তেল সমৃদ্ধ নাইজেরিয়া, ডায়মন্ডের খনি লাইবেরিয়া, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সুদান আর দুর্ভিক্ষপীড়িত সোমালিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ’অকার্যকর ’ রাষ্ট্রের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে পাকিস্তান। অন্য সব ’অকার্যকর’ রাষ্ট্রের অবস্হান আফ্রিকায়।
পাকিস্তানের ঘটনাপঞ্জীর দিকে যারা নজর রাখেন, তারা জানেন, পাকিস্তানে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের ‘লেবাস’ থাকলেও দেশ পরিচালনার নেপথ্যে আছে সামরিক গোয়েন্দা সংস্হা। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সরকারের উত্থান ও পতন। রাজনীতিবিদদের ‘রাজনৈতিক’ জন্ম ও মৃত্যু। সামরিক গোয়েন্দা সংস্হার স্নেহধন্যরা স্পর্শের সকল সীমার উর্ধ্বে। দেশের প্রতিটি ’ইন্স্টিটিউশনকে’ নিয়ন্ত্রণ করার অভিপ্রায়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্হা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করে দিয়েছে সুপরিকল্পতভাবে। ধর্ষণ, গুপ্ত কিংবা প্রকাশ্য হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি আজ পাকিস্তানে কোনো বৈসাদৃশ্য নয়। এসব ঘটনা-দুর্ঘটনা এখন মানুষের নিত্যকার দিন। অমোঘ নিয়তি। নিখাদ বাস্তবতা। আল্লাহর ঘর মসজিদে পর্যন্ত মানুষ নিরাপদ নয়। ধর্মের আবরণে মসজিদও আজ মৃত্যুউপত্যকা। আত্মঘাতী বোমার `শহীদী` লক্ষ্যস্হল। সবই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সন্ত্রাসের সংগে ড্রাগ যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়ই। পাকিস্তানে ড্রাগ পাওয়া যত সহজ, তত সহজ নয় মার্কিন মুল্লুকে।
দু’তিন বছর ধরে পাকিস্তানে নতুন এক ‘উপদ্রব’ চালু হয়েছে। মানুষের দারিদ্র্যের সুযোগে প্রভাবশালী মহল নেমেছেন কিডনি কেনাবেচায়। গোত্র প্রধানরা মর্জি হলে কিডনি দাতাকে সামান্য কিছু রুপিয়া দেন। তবে সচরাচর দরিদ্র মানুষদের অস্ত্রের মুখে অপরহণ করে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে কিডনি ‘ছিনতাই’ করা হয়। পাকিস্তানের কিডনি-বাণিজ্য এখন বিশ্ব জুড়ে ওপেন সিক্রেট। কিডনি ব্যবসার ভাগ পৌঁছে যায় রাষ্ট্রের সর্বোচ পর্যায় অব্দি।
একদার পাকিস্তানের সাবেক অংশ বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের প্রচুর মিল-অমিল রয়েছে। পাকিস্তানে ক্ষমতার ‘রাজনৈতিক মস্তানি’ সামরিক গোয়েন্দা সংস্হার হাতে। বাংলাদেশে এটির নিয়ন্ত্রক দু’তিনটি ‘সম্প্রসারিত’ পরিবার। ফার্স্ট কাজিন, সেকেন্ড কাজিন আর বেয়াইরাও এতে আজ একাট্টা মুনাফার লোভে। আজ ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টিদের কোমরের জোর কোনো মন্ত্রী মিনিস্টার বা পুলিশ কমিশনারের চেয়ে ফেলনা নয়। অপরাধীরা রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্রের জানি দোস্ত! ইয়াবা-অস্ত্র-চোরাচালান সবকিছুর নিয়ন্ত্রক এই পরিবারগুলো, যদিও কৌশলগত কারণে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক সাইনবোর্ডে থাকেন। বলা যায় না, কখন কার সুসময় আসে, কার দুঃসময়! রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দু’হাজার সালের দিকে চাটগাঁয়ে চালু হয় ‘শিশু অপরহন ও প্রটেকশন’-বাণিজ্য। ধনীরা-ব্যবসায়ীরা নিজেদের সন্তানের প্রটেকশনের জন্যে মাসিক চাঁদা গোনেন নিয়মিত। ফলে সেই শিশু ও তার পরিবার নিরাপদ। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তায় কেউ টুঁ শব্দটি করেন না। নীরবে ’সিন্ডিকেট’কে মাসোহারা দিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে চাটগাঁ যেন হয়ে ওঠে অবিকল পাকিস্তানের করাচী!
পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকা ও ওয়াজিরিস্তানের মতো লুট করে আনা `দাসদের` দিয়ে বাংলাদেশেও ব্রিক ফিল্ড চালু রাখা হয়। কেউ কিছু বলে না। সবাই জানেন দুর্বৃত্তদের খুঁটির জোর কোনো রাজনৈতিক আস্তানায়! ঈদের খানিকটা আগে সংবাদপত্রের সুবাদে জেনেছি, উত্তরবঙ্গে দরিদ্র গ্রামবাসীকে ফুসলিয়ে কিডনি কেনা হছে। কেনা যখন হছে, বিক্রি নিশ্চয় হবে। কিডনির মতো স্পর্শকাতর ও পচনশীল ‘পণ্য’পাচারের জন্যে লাগে পেশাদার ডাক্তারদের সক্রিয় সহায়তা, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রটেকশন। । কিডনি ব্যবসায়ীরা হাওয়া থেকে জুড়ে বসেন নি। আশ্চর্য্ লাগে, সরকার ও বিরোধীদলের নীরবতা! পাকিস্তানের মতোই এই কিডনি ব্যবসায়ীরাও কী তবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধন্য? এখনই সামাল না দেওয়া হলে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়বে এই অপরাধ হুজুগের বাংলাদেশে।
বাংলাদেশও কি তাহলে সেই একই পথে হাঁটছে? পাকিস্তানের মতো শীর্ষে পৌঁছানোর চেষ্টায়? জানিনা ‘পাকিস্তান কতদূর’?
ইমেলঃ [email protected]