ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

নেতা-নেত্রীরা আমাদেরকে ‘ছাগল’ ভাবেন!

জুলকার নাইন, পাঠক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১১

এটা এখন আর মানতে কোন সমস্যাই নেই যে আমাদের নেতা-নেত্রীরা আমাদেরকে ‘ছাগল’ ভাবেন। তা নাহলে কেন তারা একের পর এক এমন অদ্ভুত ও কাল্পনিক তথ্য আমাদেরকে দেবেন।

একই দিন মহাধুমধামে বিশাল বিশাল জনসভা করলেন দুই নেত্রী। জনসভায় শেখ হাসিনা জোরগলায় বললেন বিশ্বব্যাংক যে প্রমাণ দিয়েছে তাতে আগের মন্ত্রীর দূর্ণীতির কথা বলা হয়েছে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী আপনি কেন পদ্মা সেতুর কাজ যোগাযোগমন্ত্রীর কাছ থেকে নিজের অধীনে নিতে বাধ্য হলেন? সেদিনই খালেদা জিয়া বললেন, নিজামী-মুজাহিদরা যুদ্ধাপরাধী নয়।

এমনই সব কথা নেতা-নেত্রীরা আমাদেরকে বলেন, আমরাও লাখে লাখে মিছিল করতে করতে গিয়ে তাদের কথা শুনি আর হাততালি দেই। তাদের সঙ্গে শত কিলোমিটার গিয়ে লং-মার্চ করি। আর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে নিদারুণ কষ্টে কোন রকমে জীবন যাপন করি।

বাংলাদেশের রাজণীতিতে যেকোন নেতারই সমালোচনা করা যায়। কিন্তু আমাদের দুই নেত্রীকে মোটেও সমালোচনা করা যায় না। কারন তারাই ভাগাভাগি করেই আমাদের শাসনকর্তা হন। তাদেরকে নির্বাচিত করার বাইরে আমাদের কোন সুযোগও নেই, আর নিশ্চিতভাবেই আমরা তা করতে চাই না। আমার বিশ্বাস আমার মতো শতকরা ৯৫ ভাগ জনগণই চান না দুই নেত্রীর সমালোচনা করতে বা দেখতেও যে কেউ তাদের সমালোচনা করছে। কিন্তু দিনের পর দিন দেখা সত্যগুলো কেন তারা আমাদেরকে অন্যভাবে বুঝাতে চাইছেন সেটাই তো এই ডিজিটাল বিশ্বের ‘ভাবি ডিজিটাল’ বাংলাদেশে বসে আমাদের প্রজন্মের জন্য মেনে নেয়া কষ্টকর।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকা জননেত্রী শেখ হাসিনা লাখো মানুষের সমাবেশে আমাদেরকে জানালেন পদ্মা সেতুর দূর্ণীতি ‘আবুল’ এর দূর্ণতির কারনে নয় ব্যা. হুদার দূর্ণীতির কারণে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তো জানেনই, আমাদের সামনে একাধিক মিডিয়া প্রতিবেদন আছে, বিশ্বব্যাংক বলেছে যে আমাদের এখনকার যোগাযোগমন্ত্রী ও তার প্রতিষ্ঠান বলেছে, কাজ পেলেই তাকে কমিশন দেয়ার জন্য এজেন্ট বানাতে হবে। মিডিয়ার প্রতিবেদন নিয়ে হয়তো প্রশ্ন তোলা হবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের লোকজনও সরাসরি ইন্টারভিঊ দিয়েছে এ ঘটনা সত্য। এটা এতটাই সত্য যে, জাইকা এডিবি তার ঋণও স্থগিত করেছে।

আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, আপনার কাছে নিশ্চয়ই কোন তথ্য প্রমাণ আছে, সেটা নিশ্চয়ই আপনি আমাদেরকে দেখাবেন। আমাদেরকে না হোক বিশ্ববাসীকে দেখান, আপনার ভাষায়ই তো, জোট সরকারের দূর্ণীতির কারনে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়। আর মাথা হেট করবেন না। দয়া করে জনসম্মুখে প্রমাণটা দিয়ে আমাদেরকে ভারমুক্ত করেন। আমরা আর বিশ্ববাসীর কাছে চোর থাকতে চাই না। আমরা জানি, মন্ত্রীরা একটু আধটু ওসব করেন, কারন তার এলাকার জনগণ হিসেবে আমাদের পিছনেও তার খরচ আছে সেটার জোগাড় করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বললেন আগের সরকারের দূর্ণীতির কারনে মাথা হেট হয়ে যায়। কিন্তু তারই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (চিকিৎসক থেকে রাষ্ট্রের এক নম্বর কূটনীতিক) বলছেন, পদ্মা দূর্ণীতির কারনে ভাবমূর্তি নষ্ঠ হওয়ার কোন কারনই নেই। হায়রে অভাগা জাতি আমরা নিজের সম্মানটাও বুঝলাম না। এজন্যই মনে হয় আমরা ছাগলের মতো ঘাস খাই । এই কূটনীতিক মন্ত্রী ওইদিনই বললেন, হিলারি ক্লিনটন গ্রামীন ব্যাংক ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নি। কিন্তু আমরা তো এখন ডিজিটাল এর পথে আছি, আমরা তো ইন্টারনেট বুঝি। মার্কিন সরকারের ওয়েবসাইট সার্চ করলেই দেখতে পারি। সেখানে ব্রিফিংয়ের হাসিরও বর্ণনা আছে। সেখানে তো উদ্বেগের কথা লেখা আছে। যাই হোক আমাদের নেতারা আমাদেরকে ছাগলই মনে করেন।

