ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

নীল জিন্স নীল আগুন নীল ধোঁয়া | বিপাশা চক্রবর্তী

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৫
নীল জিন্স নীল আগুন নীল ধোঁয়া | বিপাশা চক্রবর্তী

মুক্তির দাবিতে পাঁচ দশক আগে আমেরিকার রাস্তায় নারী তার অন্তর্বাস পুড়িয়েছিল। তাতে নারীর বক্ষদেশ আর কটিদেশ খানিকটা অরক্ষিত হয়ে পড়লেও সেখানে সুরক্ষা যুগিয়েছিল ব্লু জিন্স ও ডেনিম জ্যাকেট।

নারী আর পুরুষ একই সঙ্গে লীন হয়ে গেল এই পোশাকে। অনেকেই ডেনিম জ্যাকেটের আস্তিনে আর ব্লু জিন্সের হিপ পকেটে খোঁজেন ‘সাম্য’। উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে সেই আমেরিকা মুলুকেই জার্মান বংশীয় লেভী স্ত্রোস জিন্সের প্রচলন ঘটান। তার এই যুগান্তকারী নির্মাণ প্রথমে শ্রমিক শ্রেণীর কাজের পোশাক থাকলেও অচিরেই তা গ্রাস করে পুরো পশ্চিম পৃথিবীকে। প্রথমে বাদামী, তারপর কমলা সূতায় বোনা ডাবল সেলাই থেকে নীল রঙ ধারণ করে জিন্স। এরপর আমেরিকা থেকে ইউরোপ জয়। পুরুষের কাজের পোশাক হয়ে যায় নারীর ফ্যাশন পোশাক। বিপ্লবের ফ্রান্সে অভিজাত, বুর্জোয়া, প্রোলেতারিয়া সব্বাই এক বাক্যে গ্রহণ করে নেয় জিন্সকে। এভাবেই ব্লু জিন্স একটু একটু করে জ্বালাতে থাকে নীল আগুন, ছড়াতে থাকে নীল ধোঁয়া। নীল জিন্সে নীল পৃথিবীর মানুষগুলো হয়ে উঠতে থাকে আরো আত্মবিশ্বাসী।

আর এখন তো ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস বা কোকাকোলার মতো সারা পৃথিবীর উচ্চ, মধ্য,  নিম্ন  তাবৎ বর্গ এই এক বস্ত্রে একাকার। ব্যতিক্রম নয় আমাদের এই উপমহাদেশও। ভেবে দেখুন তো, নারী বা পুরুষের শরীর আঁকড়ে ধরেও তাকে মুক্ত করার এমন কারিশমা আছে আর কোন পোশাকে? শরীরকে যত নিবিড় করে ধরে এই জিন্স ততই যেন তাকে দিনের আলোর মতো ফুটিয়ে তোলে। ব্লু জিন্স পরিহিতা সুন্দরীটি যেন হলিউডের কোনো রোমান্টিক মুভির নগ্ন নায়িকার মতো কুহকিনী। মনে পড়ে যায়, এক ও অদ্বিতীয় ফ্যাশন ফিলোসোফার ইভ স্যা লোর কথা। তাঁর জীবনে নাকি মস্ত একটা আফসোস ছিল। কেন তিনি ব্লু জিন্স আবিষ্কার করতে পারলেন না! তাই যেন তাঁকে আবিষ্কার করতে হলো সাফারি সুটের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। কী আছে এই ব্লু জিন্সে? উত্তর সে একটাই ব্লু জিন্সের মতো সহজ সাবলীলতা আর আবেদন অন্য কোনো পোশাকে নেই।

তারপর কেটে গেছে অনেক সময়। লেভীর নিজের হাতে গড়া ‘লেভী স্ত্রোস এন্ড কোম্পানি’র পরে এসেছে বহু জিন্স নির্মাতা কোম্পানি। জিন্সের জমিতে রীতিমতো আতশ কাজ দিয়ে খোঁজাখুঁজি হয়েছে নতুন নতুন যৌনতার প্রদেশ। সফলও হয়েছেন তারা। নানা রঙ্গে ঢঙ্গে কাট ছাটে ফেব্রিকের ধরনে বৈচিত্র্যময় হয়েছে জিন্স। ফ্যাশন দুনিয়ার এযাবতকালের যত রকমের কনসেপ্ট বা স্টেটমেন্টই আসুক না কেন জিন্সকে বিধ্বস্ত করতে পারে নি। কী ফ্যাশনে কী প্রয়োজনে জিন্সের আবেদন যেন অক্ষত চির অটুট। ওদিকে জিন্সে নারী পুরুষের বিশেষ করে নারীর যৌন আবেদন নিয়ে হয়েছে অনেক কটু কথা, হানা হয়েছে সমালোচনা, কটাক্ষ, তাতে করে কিন্তু জিন্সের কিচ্ছু যায় আসে নি। কোনো আসর পড়েনি জিন্সের দুর্গে—স্বমহিমায় আসীন নারীর সৌন্দর্যে বিভঙ্গে। আর গত দশকে নারী জিন্স ফ্যাশনের জগতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছে স্কিনি জিন্সের আবির্ভাব।

খুব আঁটসাঁট এই জিন্স যে শুধু ভীষণভাবে শরীর আঁকড়ে তাকে প্রকাশই করে না বরং কোমরের বেল্ট এরিয়ার থেকেও নামিয়ে একেবারে বিপদসীমা থেকে পরিধান করে পুরুষের দৃষ্টির চুম্বক আকর্ষণে নিজেকে পরিণত করেন অনেক তরুণী। এতকাল পর্যন্ত জিন্সে কোনো প্রকার শারীরিক সমস্যা তৈরি না হলেও লম্বা সময় ধরে ‘স্কিনি জিন্স’ পরাটা কিন্তু গোল বাঁধাতে পারে আপনার রক্ত চলাচলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে ‘কম্পার্টমেন্টাল সিনড্রোম’ বলে। শরীরের একগুচ্ছ পেশিতে রক্তপাত এবং ফুলে যাওয়ার কারণে  তৈরি হয় এই অবস্থা। তবে যারা একটু ছিপছিপে তাদের এই সমস্যা কম হতে পারে। সারাদিন ধরে এই জিন্স পরিধানের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন চিকিৎসকরা। তাই নিজের সৌন্দর্য প্রকাশে ব্যস্ত রমণীদের ভেবে দেখার সময় হয়েছে, স্কিনি জিন্সের অতি ব্যবহারে তারা নিজেদের অসুস্থ অনুভূতিহীন করবেন নাকি পরিমিত ব্যবহারে স্বাভাবিক প্রাণ চঞ্চল আবেদনময়ী হয়ে রবেন।

বিজ্ঞান লেখক, উন্নয়নকর্মী

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।