ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

যে হরতাল পার করল দেশ

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১১
যে হরতাল পার করল দেশ

বৃহস্পতিবারের হরতালের শুরুটা নিয়ে ব্যক্তিগত একটি উদ্বেগে কাটাতে হয়েছে। ছোটবোনটা হঠাৎ করে মাকে দেখতে দেশে গেছে।

ছোট দু’টো বাচ্চা তার সঙ্গে। সিডনি থেকে টিকিট কেনার সময়ও বিএনপি হরতাল ডাকেনি। এরপর থেকে বুধবার দেশের উদ্দেশে সিডনি ছাড়ার ব্যাপারে হরতালের হিসাব মাথায় রাখতে হবে।

রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে ঢাকা পৌঁছার পর আর তাদের বিশ্রাম দেয়া যায়নি। ভাড়া গাড়িতে ভোরে হরতাল শুরুর আগেই কুলাউড়ার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার নিরুদ্বেগ পরিবেশে বড় হওয়া ছোট দুটো বাচ্চার মায়ের জন্মভূমি দেখতে গিয়ে একদিনেই সেকি কাহিল অবস্থা! হরতালকেন্দ্রিক এমন ব্যক্তিগত উদ্বেগের বিষয়গুলোই হয়ত বিন্দু বিন্দু হয়ে অনেক বড় হয়। কিন্তু তাতে কার কী যায় আসে!

উল্টো এমন কিছু বললে বা লিখলে হরতাল আহবানকারীরা বেজার হন । সরকারের দালাল বলে কষে গাল দিতেও ভোলেন না। হরতাল এমনই এক নিয়তি বাংলাদেশের। এর ফাঁপড়ে যিনি পড়েন তিনি বা তারাই শুধু এর মাজেজা বুঝতে পারেন, হরতাল কী জিনিস! এতে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনও ক্ষতি হয় না। আল্লাহপাকের হুকুমে এদের অনেকেই নিজেদের সংসার চালানোর মতো এমন কিছু গায়েবি ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন যে, এক-দু’দিন কেন, মাসের পর মাস হরতাল চালালেও তাদের খোরাকির সমস্যা হবে না।
 
সমস্যা হয় গরিব মানুষের, আম-জনতার। অফিসযাত্রীদের। কারণ, হরতালের দিন তাদের খরচ বাড়ে। বিশেষ করে পরিবহন খরচ। বাসে বোমা মারতে পারে এই ভয়ে অনেকে টাকা একটু বেশি দিয়ে হলেও ভ্যান-রিকশায় করে অফিসে যাতায়াত করেন।

বেশি টাকা দিয়েও পথ নিরাপদ নয়। সারাপথ তাই তারা আয়াতুল কুরসি, কুলহু আল্লাহ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে চলেন। কারণ পথে পিকেটারদের পাল্লায় পড়লে দিগম্বর হবার ভয়ও আছে। এমনই অসহায়-জিম্মি দেশের মানুষজন! রাজনৈতিক দলের কর্মী-ক্যাডাদের তাদের এমন ভয় পেয়েই চলতে হয়। আর আমরা দাবি করি দেশটা নাকি গণতান্ত্রিক!

হরতাল অবশ্য বাংলাদেশের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছে একধরনের রাজনৈতিক বিনোদন ! যেমন দেশের অনেক মানুষের বিনোদন হচ্ছে রাজনীতি! বিদেশের নানাদেশের মানুষের হরেক বিনোদনের পাশাপাশি কাজও তেমন নেই। মাঠে-ঘাটে-হাটে চায়ের টেবিলে বসে রাজা-উজির মারেন।
 
আমরা মিডিয়ায় রাজনৈতিক কচকচানি যা লিখি বা বলি তা নিয়ে পারলে হাতাহাতি, মারামারিও করেন! আবার আমাদের দুইনেত্রীর মতো তাদের সমর্থকরাও যেহেতু সবসময় সরকারি দলে থাকতে চান, এক্সিডেন্টাল বিরোধীদলে তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা একটু কম উপভোগের সুযোগ পান। পরিচিত বন্ধুবান্ধব যারা সরকারি দলে আছেন তারা চোখের সামনে একা একা অনেককিছু লুটেপাটে খাচ্ছেন দেখে রাগে গরগর করেন। ‘আমাদের ফেলে একা একা খাচ্ছো! তা দিলাম একটা হরতাল! দেখো মজা’! হরতাল ডাকার পিছনে যেন এমন একটা নিয়তও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে।

যারা বিশেষ নীতি-আদর্শের রাজনীতি করেন তাদের অবশ্য হরতালকেন্দ্রিক চিন্তাটা ভিন্ন। তেমন নীতি আদর্শের রাজনৈতিক দল বা নেতা-কর্মী অবশ্য দেশে এখন হাতেগোনা। মূলধারার আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি যারা করেন, হালুয়া রুটির রাজনৈতিক স্বার্থচিন্তাই তাদের বেশি বা মূল।

