ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বাংলানিউজের কর্মীরা তার সন্তানসম

রূপক আইচ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৫
বাংলানিউজের কর্মীরা তার সন্তানসম

মাগুরা: ২০১৪ সালের ১৯ জুলাই। বেশ সকাল।

হঠাৎ খবর পেলাম বাংলানিউজের নিউজরুম এডিটর প্রভাষ চৌধুরীর মা শেফালী চৌধুরী ফরিদপুর হার্ট ফাউন্ডেশনে মারা গেছেন! ধাক্কা খেলাম। খুব খারাপ লাগলো।

প্রভাষকে ফোন দিলাম। ও বললো বাড়ির দিকে আসছে। আমি মোটরসাইকেলে মাগুরা থেকে রওনা হলাম মহম্মদপুরের দিকে। হঠাৎ আমার মোবাইল ফোনে বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফের আলমগীর হোসেন স্যারের ফোন।

দাঁড়িয়ে ফোনটা ধরতেই উনি আমাকে বললেন তুমি কোথায়? আমি বললাম- মহম্মদপুরে যাচ্ছি, শহর ছেড়েছি কেবল। স্যার বললেন, কাছে টাকা আছে? না থাকলে শহরে গিয়ে কিছু টাকা ম্যানেজ করে নিয়ে যাও। অফিসের পক্ষ থেকে প্রভাষের হাতে তুলে দেবে।

ও(প্রভাষ) কেবল ছুটি শেষ করে ঢাকায় আসছিল। ওর কাছে নিশ্চয়ই টাকা কম আছে। একটি প্রতিষ্ঠান প্রধান নিজে তার এক কর্মীর ব্যক্তিগত বিষয়ে এত গভীরে খোঁজ রাখেন! উনি তো ফোন না করে অফিসের কাউকে দিয়েই বলাতে পারতেন! এ যেন সন্তানের প্রতি বাবার দায়িত্বের অংশ। এ ভাবনা আমার মাথায় অজান্তেই এসেছিল সেদিন।

আমি শহরে ফিরে এসে বাড়তি কিছু টাকা নিয়ে প্রভাষের বাড়িতে গেলাম। এর মাঝে বেশ কয়েকবার ডেস্ক থেকে শিমুল আপাসহ কয়েকজন খোঁজখবর নিলেন। শেষকৃত্যের পরে রাতে বাসায় ফিরলাম। দেখলাম একজন মানুষ কি করে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন। কি করে প্রতিষ্ঠানের কর্মী হয়ে ওঠে তার একান্ত আপন।  

এর আগে একই বছরের ১০ মার্চ। আর এক হৃদয়বিদারক স্মৃতির সাক্ষী হলাম। মাগুরার মহম্মপুরের আর এক ছেলে বাংলানিউজের সদ্য যোগদানকৃত নিউজরুম এডিটর মাহমুদুল ইসলাম রনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ঢাকার অ্যাপোলো হসপিটালে।

সেদিন সকালে ঢাকা অফিস থেকে ফোনে আমাকে ওর মৃত্যুর খবর জানানো হলো। সেই সঙ্গে জানানো হয়, এডিটর ইন চিফের নির্দেশ- আমি যেন সার্বক্ষণিকভাবে ওই পরিবারের পাশে থাকি। সকালেই রওনা দিয়ে সবার আগে পৌঁছে গেলাম রনির জাঙ্গালিয়ার বাড়িতে।

সেখানে তার বাবা মো. মোতালেব হোসেন জমাদ্দার তখন বাকরুদ্ধ। অফিসের পক্ষ থেকে আমি গিয়েছি জেনেই ডুকরে কেঁদে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বাবা তুমি বাংলানিউজের লোক? এত সকালে তুমি চলে এসেছো? আমার রনির লাশ এখন কোথায়? বললাম আমি মাগুরায় কাজ করি। তাই দ্রুত আসতে পেরেছি। লাশ অফিসের সহকর্মীরা নিয়ে আসছেন।

তিনি অবাক হলেন। বাংলানিউজের কয়েকজন সহকর্মী লাশ নিয়ে বিকেলে বাড়িতে পৌঁছালেন। রাতে রনির লাশের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে কবর দেওয়া হলো। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকর্মীদের সহমর্মিতায় সবাই আশ্চর্য হলেন। আর আমি অবাক হলাম বাংলানিউজের নিষ্ঠায়।

