ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

রোহিঙ্গা ইসুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা দু:খজনক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
রোহিঙ্গা ইসুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা দু:খজনক টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী। ছবি: বাংলানিউজ

বিশ্বের দেশে দেশে সাম্প্রতিক সময়ে উচ্ছেদের শিকার কমপক্ষে সাড়ে চার কোটি মানুষ। বাদশাহ থেকে ফকির হয়ে তারা এখন বিশ্বের পথে-প্রান্তরে গৃহহীন, উদ্বাস্তু, শরণার্থী নামে পরিচিত। উচ্ছেদের তাজা, সর্বশেষ ও চলমান উদাহরণ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

কখনও দেশ ভাগ, কখনোবা জাতিদাঙ্গা। কখনও উন্নয়ন প্রকল্পের চাপ, কখনও আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে ভিটেমাটি ছাড়া।

এভাবেই নানা কারণে স্বভূমিচ্যুত বহু মানুষ। শুধু এক দেশ থেকে অন্য দেশে নয়, নিজের রাজ্যেও ভিটেমাটি ছাড়া অনেকে। এভাবে উচ্ছেদ হতে হয়েছে গোটা বিশ্বে মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মানুষকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ভয়ানক শরণার্থী সমস্যা আর হয়নি।

‘দ্য গ্লোবাল রিফিউজি ক্রাইসিস: এ কনস্পিরেসি অব নেগলেক্ট’ শিরোনামের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে ‘আন্দামান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারাচ্ছে। আর তারা মরিয়া হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে’ বলে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যতক্ষণ না বিদ্যমান শরণার্থী সংকটকে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এর সমাধান হবে না। ’ এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমন্বিত সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উন্নীত করতে হবে বলেও বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।

প্রাপ্ত হিসাব মতে, ইরাক ও সিরিয়ায় গৃহহারা লক্ষাধিক মানুষ। ইউক্রেন ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসে সর্বহারার সংখ্যাও কম নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অংশে টানা সংঘর্ষ আর অর্থাভাবে নিঃস্ব হাজার হাজার মানুষ। ইসরায়েল-গাজার লড়াইয়ে গোটা শহর এখন ধ্বংসস্তূপ। কর্মহীন, স্বজনহীন, সহায় সম্বলহীন মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে শরণার্থী শিবিরগুলো ও আশেপাশের দেশগুলোতে।   লেবাননের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দখল করেছে। গত মার্চ মাসে তুরস্ক সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সিরিয়ার সঙ্গে যে দু’টি মূল সীমান্তরেখা রয়েছে তাও অবিলম্বে বন্ধ করবে তারা।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে স্রোতের মত রোহিঙ্গা শরণার্থী আসায় চরম মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। কোথাও ঠাঁই পাওয়া যাচ্ছে না। পাহাড়-অরণ্য পর্যন্ত দখল করে আশ্রয় নিয়েছে রিফিউজিরা।

বিশ্বব্যাপী প্রকটভাবে বিদ্যমান শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা ‘লজ্জাজনক’। এই অভিযোগ করেছে বহু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

তাদের ভাষ্য, বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ শরণার্থী ‘অসহনীয় পরিস্থিতিতে’ দিন কাটাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ‘সবচেয়ে সংকটজনক এ পরিস্থিতি’ থেকে উত্তরণে বিশ্বনেতৃত্বকে একযোগে কাজ করার দাবি জানানো হলেও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন না।

শরণার্থী সংকট একুশ শতকের অন্যতম চিহ্নিত চ্যালেঞ্জ। অথচ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা লজ্জাজনক। এ-সংক্রান্ত নীতি ঢেলে সাজানোসহ সমন্বিত বৈশ্বিক কৌশল প্রণয়ন করা দরকার।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার ‘লজ্জাজনক’ দিকটির পাশাপাশি ছিন্নমূল মানুষজনের সমস্যা সম্পর্কে আদৌ কি সজাগ সংবাদমাধ্যম? স্বভূমি থেকে বিতাড়িত মানুষজনের সমস্যা এবং এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রবন্ধ সংকলন। Forced Migration And Media Mirrors নামের বইটিতে নানা দিক থেকে সমস্যাটির আলোচনা করেছেন সতেরোজন প্রাবন্ধিক। গুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যম আদৌ কি সজাগ, ওয়াকিবহাল? সেই প্রশ্নও আলোচিত হয়েছে বইটিতে।
জাতিগত সংঘাত-সন্ত্রাস আর যুদ্ধের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এ মুহূর্তে সর্বহারা। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে সীমান্তের কাঁটাতারে আটকে পড়েছেন কেউ। কেউ আবার কোনও মতে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়ে দু’বেলার খাবার যোগাচ্ছেন। অনেকে যাত্রীবোঝাই নৌকোয় নতুন ঠিকানার খোঁজে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছেন। মিডিয়া এই মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র সব সময় তুলে ধরছে না।

বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে উদ্বাস্তু সমস্যার এই ভয়াবহ চেহারা দেখেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিডিয়ার পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত না বাড়ানো চরম দু:খজনক।

ড. মাহফুজ পারভেজ: কবি-গল্পকার-গবেষক। প্রফেসর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।