রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত হয়।
পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদের অন্তিম সময়ে মহাজোট সরকারের শেষ চমক হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক নির্দেশনার বিষয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ ও প্রচার হয়। এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ ২ (দুই) বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়।
বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেশের বহু বিশিষ্টজন কলাম লিখেছেন, জাতীয় পত্রিকা গুলোর চিঠিপত্র কলামে প্রায়শই এ বিষয়ে লেখা ছাপা হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৪ সালের ৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। এই প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন জেলার প্রশাসকরা সমর্থন দিয়েছিলেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা ৩০ বছর রয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এতসবের পরও কোন এক অজানা কারণে লক্ষ লক্ষ উচ্চ শিক্ষিত ছাত্রের প্রাণের দাবি-চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর- কিন্তু আজও বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা স্বপ্নবাজ তরুণ প্রজন্ম এখনও আশাবাদী আমাদের এই যৌক্তিক দাবি অব্যশই বাস্তবায়িত হবে। আর এই আশাই আমাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখার শক্তি ও সাহস যোগায়। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখায় বলে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে আজ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবিতে যুক্তিসহ খোলা চিঠি পেশ করা হলো:
এক. উন্নত বিশ্বে তাদের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোন সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশসহ উন্নত দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কোন কোন দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমন: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০ বছর, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৫ বছর, কোন কোন ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্সে ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত, দক্ষিণ আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মত সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যে কোন বয়সে আবেদন করতে পারে।
রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য এর মত দেশে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে, তবে ৬৫ বছরের উর্দ্ধে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়;
দুই. প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার নূন্যতম বয়স ৬+(ছয়) বছর করা হয়েছে। ফলে আগে যেখানে একজন ছাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সে এস.এস.সি. পাস করতে পারত এখন সেটা ১৬ বছরের আগে কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়;
তিন. স্নাতক ও সম্মান উভয় ক্ষেত্রে লেখা-পড়ার সময় ১ (এক) বছর করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ (তিন) ও ৪ (চাঁর) বছর করা হয়েছে;
চার. ডাক্তারদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছিল এই বলে যে, তাদের সাধারণদের চেয়ে ১ বছর বেশি অর্থাৎ ৪ বছর অধ্যয়ন করতে হয়। পরবর্তীতে সাধারণদের স্নাতক ও সম্মান উভয় পর্যায়ে সময় ১ বছর বৃদ্ধি করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি;
পাঁচ. এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, অনার্স/ডিগ্রি ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট বের হওয়ার মধ্যবর্তী সময় নষ্ট হয় সব মিলিয়ে প্রায় দুই বছর;
ছয়. প্রচলিত নিয়মানুসারে ২৩ (তেইশ) বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সমীকরণটি শুধু যে কাগজ কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে তার প্রমাণ ২৭/২৮ বছরের আগে কোন ছাত্রের শিক্ষা জীবন শেষ না হওয়া;
সাত. যথাসময়ে লেখা-পড়া শেষ করতে না পারার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে ২ (দুই) থেকে ৩ (তিন) বছর সেশনজট;
আট. চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য প্রতিটি ছাত্রের জীবন থেকে যে সময় নষ্ট হচ্ছে তার ক্ষতিপূরণ করতে;
নয়. বিসিএস এর যথাসময়ে পরীক্ষা নিতে না পারা (২৭ থেকে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার গ্যাপ ছিল ৩ বছর);
দশ. সরকারি চাকরি থেকে অবসরের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে;
এগারো. নার্সদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৬ বছরে উন্নীত করা হয়েছে;
বারো. সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ৩০ বছরের উর্ধ্বে জনবল (অভিজ্ঞতা ছাড়া) নিয়োগ দেয় না। ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে;
তোরো. নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিৎ যোগ্যতার ভিত্তিতে, যোগ্যতার সাথে বয়সের কোন সম্পর্ক নেই;
চৌদ্দ. ৫৭ (সাতান্ন) বছরের বৃদ্ধের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু বাড়লে ৩০ (ত্রিশ) বছরের যুবকের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু কমে না তা প্রমাণ করতে;
পনেরো. সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সাথে সরকারের কোন প্রকার আর্থিক সংশ্লেষ নেই। কিন্তু সিদ্ধান্তটি হবে জনমুখী। ফলে উপকৃত হবে লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রত্যাশী ও তাদের পরিবার, সর্বপরি দেশ।
তাই, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মহান জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার যে প্রস্তাব করেছিলেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যম দেশের উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের দেশ সেবার সুযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ রইল।
বিনীত
আপনার বিশ্বস্ত
রাহাত চৌধুরী, মিলান ভৌমিক, মুনশি আলিম, ফজলুল হক, রাত্রি, পারুল, তাজিদা, হেলেনা আক্তার সুইটি, অনামিকা, শিব্বির আহমদ, শফিক, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, তারেক, নিশিতা, অদিতি ভট্টাচার্য, অজিদ চন্দ্র, রঘুনাথ, কৃষ্ণ দাস, ফয়জুল আহমদ, রাসেল, মামুন, শরিফ তালুকদার, তানভিন সুইটি প্রমুখ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, লিডিং ইউনিভার্সিটি মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সির ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।