ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দ্বন্দ্ব: আরেকটি মহারণ?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দ্বন্দ্ব: আরেকটি মহারণ? যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দ্বন্দ্ব

যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দ্বন্দ্ব: আরেকটি মহারণ?
তাসরুজ্জামান বাবু

প্রবাদ আছে, রাজায় রাজায় লড়াই হয় উলু খাগড়ার প্রাণান্ত। বর্তমানে হয়েছে সেই দশা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তর কোরিয়ার দুই পাগলাটে শাসক ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে পেশী প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। অথচ অস্বস্তিতে ভুগছে পুরো বিশ্ব। বিশেষত আমাদের মতো থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির জনগণ (সোজা বাংলায়: ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা) এইসব যুদ্ধাযুদ্ধিতে নিরতিশয় আশংকা বোধ করেন। কারণ, বেশিরভাগ ছোট-খাটো দেশই বৃহৎ রাষ্ট্রের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়েছে যুদ্ধ নামের এই শত্রু শত্রু খেলার মাধ্যমেই। আর তাই ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে না ডরিয়ে পারে? এর কারণ হলো, শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে ছোট দেশগুলোর যুদ্ধোত্তর আত্ম-ভবিষ্যৎ চিন্তা করে যুদ্ধে না জড়িয়ে উপায় থাকে না। এভাবেই দু-দু’টো বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। এবার কি তবে তিন নম্বরটি ঘটতে চলেছে? সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খান খান হওয়ার পর ঠাণ্ডা লড়াই কিছুটা স্তিমিত হয় বলে বিশ্ব কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসে। যেহেতু তখন সারা বিশ্বে একক শক্তিধর দেশ হিসেবে অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যেসব উৎকণ্ঠিত দেশ ন্যাম-এ যোগ দিয়েছিল তারা কিছুটা স্বস্তি পায় এই ভেবে যে, টানাটানির হাত থেকে বাঁচা গেলো কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আমেরিকার কাছে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে উত্তর কোরিয়া। উত্তাল বিশ্ব রাজনীতির পরিমণ্ডলে সমাজতান্ত্রিক ও মার্কবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ কমিউনিস্ট শাসিত এই দেশটি পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করে আমেরিকার মাথাব্যথা বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে গলায় গলায় পিরিত এখন রাশিয়া ও চীনের। অন্যদিকে, আমেরিকার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। আগের মতোই পুঁজিবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের এক ঠাণ্ডা লড়াই যেনো।

সম্প্রতি যে বিষয়টি উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে তা হলো, মার্কিন বিমানবাহী রণতরী যেই না কোরিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে আর অমনি আক্রমণ মোকাবিলায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে বসেছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিয়ল মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আমাদের শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা রয়েছে। আর মার্কিন হামলার মুখে আমরা নিশ্চিতভাবেই সে অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে থাকবো না। মার্কিন বাহিনী যেভাবে আক্রমণ করবে আমরা তার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত’। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়া মানসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসবে না।

বিষয়টা হাল্কাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তলে তলে জল অনেকদূর গড়িয়েছে। অলরেডি উত্তর কোরিয়া তাদের নাগরিকদের রাজধানী থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। ভাগ্য মন্দ হলে শীঘ্রই আরেকটি যুদ্ধের বাদ্য শুনতে পেতে পারে বিশ্ব।

আমেরিকা দাবি করেছে, জাতিসংঘের  নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত পাঁচ দফা পরমাণু বোমা পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও অব্যাহত রেখেছে দেশটি। আর এইসব বলতে না বলতেই আমেরিকা নিজেই আরেকটি অস্ত্র পরীক্ষা করে ফেললো। পারমানবিক বোমার বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটালো আফগানিস্তানে। নিহত হলো ৯০ জন। যদিও আমেরিকার দাবি সেটা আইএস এর ঘাঁটি ছিলো এবং আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলছেন, 'আফগান সরকারের সমন্বয়েই এ হামলা চালানো হয়েছে’। কিন্তু আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এ হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছেন এই বলে, 'এটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, বরং এর মাধ্যমে নতুন এবং বিপজ্জনক একটি অস্ত্র পরীক্ষার জন্য আফগানিস্তানকে খুবই অমানবিক এবং নির্মমভাবে ব্যবহার করা হয়েছে’। বাস্তবিকও তাই, আর কোনো যায়গা পেলো না আমেরিকা, চামে চামে আফগানিস্তানের মাটিতে ল্যাব টেস্টটা সেরে ফেললো! 'যায় যাবে তার যাবে’!  

এই সংকটের জন্য দায়ী মূলত উত্তর কোরিয়া এবং আমেরিকার  নিজস্ব সামরিক শক্তি নজিরবিহীনভাবে বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনমনীয় ও হঠকারী মনোভাব। কেউ ছেড়ে কথা বলতে রাজি নয়। সুর নরম করছে না কেউই।  

সংকট নিরসনের জন্য দ্বিমুখী প্রস্তাব দিয়েছে চীন। প্রথমত, উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব পক্ষকে  আলোচনার টেবিলে আসতে হবে। এর লক্ষ্য হবে, কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করে শান্তিচুক্তি সই, যা ৬০ বছরের পুরনো কোরিয়ান ওয়ার আর্মিস্টাইস অ্যাগ্রিমেন্টকে প্রতিস্থাপন করবে।
কথা হচ্ছে, আমেরিকা কিংবা উত্তর কোরিয়া চীনের এই প্রস্তাব শুনবে তো? শুনলে হয়তো এই যাত্রায় পার পাওয়া যাবে নয়তো পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক মেরুর পাল্টাপাল্টি আক্রমণে আরেকটি মহারণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যার পরিণাম সমগ্র বিশ্বকেই ভোগ করতে হবে।


লেখক: যন্ত্রপ্রকৌশলী, বাংলাদেশ রেলওয়ে

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।