ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

বিশ্বায়নের হাওয়ায় বাংলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
বিশ্বায়নের হাওয়ায় বাংলা ভাষার ফেব্রুয়ারি আশার ফেব্রুয়ারি

বিশ্বায়ন শুধু যে পুরো পৃথিবীকে কাছে নিয়ে এসেছে, তা-ই নয়। বিশ্বায়ন তথ্য-প্রযুক্তির বৈপ্লবিক বিকাশের পথে সমগ্র জগৎকে নিবিড় ও যুক্ত করেছে। কান পাতলেই এখন বিশ্বায়নের হাওয়ায় হাওয়ায় বাংলা ভাষার রক্তস্নাত স্বর আর ব্যঞ্জন বর্ণগুলোতে গুঞ্জরিত হতে শোনা যায়।

সমকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুক আর টুইটারও হয়ে উঠছে দ্রুততম উপায়ে স্বদেশ অথবা বিদেশের বহু দূর-দূরান্তের সুহৃদ মহলের সঙ্গে সামাজিক আলাপচারিতার এক নির্ভরযোগ্য সংযোগ মাধ্যম। যারা পঞ্চাশ, ষাট অথবা সত্তরের দশকে  প্রবাসজীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়ে বিদেশবাসী হয়েছিলেন, তাদের পক্ষে  এমন উন্নত টেকনোলজির মাধ্যমে স্বদেশের সঙ্গে, নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে, মাতৃভাষার সঙ্গে যোগাযোগ সংরক্ষণ সম্ভবপর ছিল না।

তাই সন্তান সন্ততিদের নিয়ে নিজেরাও বিদেশি সংস্কৃতি এবং বিদেশি ভাষাকে গ্রহণ করতে তৎপর হয়েছিলেন বিশেষভাবে। তথ্য-প্রযুক্তি এখন তাদেরকে দিচ্ছে শেকড়ের সন্ধান।

বিশ্বায়ন আর তথ্য-প্রযুক্তি একদিকে যেমন সুযোগ বাড়িয়েছে, অন্যদিকে কিছু ভাবনার বিষয়ও সামনে নিয়ে এসেছে। সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্যেও সৃজনশীল ভাবনার দরকার আছে। ইন্টারনেট আসার আগেও এমনটি অনেকেই ভেবেছেন। যেমন, ইন্টারনেট অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই কোনও কোনও বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ দ্য ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড কালচারস অব সাউথ এশিয়া ফ্যাকাল্টিতে’ সংস্কৃত, উর্দু, তামিল, পাঞ্জাবি প্রভৃতি দক্ষিণ এশীয় ভাষাগুলোর পাশাপাশি বাংলা ভাষায় শিক্ষালাভের ব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল এবং এখনও সেটা রয়েছে ক্রমবর্ধিষ্ণু হারে।

বিদেশের এলিমেন্টারি ক্লাসগুলোর সিলেবাসে বাংলা বর্ণমালা, বাংলা শব্দ তালিকার বেসিক শব্দাবলি আর অতি প্রয়োজনীয় ব্যাকরণ বিষয়ক কোর্স সংযুক্ত করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। যারা ইন্টারমিডিয়েট অথবা আরও অ্যাডভান্সড ডিগ্রি অর্জন করতে উৎসুক, তাদের সিলেবাস কমপ্লিট করার জন্য রয়েছে উনিশ ও কুড়ি শতকের বাংলা ক্লাসিক সাহিত্যের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ের ওপরে বিভিন্ন গবেষণামূলক কোর্স। ক্লাসিক সাহিত্য রচয়িতাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণ, তারাশংকর, শরৎচন্দ্রসহ কিছু কবিসাহিত্যিক।

ইউরোপ, আমেরিকার আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলা ভাষা শিক্ষালাভে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের যে সীমিত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি সেসব প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য করা যায়, দুঃখের কথা হলো, তাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অবাঙালি। প্রবাসী বাঙালির দ্বিতীয় কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে পূর্বপুরুষদের ভাষার প্রতি অতীত কিংবা বর্তমানে সেভাবে কখনই সশ্রদ্ধ ঔৎসুক্য অথবা আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়নি, এমন নয়। তবে যে হারে সেটা হওয়া উচিত ছিল, সেটা হয়নি।

ইউরোপ-আমেরিকার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ দ্য ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড কালচারস অফ সাউথ এশিয়া ফ্যাকাল্টি’ রয়েছে, তারা বিশ্বখ্যাত। যেমন, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়া, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন (যুক্তরাষ্ট্র); ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যাংকুভার (কানাডা); ইউনিভার্সিট অব লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব কেম্ব্রিজ, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ-সোয়াস (যুক্তরাজ্য); জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াতেও ক্রমবর্ধমান হারে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সেন্টার হচ্ছে। কোথাও কোথাও বাংলাদেশ স্টাডিজ চালু হওয়ার কথাও জানা যাচ্ছে।

ফলে বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, নৃতত্ত্ব, ভাষা, সংস্কৃতিসহ সমুদয় বিষয়ই চর্চা ও গবেষণা হওয়ার সুযোগ ঘটেছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে ব্যক্তিগত ও সংস্থার মাধ্যমে তথ্য-যোগাযোগ ব্যবস্থার নানাবিধ সুযোগ সাইবার জগতে বাংলা সংক্রান্ত তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার সাজিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সব কিছুই হলেও সেখানে প্রবাসী বাংলাভাষীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বাড়ছে না। বাংলাভাষীদের অংশগ্রহণ ও সংযুক্তি যত বাড়বে বিশ্বায়নের দুনিয়ায় বাংলা তত বেশি প্রসারিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮

এমপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।