ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

হ্যাপি ফেসবুকিং!

ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
হ্যাপি ফেসবুকিং!

সাড়ে পাঁচ বছর আগের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার উমতাতায় ওয়াল্টার সিসুলু ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে গেছি।

ওই ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে সবার জন্য ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ। দুপুরের ব্রেকে কম্পিউটার ল্যাবে ইমেইল চেক করতে গেছি। দেখি ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করছে। এক তরুণীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেমনে? সলজ্জ একটা হাসি দিয়ে সে আমাকে কায়দাটা দেখিয়ে দিলো।

ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে লুকোচুরি চলছে। সরকারের নির্দেশে এগুলো বন্ধ থাকার কথা। অথচ অনেকেই সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিব্যি এসব অ্যাপস ব্যবহার করে চলেছেন।

এমন কী কতিপয় এমপি, মন্ত্রীও নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে নিয়মিত ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। যারা এসময়ে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছেন তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎফুল্লভাব দেখা যাচ্ছে। তবে এরা সংখ্যালঘুদের দলে।

আমরা যারা প্রবাসে থাকি, তারা নিশ্চিতভাবেই লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের একটা বড় অংশই বর্তমানে ফেসবুক, ভাইবারসহ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছেন না। দেশের ফেসবুক সেলিব্রিটিদের ওয়ালে 'লাইক' আর 'কমেন্টের' সংখ্যা দেখলেই তা বোঝা যায়।

সামান্য হাঁচি সংক্রান্ত যাদের স্ট্যাটাসে প্রতিদিন হাজার হাজার 'লাইক' পড়তো, এখন তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যাটাসেও শ'তিনেকের বেশি 'লাইক' পড়ছে না।

এ মূহুর্তে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ, স্পর্শকাতর সময় পার করছে। দুই হেভিওয়েট যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার। তাদের অনুসারীসহ দেশের ভেতরে-বাইরে একটি শক্তি জাতীয় স্বার্থবিরোধী অনেকদিন ধরেই ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত।

সম্প্রতি তাদের এসব ধংসাত্মক কার্যকলাপে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার আশংকাজনকহারে বেড়েছে, যা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ মাধ্যমকে কঠিনতর করে তোলার লক্ষ্যে সরকার তাই সাময়িকভাবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

সাধারণ মানুষ যাতে সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে না পারে, এরকম কোনো অভিপ্রায় নিশ্চয়ই সরকারের নেই। তাই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যারা বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করছেন, তাদের নিয়ে তেমন কারো মাথাব্যথা হয়তো নেই। কোনো এমপি- মন্ত্রীর ফেসবুক ব্যবহার নিয়েও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

তবে ঘাতক-সন্ত্রাসীরাও নিশ্চয়ই বসে নেই। তারাও নিশ্চয়ই যোগাযোগের বিকল্প পথগুলো খুঁজে নিচ্ছে। বর্তমান ব্যবস্থায় সামান্য হলেও সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ যে ব্যাহত হচ্ছে না, তা কি হলফ করে বলা যায়?

তবে এভাবে মূল সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হবে না। প্রযুক্তিগত সমস্যা প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। প্রয়োজনে উন্নত বিশ্বের মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে সহায়তা নিতে হবে, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে হবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানে সব ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রতি শুভ কামনা।

পুনশ্চঃ ফেসবুক, ভাইবারসহ সব অ্যাপ ব্যবহারের উপর থেকে যত দ্রুত নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় ততই মঙ্গল। দেশের অনেক প্রিয় মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় স্বস্তিবোধ করছি না।

ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কবি ও চিকিৎসক

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।