ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ফারিনা আরশাদ এবং পাকিস্তানের আইএসআই প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা

ড.শাখাওয়াৎ নয়ন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
ফারিনা আরশাদ এবং পাকিস্তানের আইএসআই প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা

(এক)
বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিভিন্ন রকম সামরিক এবং বেসামরিক সশস্ত্র এবং নিরস্ত্র বাহিনী আছে। সেসব বাহিনীর ক্ষমতা, অক্ষমতা কিংবা সক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের কম বেশি ধারণা আছে।

কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনীর সক্ষমতা কেমন? আমরা কি তা জানি? বাংলাদেশে একের পর এক বিভিন্ন রোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে; গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্লেষকরা বলেন, উক্ত ঘটনাবলীর পিছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র হাত আছে।

সম্প্রতি পাকিস্তানি কূটনৈতিক ফারিনা’র কর্মকাণ্ড অবশ্যই আমাদেরকে তা মনে করিয়ে দিয়েছে। ফারিনার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খবর দিয়েছে একজন জঙ্গি; বাংলাদেশের কোনো গোয়েন্দা বিভাগ জানতো না কেন? না কি গোয়েন্দা বাহিনী ঠিকই জানতো? তারা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে জঙ্গির মুখ দিয়ে ফারিনা’র নাম বলেছে? যে কোনো কিছুই হতে পারে। তবে ফারিনার ক্ষেত্রে যদি কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করা হয়, তাহলে বলবো কৌশলটি মন্দ নয়। জঙ্গিদের মুখ দিয়ে ফারিনার নাম বলিয়ে মিডিয়ায় প্রকাশ। পাকিস্তান বেকায়দায় পড়ে ফারিনাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দারুন ট্রিটমেন্ট। এরকম একজন কূটনীতিককে প্রয়োজন হয় বহিষ্কার করা; আর তাতে আমাদের কোনো একজন কূটনীতিককেও তারা ইসলামাবাদ থেকে বহিষ্কার করতো; যেমনটি আমরা ২০১৩ সালে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি। সেটা খুব ভালো কিছু হতো না। তারপরেও পাকিস্তানিদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই; তারা প্রতিশোধ নেবার জন্য কোনো না কোনো নাটক ঘটাতে পারে। তবে এখনো দেখার অনেক কিছু বাকি আছে।    

(দুই)

বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত সমতল ভূমির দেশ হওয়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যেমন সহজ; তেমনি অধিক জনসংখ্যার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়াতে কঠিনও। যে দেশের মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দরিদ্র, সেদেশের মানুষ খুব সহজে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে চাইবে না; কিংবা নানা রকম প্রলোভনে ভয়ংকর জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিবে, এটাই স্বাভাবিক। এই তো গতকাল ঢাকার মিরপুরে একটি বাড়িতে গ্রেনেড তৈরির কারখানা পাওয়া গেছে। এই ধরনের আস্তানা এটাই প্রথম আবিষ্কৃত হয়নি। ইতোপূর্বেও হয়েছে। এই জঙ্গিদের কারা অর্থায়ন করছে? কারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে? কারা রসদপত্র সরবরাহ করছে? অনেকেই এক কথায় বলবেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য জামায়াত ইসলামী এসব করছে; তারাই নতুন নতুন নাম দিয়ে এসব জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি করছে।   

আমরা যদি এটা মেনেও নেই, তারপরেও কি আরো অনেক প্রশ্ন অনালোচিত থেকে যায় না? জামায়াত ইসলামী না হয় কর্মী এবং অর্থ সরবরাহ করছে; কিন্তু অস্ত্র-গোলা-বারুদ কোথা থেকে আসছে? কে বা কারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে? ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় যারা অংশগ্রহণ রেছিল; তাদের মধ্যে যারা ধরা পড়েছে; তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসী হচ্ছে মুফতি হান্নান; এই মুফতি হান্নানই গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বোমা পেতে রেখেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মুফতি হান্নান এমন একটি বোমা বানালো কিভাবে? কারণ সে আফগানিস্তানে যুদ্ধে গিয়েছিল; সে একজন তালেবান। সেখান থেকেই বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পায়। কিন্তু তালেবানদের প্রশিক্ষক কারা? দুনিয়ার সবাই জানে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তালেবানদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।