এবার আসি বাংলানিউজে সংবাদ প্রসঙ্গে। বাংলানিউজ আমাকে গতিশীল করেছে। বানিয়েছে ২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক। নিজের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সূত্র ধরে ছোটবেলা থেকেই কমবেশি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করছি।

সাংবাদিকতায় নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রায় শুরু থেকেই বাংলানিউজের সঙ্গে আছি। দীর্ঘ ৫ বছরে বাংলানিউজের অভিজ্ঞতা আমাকে জুগিয়েছে সাহস, করেছে গতিশীল। মফস্বল থেকে যেকোনো সংবাদ দ্রুত পাঠানোর স্বার্থে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে অনেক সময়ই কিছু ইনফরমেশন মিস হয়ে যায়।

কিন্তু বাংলানিউজের নিউজরুম এডিটররা ফোন দিয়ে কিংবা সম্পাদনার কৌশলে সেগুলিকে করে তোলে নির্ভুল। এরপর দ্রুত আপলোড করা হয় এটি। মুহূর্তে দেশ বিদেশের কোটি পাঠক জেনে যায় সে সংবাদ। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই পাঠকের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বাংলানিউজ।

মনে পড়ে ২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে হেলিকপ্টারে চড়ে প্রথমবারের মতো সস্ত্রীক মাগুরা এলেন মাগুরার কৃতি সন্তান বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আগের দিন বিকেল থেকেই একটি নিউজের কাজে আমি ছিলাম মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায়।

সকাল ৮টার দিকে এ খবর পেয়ে একটু ভয় পেলাম। রাস্তার যা অবস্থা তাতে মহম্মদপুর থেকে মাগুরা গিয়ে সঠিক সময়ে নিউজটা কভার করতে পারবো তো?  মাগুরার কয়েকজন সতীর্থ  বন্ধুকে ফোনে এ খবর জানালাম যেন নিউজটা মিস না হয়।

সঙ্গে সঙ্গেই মহম্মদপুর থেকে রওনা হলাম। স্টেডিয়ামে পৌঁছে দেখি তখনও কিছুটা সময় আছে। দেখলাম আমার সতীর্থ বন্ধুরা (সবার প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান রেখেই) কেউ মাঠে আসেননি। বুঝলাম সংবাদটিকে কেউ তেমন গুরুত্বই দেননি। আমি যথারীতি অনেকগুলো ছবি তুললাম।

কথা বললাম সাকিবের মা বাবা ও সাকিবের সঙ্গে। দ্রুত কয়েকটি ছবিসহ নিউজটি বাংলানিউজে পাঠিয়ে দিলাম। বাংলানিউজের স্ক্রলে ছবিসহ নিউজটা পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই টের পেলাম- কাজ শুরু হয়ে গেছে! দেখতে দেখতে নিউজটা ৩০ হাজারের ওপরে শেয়ার হয়ে গেল ফেসবুকে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার সতীর্থদের ফোন আসতে শুরু করলো। অনলাইন সাংবাদিকতাকে যারা সাংবাদিকতা হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে চান না তাদেরও সেদিন দেখেছি একটি ছবির জন্য আমাকে ফোন দিয়েছেন অসংখ্যবার। এ রকম অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছি এ ক’বছরে।

একই সঙ্গে আর একটি কথা না বললেই নয়। বাংলানিউজের অগণিত পাঠক। যারা সঙ্গে ছিলেন বলেই আমরা আজ এতদূর আসতে পেরেছি। যাদের জন্য আমি আমার জেলার মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তুলে ধরতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

দেশ বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাভাষী অনেকেই বিশ্বাসের সঙ্গে নিয়মিত দেশের খবর রাখতে নিজের এলাকার খবর রাখতে চোখ রাখেন বাংলানিউজের পাতায়। বিভিন্নভাবে সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানান। সঙ্গে থাকেন। তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।

সবশেষে বলতে চাই- বাংলানিউজ বাংলাদেশের সংবাদ জগতে যে আলোড়ন তুলেছে। সে আলোড়ন আমরা বয়ে নিয়ে যেতে চাই আরও অনেক কাল। অনেক দূর। এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন স্যার, হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন ভাই, কান্ট্রি এডিটর শিমুল আপাসহ সবাইকে আবারও অনেক অনেক শুভেচ্ছা অভিনন্দন। জয়তু বাংলানিউজ....।

লেখক: ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মাগুরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৫
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।