ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আইভী রহমান: এক আমৃত্যু সংগ্রামীর নাম

আমিনুল হক পলাশ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
আইভী রহমান: এক আমৃত্যু সংগ্রামীর নাম আইভি রহমান

ঢাকা: ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় দিন। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এক নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।



আল্লাহর অশেষ রহমতে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী। সেই হামলায় গুরুতর আহত হন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমান। হামলায় তাঁর দুই পা উড়ে যায়।

প্রায় ৭২ ঘন্টা মৃত্যুযন্ত্রণা সয়ে অবশেষে ২৪ শে আগস্ট দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আইভী রহমান। শেষ হয়ে যায় আমৃত্যু সংগ্রামী এক নেত্রীর জীবনের গল্প। এ-চলে যাওয়া বড় অসময়ে চলে যাওয়া, জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি। ষাটের দশকে আইভী রহমানের রাজনৈতিক জীবনের শুরু। নিজ মেধা, প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতায় দ্রুতই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসেন। ছিলেন সংগঠন অন্তঃপ্রাণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছেন।

দেশ আর দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন তিনি। সারাক্ষণ দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। চমৎকার বক্তৃতা দিতে পারতেন। তবে বক্তৃতা করতেন কম। মঞ্চে পারতপক্ষে উঠতেন না। বেশিরভাগ সময় থাকতেন মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট তাঁর প্রাণপ্রিয় কর্মীদের সাথে। ২১ শে আগস্টে সকলের অনুরোধ সত্ত্বেও মঞ্চে উঠেন নি। কর্মীদের সাথে বসে, জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয় সংগঠনের ব্যানার হাতে রেখেই চিরবিদায় নিয়েছেন। দারুণ কষ্টসহিষ্ণু ছিলেন আইভী রহমান। রাজনৈতিক কারণে জীবনে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে, কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু কখনোই ভেঙ্গে পড়েননি। হাসিমুখে দেশের স্বার্থে নিজের যথাসর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন।

মতিয়া চৌধুরীকে সাথে নিয়ে এরশাদ আমলে একবার দশ মাইল পথ পায়ে হেঁটে মাদারীপুরের কালকিনিতে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। এমন দৃষ্টান্ত আর কয়জন রাজনীতিবিদের আছে? প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সাথে ছিল আইভী রহমানের গভীর প্রেমময় সম্পর্ক। জিল্লুর রহমান তাঁর স্ত্রীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ আইভীকে হারিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি ভয়ানক দুঃখ কষ্ট, বেদনা, কঠিন শূন্যতা আর হাহাকারের মধ্যে বেঁচে আছি। আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে গেছে। ভাবনায় কত প্রহর কেটে যায়, মনে পড়ে যায় কত স্মৃতি, কত কথা। তবে যে উদ্দেশ্যে সে প্রাণ দিয়েছে এর মধ্যে একটি সান্ত্বনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। ’

আইভী রহমানের মৃত্যু জিল্লুর রহমানের মুখের হাসি চিরতরে কেড়ে নিয়েছিল। বনানীতে আইভী রহমানের কবরের পাশে একটি স্থায়ী চেয়ার বানিয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। প্রায়ই গিয়ে সেখানে বসে সঙ্গ দিতেন কবরে শুয়ে থাকা প্রিয়তম স্ত্রীকে। রাজনৈতিক সফলতার পাশাপাশি একজন সফল মা ছিলেন আইভী রহমান। রাজনৈতিক শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের তিন সন্তানকে তিনি মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আইভী রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল আকর্ষণীয়। কৌতুকপ্রিয় ছিলেন। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। নিজের চারপাশটাও মাতিয়ে রাখতেন রাখতেন সবসময়। গাছ আর ফুল খুব প্রিয় ছিল তাঁর। নিজে যেমন সুন্দরী ছিলেন তেমনি তাঁর ছিল একটি সৌন্দর্যপিপাসু মন। নিজের বাসাটা মনের মত গোছ গাছ করে রাখতেন। গভীর মমতায় আগলে রাখতেন নিজের সংসার, নিজের সংগঠন। আইভী রহমান ছিলেন সর্বদিক দিয়ে সফল একজন মানুষ। তাঁর অকালে চলে যাওয়াতে জাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পূরণ হবার নয়। ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তাঁর ক্ষয় নাই ’—কবির এই বাণী আইভী রহমানের বেলায় খুবই প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।