আবার দেশের একদল রাজনীতিসচেতন মানুষও, যারা সরাসরি এসব দলের কোনটাই করেননা, তাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত। ক্ষমতাসীন সরকারের মধুচন্দ্রিমা যেতে না যেতেই হয়তো তাদের একটা বড় অংশ প্রায়শই সরকার-বিরোধী অবস্থান নিয়ে নেন। নির্বাচনে এদের অনেকে হয়ত বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরই ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু যে আশায় তারা ভোট দিয়েছিলেন সরকার সে পথে হাঁটছে না দেখে এরা মনের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
 
অভাবিত উচ্চ দ্রব্যমূল্য, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংকট, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, ছাত্রলীগের নামে একদল সরকারপন্থীর বল্গাহীন মস্তানি, লিমন ইস্যু, আবুল-শাজাহান খানের মতো কিছু চিহ্নিত মন্ত্রীর অগ্রহণযোগ্যতাসহ আরও কিছু বিষয় তাদের অবস্থান বদলে দিচ্ছে। এপক্ষের অনেকে বিভিন্ন সুযোগে বলার চেষ্টা করেন, দেশে যে স্বপ্নভঙ্গের বিশেষ একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা বিদেশে বসে আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। ধরে নেয়া যায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা না থাকলেও হরতাল বা যে কোনও সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে এ পক্ষেরও একধরনের সমর্থন আছে। এসবের প্রতিক্রিয়া কী হবে না হবে সেটি যেন পরে দেখার বিষয়! আগে সরকার একটু জব্দ তো হোক। এমন নিজের নাক কেটে হলেও যাত্রা ভঙ্গ করা যেন আমাদের সরকারবিরোধী রাজনীতির মূল দর্শন!

আরেক কারণে আমাদের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল পছন্দ করে । কারণ এতে তাদের খরচ কম পড়ে। এমনিতে একটি জনসভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, রোড মার্চ এমনকি সোনারগাঁও বা রূপসীবাংলার ইফতার পার্টি-প্রেসকনফারেন্সেও অনেক খরচ! ঢাকার পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভার লোক আনতে কোথায়, কী পরিমাণ খরচাপাতি লাগে তার বিভিন্ন ফিরিস্তি বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ায় ছাপা হয়েছে।

পল্টন ময়দানে জনসভার পর টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মারামারির ছবি তুলতেও ওঁৎ পেতে থাকেন একদল বেরসিক ফটো সাংবাদিক! এমনকি ড. কামালের গণফোরামের জনসভা করতেও বস্তিবাসীদের ট্রাকে আনা নেওয়া করাতে হয়। টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তি শুধু সেই খাস নিয়তেই গড়েছিলেন জেনারেল এরশাদ!

এসব হরেক ঝামেলার চাইতে অনেক কম খরচে হরতাল করে ফেলা যায়! মিডিয়া কভারেজও ভালো আসে। এর জন্য হরতালের আগের রাতে কিছু বাসে-গাড়িতে আগুন দিতে বা টায়ার জ্বালিয়ে ভীতি সৃষ্টির খরচইবা এমন কী। মানুষ তখন ভয়ে এমনিতে বেরোয় না। গাড়ি নামান না মালিকরা। গাড়ি নামালেও এমন অচল পুরনো গাড়ি নামান যে তা আগুনে পুড়লেও লাভ বেরোয় বেশি! আর হরতাল ডাকলেই অটোমেটিক হলিডে ঘোষণা হয়ে যায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে! আর পুলিশি অ্যাকশন, সরকারি দল মাঠে নামার ঘোষণা দিলেতো পোয়াবারো! অটোমেটিক সফল হয়ে যায় হরতাল! সফল মানে দেশের স্বাভাবিক চলাচলে বাধাসৃষ্টি করতে পারা! আমাদের বিরোধীদলগুলো অবিরাম শুধু এমন করেই যাচ্ছে! আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যেই বিরোধীদলে থাকুক না কেন!