(তিন)

২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা, গোপালগঞ্জে বোমা পেতে রাখা, এবং রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর এবং চাপাইনবাবগঞ্জের ত্রাস বাংলা ভাই ওরফে সিদ্দিকুর রহমান এবং শায়খ আব্দুর রহমান এরা সবাই তালেবানি খামারে উৎপাদিত বিষ ফল। আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যোদ্ধারা নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের মতো করে শত্রু কিংবা টার্গেট ঠিক করে অপেক্ষাকৃত ছোট কলেবরে যুদ্ধ কিংবা বড় ধরনের গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। সূদুরপ্রসারী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এসব জঙ্গিরা প্রয়োজন মোতাবেক স্থানীয় কিছু বড় রাজনৈতিক দলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। একই ভাবে বড় রাজনৈতিক দলগুলিও যুদ্ধফেরত জঙ্গিদের ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কৌশল খুঁজতে থাকে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন, বাংলাদেশের জঙ্গিরা একসাথে সারা বাংলাদেশে (৬৪টি জেলায়) বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশব্যাপী একটি বিরাট মহড়া পরিচালনা করেছিল। উত্তরবঙ্গে বাংলাভাই সৃস্টি করে এক ধরনের তালেবানি বিপ্লব ঘটানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। সেই কর্মকাণ্ডরই একটি চূড়ান্ত অপারেশন ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যাচেষ্টা।       

লক্ষ্য করুন, গোপালগঞ্জের বোমা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, উত্তরবঙ্গের বাংলা ভাই, ৬৪ জেলায় বোমা হামলা সবই ঘটেছে চারদলীয় জোটের আমলে; চারদলীয় জোটে কারা ছিল? বিএনপি, জামায়াত ইসলামী এবং অন্যান্য আরো কিছু তথাকথিত ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। অন্য কোনো সরকারের আমলে কেন এমন ধরনের বড় বড় জঙ্গি ঘটনা ঘটলো না? কিংবা ঘটছে না? কারণ এত বড় পরিসরে হামলা করার জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার হয়; তখন কি তারা সরকারের সহযোগিতা পেয়েছিল? যদি না পায়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়া কেন বলেছিলেন? ‘বাংলাভাই বলে কিছু নেই, সবই মিডিয়ার সৃষ্টি’। ২১ আগস্টের পর কেন জজমিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল? পরবর্তীতে কেন আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেই বাংলাভাই এবং শায়খ আব্দুর রহমানকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল? 

(চার) 

প্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই ভাবছেন-এসব তো পুরানো কথা। নতুন করে আবার বলার কী আছে? নতুন করে বলার অবশ্যই অনেক কারণ আছে। আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ২০০১-০২ সালের দিকে; আর বাংলাদেশে উপরোক্ত ঘটনাগুলি ঘটেছিল তার দুই এক বছর পরই। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, নানামুখী আক্রমণের কারণে সিরিয়া এবং ইরাকে আইএসদের অবস্থা শোচনীয়; অনেক যোদ্ধাই এখন আইএস ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে। তারা পালিয়ে কোথায় যাচ্ছে? অধিকাংশই বিভিন্ন পথে নিজ নিজ দেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দ্বৈত নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গি আইএস এ যোগদান করেছে, এটা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফলাও করে প্রকাশ করেছে। সুতরাং আমাদের সজাগ হতে হবে। কারণ ঐসব জঙ্গিরা সেখান থেকে অস্ত্র-গোলা-বারুদ নিয়ে আসতে না পারলেও, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছে। যা আরো বেশি ভয়ংকর। যুদ্ধফেরত জঙ্গিদের জন্য আমাদের দেশের সমমনা রাজনৈতিক দল এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোও অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে। জঙ্গিদের অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ এক সময় বাংলাদেশে প্রয়োগ করবে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। এখন থেকেই যদি বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনীগুলো সক্রিয় না হয়, তাহলে এক সময় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সিরিয়া-ইরাক ফেরত জঙ্গিদের মোকাবেলা করা খুব সহজ হবে না। কারণ তাদেরকে অস্ত্র-গোলাবারুদ-টাকা-আশ্রয় দেবার জন্য পাকিস্তান দূতাবাস দুয়ার খুলে বসে আছে।      

