ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

ষষ্ঠ বছরে বাংলানিউজ, কিছু উপলব্ধি

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
ষষ্ঠ বছরে বাংলানিউজ, কিছু উপলব্ধি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাঁচ বছরে একটা বিষয়ই খুব করে মনে হয়েছে, বলা যায় উপলব্ধিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় উপলব্ধি হচ্ছে- ‘কাজটি কঠিন’। পৃথিবীতে কোনও কাজই সহজ নয়।

কোনও অর্জনই অতি সহজে আসে না। এই যে মাত্র পাঁচটি বছরের পথচলায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এখন দিনে দেড় কোটি পাঠকের ডিজিটাল নিউজপোর্টাল, সে তো অনেক কিছুর বিনিময়ে।

এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন চব্বিশ ঘণ্টা সক্রিয়। বাংলানিউজের কোনও কর্মী কোনও একটি উদাহরণও সামনে আনতে পারবেন না যে, এডিটর ইন চিফকে এক কলে বা বার্তায় পাওয়া যায়নি। হোক সে ফোন, ইমেইল, টেলিগ্রাম, ভাইবার কিংবা টেক্সট মেসেজে। আর হোক তা রাত-গভীরে কিংবা প্রত্যুষে; কিংবা দিন-রাতের যেকোনও সময়ে। টানা ষোল ঘণ্টা অফিসে তার উপস্থিতি। বাংলানিউজে প্রকাশিত প্রতিটি শব্দের সাথে পরিচিত তিনি। প্রতিটি কাজে থাকে তার পরামর্শ, মতামত ও দিক নির্দেশনা।

বাংলানিউজের সিনিয়র ও দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা কাজ করেন তারাও অনেকটা চব্বিশ ঘণ্টা সক্রিয়। আর প্রতিটি কর্মীই একইভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। এখানে শ্রান্তি নেই।

প্রতিদিন বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন মিলিয়ে গড়ে ৫০০টি আইটেম প্রকাশিত হয়। যা দিয়ে দিনে পূর্ণাঙ্গ দুটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশ করা সম্ভব। বলা যায়, প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় ২,৫০,০০০ শব্দ উৎপাদন করে বাংলানিউজ। আর তার প্রায় সবটাই বাংলানিউজের নিজস্ব কনটেন্ট।

এই ‘নিজস্ব কনটেন্ট’ শব্দবন্ধটিতে জোর দিতে চাই; এই কারণে যে, অনলাইন মিডিয়ার যে দৌড় আজ চলছে তার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে একটি কথা-- ‘কপি অ্যান্ড পেস্ট’। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এই কপি-পেস্ট থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে অতি সতর্কতায়। আর বলা যায়, এগিয়ে যাওয়ার সেটিও একটি কারণ। ভার্চুয়াল জগতকে বাংলানিউজ প্রতিদিন আড়াইলাখ নিজস্ব শব্দ উপহার দিয়ে তাকে সমৃদ্ধ করছে। আর এই কনটেন্টই কপি পেস্ট হয়ে হাজার হাজার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রকাশিত হচ্ছে জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ের শত শত সংবাদপত্রে। বলা যায়, এসব সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে বাংলানিউজের তৈরি কনটেন্ট হাজার গুণে বেড়ে চলেছে।  

একটি রিপোর্ট তৈরি করতে কী  কষ্ট ও দৌড়ঝাঁপই না  করতে হয়, তা সত্যিকারের সাংবাদিক মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন। এর জন্য রিপোর্টারকে মাঠে থাকতে হয়, খবর সংগ্রহ করে তাকেই লিখতে হয়। বার্তাকক্ষে দক্ষ হাতে তার সম্পাদনা করতে হয়, আকর্ষণীয় হেডলাইন দিতে হয়। তবেই আপলোড হয় খবরটি। আর তা কপিপেস্ট করে অন্য অনলাইনে প্রকাশ করা মিনিটের খেলা মাত্র।

