমাদের তরুণ নেতৃত্ব কোথায়? প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়, খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান বা আন্দালিব রহমান পার্থ, মাহী বি চৌধুরী? তাদের তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না। না বিবৃতিতে, না উপস্থিতিতে।

আমরা তো দেখেছি, গত বিশ্বকাপে ভারতের একটি ম্যাচে রাহুল গান্ধী সাধারণ দর্শকদের গ্যালারিতে বসে পুরো খেলা দেখেছেন। আমাদের রাজপুত্ররা সাধারণের কাছ থেকে এতো দূরে থাকতে চান কেন?

শুধু পিতা-মাতার পরিচয়ে গদ্দিনসিন ক্ষমতা চর্চা আর কত দিন? তারেক রহমান না হয় ব্রিটিশ সরকারের শো-কজ নোটিশ খেয়ে নব্য-ইতিহাস চর্চা বন্ধ করে মুখে কুলুপ এঁটেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সমস্যা কোথায়? তিনি কি অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড যেতে পারতেন না? বাংলাদেশের সমর্থকদের সাথে বসে দু’একটি খেলা দেখলে কী এমন সমস্যা হতো? তারেক রহমান উচ্চ চিকিৎসার্থে (!) নাকি লন্ডন থেকে মালয়েশিয়া যেতে পেরেছিলেন, তাহলে এখন অস্ট্রেলিয়া যেতে সমস্যা কোথায়?

আন্দালিব রহমান পার্থ, মাহী বি চৌধুরী মিডিয়ায় কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে দিতে ভালই পারঙ্গম, কিন্তু সাধারণের কাতারে তারা অনুপস্থিত। জনতার আবেগের সাথে তারা একাত্ম হতে পারেন না। এরা নাকি আবার তরুণ (!) মেধাবী(!) নেতৃত্ব? 

রাজপুত্রদের কথা থাক, এবার প্রজাপুত্রদের প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশের খেলায় বিশেষ একজন দর্শককে প্রায় নিয়মিত দেখা যায়। অসম্ভব উজ্জীবিত ক্রিকেট-পাগল এক তরুণ।

শীত নাই গ্রীস্ম নাই, সারা গায়ে রঙ মেখে ডোরা-কাটা দাগ দিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সেজে মাঠে এসে ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’ বলে গলা ফাটায়। তার নাম টাইগার মিলন।

তিনি ঢাকার শান্তিনগর মোড়ে একটি সেলুনের ব্যবসা চালান। সারা বছর যা সঞ্চয় করতে পারেন, খেলা দেখে দেখে সব টাকা শেষ করে ফেলেন কিংবা দেনাদার হন। তিনি এবার অনেক কষ্টে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ম্যানেজ করতে পারলেও নিউজিল্যান্ডের ভিসা ম্যানেজ করতে পারেননি। তাই নিউজিল্যান্ডের খেলাগুলোয় তাকে দেখা যায়নি। এমন একজন ক্রিকেট-পাগল মানুষের জন্য স্পন্সর নিয়ে আমাদের কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি। যিনি এসেছেন তিনি খ্যাতিমান সাংবাদিক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফজলুল বারী, অস্ট্রেলিয়াতে টাইগার মিলনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

বিঃদ্রঃ- বাঙালি জাতির ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এই সব টাইগার মিলনরা একদিন নূর হোসেন হয়ে যান, আর রাজপুত্ররা মসনদে বসে বিবৃতি দেন।

লেখকঃ কথাসাহিত্যিক, একাডেমিক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।