এভাবেই শুধু এদের হাতে জিম্মি হচ্ছে, হয়ে আছে দেশ! এসব অবশ্য এখন স্বাধীনভাবে বলাও বিপদ। এদেশে পাকিস্তান আমল বা এরশাদের আমলে হরতালের বিশেষ একটি সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। সে সময় প্রেসিডেন্টসিয়াল সরকার ছিল দেশে। এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। তখন ধারণা ছিল ওই একটা ব্যক্তিকে কাবু করতে পারলেই বুঝি সে পড়ে যাবে! কিন্তু গণতান্ত্রিক কৌশল তার বা তাদের সঙ্গেই যায়, যারা গণতন্ত্রমনা। পাকিস্তানিদের হটাতে যুদ্ধ করতে হয়ছে। মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্ববেহায়া এরশাদকে নামাতে ৯ বছর সময় লেগেছে। প্রাণ দিতে হয়েছে নূর হোসেনের মতো অনেককে।

১৯৯১ সাল থেকে কিভাবে দেশে চলছে পার্লামেন্টারি শাসন ? পার্লামেন্ট সবদলকে নিয়ে কাজ করতে না পারলেও খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা তাদের মেয়াদকালীন একটা তালিম শিখিয়েছেন---- যে যত কথাই বলুক নির্ধারিত পাঁচবছরের একদিন আগেও ক্ষমতা ছাড়া হবে না। এক্ষেত্রে অবশ্য সবচেয়ে আপোষহীন ভূমিকাটি খালেদা জিয়ার! একারণে আওয়ামী লীগের আন্দোলনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে একটা ১৫ ফেব্রুয়ারির একদলীয় ইলেকশনও তিনি করেছিলেন। এরপর শেষেরবার নিজেদের কলাকৌশলমতো একটা ইলেকশন করার স্বপ্ন দেখাতে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়েছে! আম-ছালা দুটোই গেছে তার। ছেলেরা এখন বিদেশে দুর্নীতি করে অর্জিত টাকা পাচারের সাজা-অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশান্তরী! ঢাকার সেনানিবাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয় বিঘা জমির ওপর দখলে থাকা বাড়ি থেকেও তিনি উচ্ছেদ হয়েছেন।

শেখ হাসিনা এখনও এরশাদ-খালেদা জিয়ার মতো একদলীয় ইলেকশন করার অপবাদ গলায় পরেননি। এবার কী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তেমন একটি বিপদজ্জনক পথে তিনি সত্যি সত্যি হাঁটা দেবেন? জবাব দেবে ভবিষ্যতকাল! কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে এই দুইনেত্রী দেশের রাজনীতিতে যে ধারা তৈরি করেছেন, তাহলো তারা ইলেকশনে হারলে সংসদে যান না। কিন্তু বেতন ভাতা সব নেন। এরপর নিয়ত করেন প্রতিপক্ষ যাতে একদিনের জন্যেও শান্তিতে ক্ষমতায় থাকতে না পারে।
 
এর জন্যে নিজেদের অভিজ্ঞতায় তারা জানেন, পাঁচ বছরের একদিন আগেও যেহেতু সরকার ক্ষমতা ছাড়বে না, সেহেতু এই পাঁচ বছর সরকারকে চাপের মুখে রাখতে হবে। বাংলাদেশের এখনতক অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই পাঁচ বছর চাপে রেখে রেখে সেই বিরোধীদলই পরবর্তী ইলেকশন সুষ্ঠু হলে সেটি জিতে ক্ষমতায় যায়।

এবার অবশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর খালেদা জিয়ার দুই ছেলের সাজা-মামলা নিয়ে বিএনপি তথা বিরোধীদল তরফের চাপ বেশি। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শুধু দূর্নীতির মামলা না, শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার গ্রেনেড মামলাও দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের জন্য বন্দী হয়েছেন মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের সব শীর্ষ নেতা। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

এজন্য বিএনপি-জামায়াত দু’দলই মনে করছে সরকার যদি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকে তাহলে তারেকদের-নিজামীদের বিচার শেষ করে ফেলতে পারে! অতএব সোজা তাদের সিদ্ধান্ত, সরকার ফেলে দাও! কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো হরতাল-আন্দোলনে চ্যাম্পিয়ন একটি দল যেখানে একবার নয় পরপর দু’বার গোটা পাঁচবছর একেরপর এক হরতাল করেও খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা থেকে ফেলতে পারেনি, সেখানে বিএনপির চলতি সাইজের একটি দল কী তা পারবে?  খালেদা জিয়ার পরিবার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ নেতা দেশের মানুষের কাছে দুর্নীতির জন্যে চিহ্নিত, সঙ্গে আবার বাংলাদেশের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী একটি দল জামায়াতে ইসলামী। এদের মূল লক্ষ্য দ্রবমূল্য, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ --এসবের একটিওনা। আসল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে জামায়াত নেতাদের বাঁচানো।   ইমেজ সংকটে ভোগাদের আন্দোলনে একটা নির্বাচিত সরকার পড়ে যাবে তা কী করে ভাবেন খালেদা জিয়া? এখনতক তারা যতগুলো হরতাল করেছেন, এর দুটোই ছিল খালেদা জিয়ার বাড়ি বিষয়ক। বাংলাদেশে এমন হরতাল এর আগে কখনো হয়েছে কী?

