ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রত্যাখ্যাত হরতাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
প্রত্যাখ্যাত হরতাল হরতালে রাজধানীর মিরপুর। ছবি: জিএম মুজিবুর

শুধু আজকেই নয়, নিকট-অতীতের মতো অদূর ভবিষ্যতেও যে ব্যবহার-অযোগ্য রাজনৈতিক পন্থা হিসাবে হরতাল প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, এই বার্তাটি স্পষ্টভাবে পাওয়া গেল বাংলাদেশের সর্বত্র থেকে। হরতাল হয় নি। এখন হরতাল হয় না। মুখরিত রাজপথ, সচকিত এভিনিউ, জেগে ওঠা নগর-বন্দর-গ্রাম থেকে এই রাজনৈতিক সত্যটি অস্ফুটে জানিয়ে দিয়েছে কর্মচঞ্চল মানুষ। এই অভিজ্ঞতার শিক্ষা জানাচ্ছে নতুন, ইতিবাচক, গণসম্পৃক্ত ও সমৃদ্ধমুখী রাজনীতির আবাহন। সমঝোতা, সম্প্রীতি ও বহুমাত্রিকতার রাজনৈতিক দিগন্তই বাংলাদেশে সুস্পষ্টভাবে উন্মোচিত হয়েছে হরতালের প্রত্যাখ্যান ও পতনের মধ্য দিয়ে।

একটা সময় ছিল বাংলাদেশে, যখন ডাক দেওয়া হলেই হরতাল পরিপূর্ণভাবে পালিত হয়ে যেতো। জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে হরতালের সাফল্য এনে দিত জাতির রাজনৈতিক লড়াইয়ের বেদীমূলে।

এভাবেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গণশক্তির সামগ্রিক বিজয়কে মূর্ত করেছে বাংলাদেশের মানুষ। আরো পরে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধেও মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের নবযাত্রা আর একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়নের রূপরেখার সূচনা ঘটিয়েছে এদেশের সংগ্রামী মানুই। বাংলাদেশের মানুষই নির্মাণ করেছে ইতিবাচকতায় পূর্ণ নিজস্ব রাজনৈতিক গতিপথ ও প্রত্যাশা।

বাংলাদেশের উন্নয়নমুখী-ইতিবাচক মানুষ এখন স্বপ্ন দেখে ভালো থাকার, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে থাকার। পৃথিবীর আগুয়ান দেশগুলোর সঙ্গে নিত্য পাল্লা দিয়ে যে দেশ ও দেশের মানুষ জগত-সভায় তিলে তিলে যোগ্য আসন তৈরি করছে, সে মানুষকে আর পেছনে ফেরানো যাবে না। অগ্রগামী মানুষ কখনোই আর পেছনে ফেরে না। বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গন, কৃষিক্ষেত্র, নির্মাণ ও বিকাশমুখী ক্ষেত্রসমূহ, শিক্ষাঙ্গনসহ সকল অঙ্গন থেকেই সামনে এগিয়ে চলার যে দুর্বার ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে, রাজনীতির সময় এসেছে সে গণউচ্চারণকে আন্তরিকভাবে অনুধাবনের। জনতার অভিব্যক্তিকে ধারণ করে জনইচ্ছাকে আলিঙ্গন করাই মহৎ রাজনীতির কাজ। নেতিবাচকতার বদলে বাংলাদেশ এখন মহত্তম রাজনৈতিক অভিলাষকেই রূপায়িত করতে চায়। সমগ্র জনগোষ্ঠীকে নৈরাজ্য ও হঠকারিতার অন্ধ-প্রকোষ্ঠ থেকে উন্মুক্ত প্রগতির বিশালতম প্রান্তরে উপস্থাপিত করতে চায়। বাংলাদেশে এখন রাজনীতির অপর নাম সৃষ্টি, নির্মাণ, সাফল্য ও অর্জন।  