(পাঁচ)

পাকিস্তান দুতাবাস এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানেও নানা কারণে নাক গলায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, পাকিস্তানি কূটনৈতিক ফারিনা আরশাদ এর কর্মকাণ্ড এবং ১৯৭১ সালে গণহত্যার দায় অস্বীকার করা কয়েকটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইতোপূর্বে ভারতে নানা রকম কুকর্মের দায়ে নয়াদিল্লী থেকে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানি কুটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। মনে রাখা দরকার, পাকিস্তান দিনে দিনে বাংলাদেশের চেয়ে ক্রমবর্ধমান হারে পিছিয়ে পড়ছে। তাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, মানব উন্নয়ন সূচক, স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস, কোনো কিছুতেই বাংলাদেশের ধারে কাছেও নেই। অথচ এরকম একটি পিছিয়ে পরা দেশ কি না আমাদের দেশে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে; জঙ্গিদের প্রতিপালন করছে; আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা, রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে। এসব তারা কিভাবে করছে? কারণ আমাদের দেশে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার, কুকর্ম করার ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আছে। এই ধরনের নিমকহারাম, বেঈমান ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল সব দেশেই কম-বেশি থাকে। তাই এসব বন্ধ করারও ব্যবস্থা আছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বেঈমানদের শায়েস্তা করার ব্যবস্থা করেছে, ইতোমধ্যেই কয়েকজন ফাঁসিতে ঝুলেছে। আর এখনো যারা বাগাড়ম্বর করছে; জার্মানীর হলোকাস্ট আইনের আদলে আইন প্রণয়ন করে তাদের মুখও বন্ধ করা যাবে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় দক্ষিণ ভিয়েতনামের যে সব ব্যক্তি-গোষ্ঠী ভিয়েতনামের সাথে বেঈমানী করে আমেরিকার পক্ষ নিয়েছিল; যুদ্ধের পর তাদেরকে ভিয়েতনাম থেকে বের করে দেয়া হয়েছে; মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। কম্বোডিয়ায় খেমারুজদের বিচার করা হয়েছে; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কেউ যাতে ইতিহাস নিয়ে কোনো রকম বিভ্রান্তি সৃস্টি করতে না পারে, তার জন্য জার্মানি হলোকাস্ট আইন তৈরি করেছে। হিটলার কিংবা নাৎসিদের পক্ষে তাই আজও কেউ কোনো কিছু উচ্চারণ করতে সাহস পায় না। তাই বাংলাদেশেও ঐ ধরনের আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি।     

(ছয়)  