হরতাল  নিয়ে বাংলাদেশের যে সংকটটি তাহলো গরিব, বিদেশি সাহায্যনির্ভর দেশটায় এমনিতেই কাজের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি,  দেশের ওয়ার্কিং ডে’ গুলোতেই ঠিকমতো কাজ হয় না, আট ঘন্টার অফিসে ঠিকমতো কাজ হয় না চার ঘন্টারও। সেদেশের প্রধান বিরোধীদল দেশের মানুষকে ঘোষণা দিয়ে একদিন কাজে যেতে বারণ করে!

দেশের কাজ যাতে সপ্তাহে তিনদিন বন্ধ রাখা যায়, সে চেষ্টায় বৃহস্পতি অথবা রবিবার দেখে হরতাল দেয়া হয়! বৃহস্পতিবারের হরতালে আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে থেকেছে!  কিন্তু নিজেরা হরতাল বিশারদ হয়েও জানেন না, এভাবে হরতাল প্রতিহত করা যায় না। উল্টো ভয় ছড়িয়ে হরতাল আরও সফল করে দেওয়া যায়!
 
দেশের মানুষের জন্যে হতাশার হচ্ছে এখন সরকারে থেকে আওয়ামী লীগ হরতালের বিরুদ্ধে বললেও, আগামীতে বিরোধীদলে গেলে আর তারা হরতাল করবে না --এমন ঘোষণা দিয়ে বলতে নারাজ! এ ব্যাপারে পুলিশমন্ত্রী সাহারা খাতুন একবার নিজে থেকে একটি ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন: আগামীতে বিরোধীদলে গেলে আওয়ামী লীগ হরতাল করবে না। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল তা নাকচ করে বলেছেন, সেটা নিছকই সাহারার ব্যক্তিগত বক্তব্য। দলের বক্তব্য নয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ আগামীতে বিরোধীদলে গেলেও এভাবে হরতাল চলবে!

তাহলে এমন হরতালের বিরোধিতার নামে লোক হাসানোর দরকার কী? আপনারা দু’দলইতো দেশের মা-বাপ। অর্থাৎ আজ একদল ক্ষমতায় গেলে আরেকদল বিরোধীদল, পরেরবার বিরোধীদল সরকারিদল। ক্ষমতায় গিয়ে প্রথম এক-দেড় বছর শুধু আগের সরকার সব শেষ করে ফেলেছে বলতে বলতে পার হয়! কিন্তু ওই শেষ করার বিষয় কতটা হরতালজনিত ক্ষতি, তা বলার মুরোদ তাদের থাকেনা। কারন এই ক্ষতির সঙ্গে তারাই সরাসরি জড়িত!

এ লেখা পড়ে কেউ আবার ভাববেন না যেন বলার চেষ্টা হচ্ছে হরতালই দেশের একমাত্র সর্বনাশের নাম! সর্বনাশ চুরি-দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার সহ আরও অনেক আছে। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ, দেশ-রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি, কাজের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানুষকে পরিচালিত-প্রভাবিত করার মতো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুরুতর ক্ষতির মাধ্যম এই হরতাল। হরতালের বিরুদ্ধে না’ বলুন জাতীয় কথাবার্তা অনেক হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রধান দুটি দলের রাজনৈতিক অসততার জন্য তা কামিয়াব হয়নি। এর পিছনে আমাদের দলবাজ পাবলিকেরও অনেক দোষ আছে।

এক সময় ভারতেও বনধ’ নামে হরতালের বেশ প্রচলন ছিল। পশ্চিমবঙ্গের বাম শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের মমতা দিদি যে কত হরতাল করেছেন, তার লেখাজোখা নেই! কিন্তু এরপর নেতারা যখন দেখলেন পাবলিক হরতাল পছন্দ করছে না, উল্টো যারা হরতাল করে তাদের ভোট কমে, তখন অটোমেটিক হরতালের বাতিক কমে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে বনধের বিরুদ্ধে এমন জনসচেতনতা তৈরিতে সেখানকার মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমাদের মিডিয়ার পক্ষেও তা সম্ভব। তা শুধু একটা নিয়ত ঠিক করতে হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির তাবেদারি যে সব মিডিয়ার কাজ, তাদের দিয়ে তা হবে না। রাজনৈতিক দলের তাবেদারি মিডিয়ার কাজ নয়। সব মিডিয়াকে একযোগে যে কথাটি বলতে হবে তাহলো, হরতালে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোন ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় দেশের। আমজনতার। কাজেই যারা হরতাল ডেকে মানুষের রুটি-রুজির সমস্যা করে, তাদের ভোট দেবেন না। ইলেকশন মেনিফেস্টোয় যারা হরতাল না করার অঙ্গীকার করবে না তাদের ভোট দেবেন না। বাংলাদেশের এসব নগদ নারায়ণলোভীদের শুধু মিডিয়া আর ভোটার মানুষেরাই সাইজ করতে পারে।
 
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময় ১৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।