ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

টেকসই উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ: আমাদের করণীয়

জান্নাতুল ফেরদৌস মিফতাহ্, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
টেকসই উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ: আমাদের করণীয়

ঢাকা: নীল সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আর আছড়ে পড়া ঢেউ যেমন অপরিমেয়, ঠিক তেমনি অফুরান এই সাগর, মহাসাগরের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে সম্পদ। লিভিং রিসোর্সগুলোর মধ্যে তিমির মতো বিরাট বপুর স্তন্যপায়ী প্রাণী ছাড়াও সমুদ্রসীমায় রয়েছে নানা ধরনের মূল্যবান মাছ, প্রবাল, ঝিনুক-শামুক, চিংড়ি, কাঁকড়া, কাছিম, লবস্টারসহ আরও অনেক জানা-অজানা জীববৈচিত্র্য।

অন্যদিকে নন-লিভিং রিসোর্সগুলোর মধ্যে আছে সামুদ্রিক লবণ, তেল, গ্যাসসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদ।

জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি)’র ১৪নং গোলটি তাই আবর্তিত হয়েছে টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর আর সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রতি আলোকপাত করে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইডের শতকরা ৩০ ভাগ শোষণ করে নেয় সমুদ্র, আবার এই সাগরতলের বিভিন্ন ফাইটোপ্ল্যাংক্টনই সরাবরাহ করে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অন্তত ৫০ শতাংশ। এভাবে  জলবায়ু ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রধান ভূমিকা পালন করে সাগর, মহাসাগর।

ধারণা করা হয়, সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতির অবদান তিন থেকে ছয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম নয়। বিশ্ববাণিজ্যে সমুদ্রপথ ব্যবহার, টেলিযোগাযোগ খাতে সাবমেরিন কেবল, খাদ্য হিসেবে মাছ, সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটনশিল্প ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ খাত জিএনপি ও জিডিপিকে সমৃদ্ধ করে বিশ্ব অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নকে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।

টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্র এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের এসডিজির চৌদ্দ নম্বর গোলটির সাতটি টার্গেট এবং প্রতিটি টার্গেটের আওতায় কিছু অগ্রগতি নির্ধারণী সূচক রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সমুদ্র দূষণের পরিমাণ কমিয়ে আনা, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের এসিডিফিকেনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য চাষের অপরিকল্পিত ও অবৈধ উপায়গুলো বাজেয়াপ্ত করা, ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সব সংকট নিরসন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এ গোলটি অর্জনে জাতিসংঘের পাশাপাশি যেমন গুরুত্ব বহন করেন উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী জনগণ ও সমুদ্রকেন্দ্রিক জীবিকা আহরণে নিয়োজিত সবার অবদান, ঠিক তেমনি প্রত্যেক সচেতন নাগরিকও এতে ভূমিকা পালন করতে পারেন।

কোরাল দ্বীপগুলোর খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে, প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার কমিয়ে এনে এবং সমুদ্রে তা নিক্ষেপ না করে, উপকূলীয় অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে হোটেল-রিসোর্ট জাতীয় কোনো ইমারত নির্মাণ না করে এবং সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রক্রিয়াগুলো পরিবেশবান্ধব উপায়ে পরিচালিত করার ফলে আমরা সাধারণ মানুষেরাও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণে তথা টেকসই উন্নয়নে অসামান্য প্রভাব রাখতে পারি।

লেখা: জান্নাতুল ফেরদৌস মিফতাহ্
সদস্য, সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ সোসাইটি

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।