ক্ষতি নেই কপি-পেস্টে। হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রেডিটটুকু যে দিতে হয়, সেকথা সামান্যই মনে রাখে এসব সংবাদমাধ্যমগুলো।

খবর যে কেবল নিজেই তৈরি করে তা নয়, সবার আগে খবর তৈরির দৌড়েও বাংলানিউজ তার স্থানটি পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। দিনে গড়ে ৯০ শতাংশ খবর বাংলা নিউজ ব্রেক করে একথা এখন মানুষের মুখে মুখে। কেউ কেউ বাংলানিউজকে ব্রেকিং কিং নামও দিয়েছেন। এতে দায়িত্ব আর খাটুনি বেড়ে গেছে আরও বহুগুণে।

সবার আগে সব খবর দিতে পারা, নিজস্ব কনটেন্ট দিয়ে ভার্চুয়াল জগতে রাজত্ব করা বাংলানিউজের নিয়মিত চর্চা। কিন্তু এ এমন এক জগত যেখানে পাঠক ধরে রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ। সামাজিক নেটওয়ার্কিং মিডিয়া-ফেসবুক, টুইটার ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক সামাজিক মাধ্যম--- ইউটিউব, ভিমিও, ফ্লিকার। ফলে পাঠক ছুটে যায় বারবার। রয়েছে অসামাজিক কনটেন্টের ছড়াছড়িও; যেগুলোতে এই জগতের বাসিন্দাদের অবাধ বিচরণ। এদেরকে একটি মূলধারার সংবাদমাধ্যমে আটকে রাখতে প্রয়োজন কনটেন্টের বিষয়-বৈচিত্র্য। সেটিও যথাযথভাবে দিতে গত পাঁচ বছর ধরে প্রাণপনে চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলানিউজ। নিজস্ব স্লোগান, ‘সংবাদ বিনোদন সারাক্ষণ’র সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট দিয়েই বাংলানিউজ পাঠককে খবর দিয়ে আপডেটেড যেমন রাখছে, তেমনি বিনোদিতও করে চলেছে।

ফলে প্রতিটি পাঠক বাংলানিউজের সাইটে একবার ঢুকে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট অবস্থান করেন। যা বিশ্বমানের গড়। আর বাংলানিউজের ৮০ শতাংশ পাঠকই ফিরে ফিরে আসেন। প্রতি মূহূর্তে ২০ শতাংশ নতুন পাঠক আকৃষ্ট হন।

আর এই বিপুল সংখ্যক পাঠকের চাহিদা অব্যাহতভাবে পূরণ করে চলে বাংলানিউজ।

দেশের অন্যতম ইন্টার-অ্যাকটিভ মিডিয়া বলতেও এই বাংলানিউজ। সামাজিক মাধ্যম থেকে একটি বড় মাপের পাঠকগোষ্ঠী বাংলানিউজের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেন। তারা প্রতিটি খবরে তাদের মতামত দেন। বাংলানিউজ সেই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে খবরের পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে চলে।

বাংলানিউজ শুরু থেকেই একটি সর্বজনীন, বারোয়ারি মিডিয়া। ফলে সংবাদ হতে পারে এমন সকল জগতে, সংবাদ রয়েছে এমন সকল স্থানে এর বিচরণ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তৈরি হয়েছে অনলাইনে বাংলানিউজের বিপুল পাঠক। আর গোটা বিশ্বের যেখানেই বাংলাদেশি বা বাঙালিরা রয়েছেন সেখানেই রয়েছেন বাংলানিউজের পাঠক। তাদের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা পূরণই বাংলানিউজের অন্যতম মিশন।

টানা পাঁচ বছর এই কাজগুলো সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে করে চলেছে বাংলানিউজ। আর তাতেই উপলব্ধি হয়েছে কাজটি কঠিন। তবে যত কঠিনই হোক, পাঠকের ভালবাসা নিয়ে, ভালবেসেই কাজগুলো করে যেতে চায় বাংলানিউজ। আজ ১ জুলাই  শুরু হলো ষষ্ঠ বছর। এই দিনে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

বাংলাদেশ সময় ১১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
এমএমকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।