ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘মোরা’ জয় করেছে তারুণ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
‘মোরা’ জয় করেছে তারুণ্য ‘মোরা’ জয় করেছে তারুণ্য

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ জয় করেছে তারুণ্যের শক্তি। উপকূলের মানুষের মধ্যে ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকার মতো সচেতনতা গড়ে তুলেছে অদম্য তারুণ্য। তাই প্রমাণিত হয়েছে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উপকূলীয় বেল্টে।

দুর্গত-দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যে সচেতনতা, তা তৈরিতে বড় অবদানটিই আমি মনে করি তরুণদের। তারা হোক রেড ক্রিসেন্ট, যুব রেড ক্রিসেন্ট, কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য কিংবা ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ছাত্র।

সবাই যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছিল প্রাণ বাঁচাতে তখনো বাধার পাহাড় ঠেলে এ তরুণরাই ‘মানুষ মানুষের জন্য’ গানটিকে ব্রত করে নিয়েছিলেন। অসহায় মানুষগুলোকে পৌঁছে দিচ্ছিলেন নিরাপদ ঠিকানায়। এর মধ্যে এমন কর্মীও ছিলেন যিনি বা যারা বড় চাকরিজীবী হয়েও ভ্যানগাড়ি টেনে মানুষ পারাপার করছিলেন।

আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ যেমন তলাবিহীন ঝুড়ি আর নেই, তেমনি নব্বইয়ের দশকের মতো পিছিয়েও নেই। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তার জন্য সিংহভাগই দায়ী ছিল সচেতনতার অভাব। তখন উপকূলে লাখো মানুষ মৃত্যুকে যেমন আলিঙ্গন করেছিলেন, তেমনি গবাদিপশু, ঘরবাড়ি, গাছপালা হারিয়েছে দেশ। যা ভাবলে এখনো উপকূলের মানুষের গা শিউরে ওঠে।

১৯৯১ থেকে ২০১৭ সালের আজ পর্যন্ত মধ্যে আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলায় যে অর্জন, সমৃদ্ধি, সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা তা তুলনা করাটা অন্যায্য। কারণ এ সূচকগুলো এখন দৃশ্যমান। আমরা ভয়ঙ্কর সেই সময় পেরিয়ে এসেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন ফেসবুক, টুইটার, ইমেইল, হোয়াটসআপ, ভাইবার, ইমো ইত্যাদির মাধ্যমে একে অপরের মাঝে তথ্য আদান প্রদান করছে দ্রুত। ফেসবুকে তাৎক্ষণিক ছবিসহ আপলোডের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করছে আমাদের তুর্কি তরুণ সমাজ। আমি দেখেছি, সোমবার ও মঙ্গলবার পুরো ফেসবুক ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ময়। সবাই সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য বলছে। অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। আশ্রয়প্রার্থীদের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতেও দেখেছি। এসব মানবতাবাদী কাজ করার জন্য অনেককে খুশিতে আত্মহারা হতেও দেখেছি। এর নামই লাল-সবুজের বাংলাদেশ!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েও অস্ট্রিয়া থেকে নিয়মিত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র খবর নিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে দেশ ও জনগণকে। জয় হয়েছে মানবতার।

এদেশে কোনো দুর্যোগ আসে তখন মানুষের মানবিকতা দেখে সব হতাশা চলে যায়। এদেশে যত সমস্যা থাক কিন্তু সম্ভাবনা অসীম। এ দেশের বড় সম্পদ তারুণ্য শক্তি। আমরা আমাদের তারুণ্য শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। যারা কাজ করে না, তারাই শুধু সমালোচনা করতে জানে। সব সমালোচনাকে উপেক্ষা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রেমিটেন্স বেড়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, শিশু-মাতৃমৃত্যুহার কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জীবন-মান বেড়েছে, সব কিছুতেই উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। তবুও কিছু মানুষ নেতিবাচক গান গেয়ে যায়। কিন্তু তরুণ সমাজ সব সমালোচনাকে উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল শোষণহীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আজ এই সময়ে এসে মনে হয়, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছেন। সামনের নতুন ভিশন নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে। আমাদের অধিক জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার সময় চলে এসেছে। আর গতানুগতিক শিক্ষা নয়, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ। এই তরুণ সমাজ একদিন বাংলাদেশের দায়িত্ব নেবে। এরাই বাংলাদেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। তারাই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে। যেভাবে করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল।

আসুন আমরা সবাই তারুণ্যের ভালো কাজগুলোকে উৎসাহিত করি। তারা এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে।

নিয়াজ মোরশেদ

 

নিয়াজ মোরশেদ নিরু: লেখক ও সংগঠক।


বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, ৩০ মে, ২০১৭

টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।