আইন করে না হয় নিজ দেশের বেঈমানদের মুখ বন্ধ করা যাবে; কিন্তু পাকিস্তানিদের শায়েস্তা করা যাবে কিভাবে? এটা এখন প্রায় প্রমাণিত হতে যাচ্ছে, বাংলাদেশে শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেই বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা দূর করা যাবে না। কারণ পাকিস্তানি ভুত সরবরাহ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আইএসআই যদি বাংলাদেশে সক্রিয় থাকে তাহলে বাংলাদেশ থেকে কোনদিনই পাকিস্তানি ভুত তাড়ানো যাবে না। বরং একদিন তারেক রহমান, একদিন খালেদা জিয়া, আরেকদিন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরেকদিন জামায়াত ইসলামের নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতেই থাকবে। যে কোনো মূল্যেই হোক, এসব বন্ধ করা দরকার; আইএসআই’র লাগাম টেনে ধরতে হবে। কিন্তু কিভাবে? তার জন্যও ব্যবস্থা আছে। ঢাকায় বসে পাকিস্তান দূতাবাস বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যা কিছু করছে; তার কিছু অংশ ইসলামাবাদে বসে বাংলাদেশ দূতাবাস করতে পারলেই হবে। প্রশ্ন হচ্ছেঃ কিভাবে করা হবে? (১) পাকিস্তানের কয়েকটি বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমকে বাংলাদেশবান্ধব বানাতে হবে (২) পাকিস্তানের আরো কিছু লেখক, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চলচ্চিত্র নির্মাতাকে তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কারে ভূষিত করতে হবে (৩) অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, বিচারপতি, মাদ্রাসা শিক্ষক, কূটনীতিকদের এক্টিভিস্ট বানাতে হবে (৪) শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ছোট বড় জাতীয় এবং প্রাদেশিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং তাদেরকে বাংলাদেশে ভ্রমণের ব্যবস্থা করাতে হবে; প্রয়োজনে তাদের নির্বাচনের সময় সাহায্য করতে হবে। কিন্তু এসব কাজ কে বা কারা করবে? এসব কাজ ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের একটি চৌকষ গোয়েন্দা দল বাস্তবায়ন করবে। উপরোক্ত তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে; কিন্তু এই মুহূর্তে যদি উক্ত তালিকার অর্ধেকও বাস্তবায়ন করা যায়; তাহলেই বেগম খালেদা জিয়ার পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার পর পাকিস্তানেও একাধিক রাজনৈতিক নেতা এবং সিভিল সোসাইটির লোকেরা বাংলাদেশের পক্ষে ন্যায়-সঙ্গত বক্তব্য দিবে। পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকায় বাংলাদেশের পক্ষে সঠিক ইতিহাস সম্বলিত নিবন্ধ ছাপা হবে; পাকিস্তানী টেলিভিশনের টকশো’তে বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তানি সুশীলরা কথা বলবে; কেবলমাত্র তখনই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ চেক এন্ড ব্যালান্স গেইম খেলতে পারবে; নয়তো কখনই তাদের এই ঘৃণ্য অপরাজনীতি বন্ধ করা যাবে না।  

পুনশ্চঃ

(১) এই মডেল অনুসরণ করেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’, আমেরিকার ‘সিআইএ’ এবং ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ কাজ করে। (২) একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে তা যাতে টেকসই হয়, সেদিকেও নজর দিতে হয়। পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারত এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক অগ্রগতির কারণে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ এবং সামরিক বাহিনীর লোকেরা জনগণের তোপের মুখে পড়েছে; ভবিষ্যতে তাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। সুতরাং পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ এবং সামরিক বাহিনীর লোকেরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি ঠেকানোর ষড়যন্ত্র করবে এবং ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চাইবে। এটা পরিষ্কার। তাই পাকিস্তানের গোয়েন্দারা যদি অতীতের মতো বাংলাদেশে সক্রিয়ই থাকে, তাহলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা কখনই দূর হবে না, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত এবং সমুন্নত হতে দিবে না (৩) উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদ জানানোর সাহসিকতা দেখানো ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিগৃহীত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছে। একই ভাবে এ সকল কর্মকাণ্ড আরো বৃহৎ পরিসরে করতে হবে। পাকিস্তানে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা সুশীল সমাজের সদস্যদের সন্মান জানাতে হবে এবং তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।       

লেখক: কথাসাহিত্যিক, একাডেমিক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিংগাপুর।   

ইমেইলঃ
[email protected] 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।