হরতালে মতিঝিল।  ছবি: শাকিল কোনো ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র স্বার্থ নয়, মানুষ এখন অখণ্ড সত্তা রূপে সমগ্রের কল্যাণ ও উন্নয়ন চায়। নতুন নীতি, দর্শন ও রাজনীতি চায়, যা তাকে অগ্রসর করবে বেঁচে থাকার সুন্দর প্রাঙ্গণের দিকে। জীবনকে করবে বহুমাত্রিক ও জ্যোতির্ময়। সমাজ ও জীবনের সকল ক্ষেত্রকে করবে ইতিবাচকতার আলোকে সমুজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধিতে ভরপুর। মানবজীবনের নানা অকল্যাণ ও ক্ষতিকর দিকগুলোকে তীব্র বেগে পদদলিত করে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ এখন দৃপ্ত পদাতিক হয়ে পৌঁছাতে চায় সোনালি বর্তমান ও হীরকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রান্ত সীমায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এসব গুণগত পালাবদল সাবেকি, পশ্চাৎমুখী, হিংসাত্মক রাজনীতির পক্ষে অনুধাবণ করা সম্ভব নয়। নয় বলেই জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেওয়া তাদের হরতাল বা অন্যান্য কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়ছে এবং জনসম্পৃক্ততা হারাচ্ছে। হিংসা, সন্ত্রাস, বলপ্রয়োগ, অগ্নি আর নৈরাজ্যের এহেন রাজনীতি থেকে ঘৃণা ভরে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে জনগণ বার বার ইতিবাচকতার প্রতি সমর্থন ও প্রত্যাশার জানান দিয়ে যে কথাটি বলতে চাচ্ছে, সে জনপ্রত্যাশাকে ঠিক ঠিক বুঝতে পারার মধ্যেই রয়েছে রাজনৈতিক সাফল্য। জনগণকে অনুধাবনের ব্যর্থতা নিয়ে যে রাজনীতি, সেটা যে আর গ্রহণযোগ্য নয়, সে বার্তাটিও জনগণ বার বার জানিয়ে দিয়েছে।

একইভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় শুধু হরতাল বা অন্যান্য নেতিবাচক কর্মসূচিরই পতন ঘটবে, তা নয়, মানুষের আকাঙ্খা ও অর্জনকে যে রাজনীতি ধারণ করতে ব্যর্থ হবে, সেই রাজনীতিরও পরাজয় হবে। জনগণ তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে চরম কঠোর ও সম্পূর্ণ নির্মোহ। মানুষ দেশপ্রেমিক ও জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষক। ব্যক্তি বা দল নয়, মানুষের সামনে সব সময়ই প্রধান গুরুত্বের দাবিদার হলো দেশ এবং দেশের মানুষ। মানুষ ও মানবতাবিরোধী রাজনীতি তাই কোনোভাবেই আপামর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন বা চেঞ্জ-এর ধারায় বাংলাদেশেও যে রাজনৈতিক চিন্তা, চেতনা, কর্মধারায় আমূল পরিবর্তন চলে এসেছে, তা আজ জ্বলন্ত রাজনৈতিক বাস্তবতা। স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির প্রতি জনতার আস্থা এখন জাতীয় ম্যান্ডেট। রক্ত, যন্ত্রণা, জ্বালা ও দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে ইতিবাচকতার পক্ষ অবলম্বনের যে উপলব্ধি মানুষ এখন সগৌরবে গ্রহণ করেছে, তা মানুষের  স্বোপার্জিত অর্জন। কোনও হরতাল-হঠকারিতা-নৈরাজ্যের কাছে গণমানুষ এই মহৎ অর্জনকে হারাতে দিতে পারে না। অশুভের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেই বাংলাদেশের মানুষ তার ইতিবাচক রাজনৈতিক অধিকারকে সংরক্ষণ করবে। পেছনে নয়, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই সামনের অবারিত সম্ভাবনার দিকে।    

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।