শেয়ারবাজার নিয়ে কি কি সব চলছে। আন্দোলন ধর্মঘট কত কিছুর পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত কমিটি হলো। কমিটি কয়েকজনের বিরুদ্ধে টাকা মেরে দেয়ার জুয়া খেলার প্রমানও দিল। কিন্তু তারাই এবার সরাসরি বাজারে বসে ইমামতি করছেন। দরবেশেরাই বলছেন বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এগুলোও চালান আমাদের নেতারাই। তারা এগুলোকে কিছুই মনে করছেন না। কারন আর কি হতে পারে নিশ্চয়ই আমরা ছাগল, একটু ভ্যা ভ্যা করেই থেমে যাবো।

বাজারে কিছুই কিনতে পারছি না। এত দাম কেনার আগেই চিন্তা করি যেন শেষ না হয়। হলেই আর কিনতে পারবো না। সেই দায়িত্ববান বানিজ্যমন্ত্রী সারাক্ষন বলছেন, বাজারে দাম ঠিকই আছে। বরং অন্যদেশের তুলনায় কম। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এমন কথা একাধিকবার বলেছেন। আমরা তো লোকলজ্জার ভয়ে ওএমএস’র লাইনে দাড়িয়ে চাল-ডাল-আটা নিতে পারছি না। তাহলে কেন ওএসএর’র দামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের তুলনা করেন। আর কি করা, কাঠাল পাতার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।

আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সারাদিন বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। তারা যেকোন কথা শুরুর আগে এটা একবার বলে নিয়ে পরের কথা শুরু করেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভালো তা তো আমরা সারাক্ষনই দেখতে পাচ্ছি। প্রতিদিন কয়েকজনের হত্যাকান্ডের কথা শুনতেছি, আবার নতুন বিষয় ‘গুম’ হওয়ার বিষয় শুনতে পাচ্ছি। আজব স্বদেশ। এমন কথা উচ্চারন করলেই, মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রী একসঙ্গে বলছেন, জোট আমলে ৫শ স্থানে বোমা ফুটেছে। তার চেয়ে তো ভালো। কিন্তু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তা ঠিক নয়, বোমায় মারা গেলেও লাশ পাওয়া যেত, সেটা দাফন করে অন্তত: কান্নাকাটি করার সুযোগ পাওয়া যেত। এখনতো গুম, হঠাৎ উধাও। এমন শতাধিক ঘটনার একটিরও হদিস পেলো না পুলিশ। পাবেন কিভাবে তারাই নাকি এর সঙ্গে জড়িত। যাই হোক, ব্যাপার না। আমার তো ছাগলই না হলে প্রতিদিন একবার করে কেন শুনবো আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।

বর্তমান রাজনীতিতে বিরোধী দল বিএনপি এর আগে কখনোই যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দেয়নি। আওয়ামীলীগের নেতারা অসংখ্যবার বলেছে বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করিনি। বিচার চাক বা না চাক বিএনপি যে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে জাতির প্রাণের দাবির বিরুদ্ধে নয় তাই ভাবতাম। যে যাই বলুক ভাবি নি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের দল যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় না। অন্তত বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের সহযোগিতা করবেন এমনটাই জনগন আশা করতো। লংমার্চের জনসভায় যখন খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের আটক অবস্থা নিয়ে কথা বললেন, তখন ভেবেছিলাম এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বলবেন, এদের বিচারে কেন দীর্ঘসূত্রিতা, তাড়াতাড়ি এদের বিচার করুন। প্রমান হলে ফাসি দিন। কিন্ত না শুনলাম এক ভিন্ন কথা, বার বার চ্যানেল বদলিয়ে শুনলাম। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় খালেদা জিয়া বললেন, নিজামী, মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধূরীরা যুদ্ধাপরাধী নয়।

মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী আপনাকে কিছুই বলার নেই, শুধু দয়া করে বলবেন কি, কারা যুদ্ধাপরাধী? নিশ্চয় বঙ্গবন্ধুর নাম বলবেন না।

[email protected]
লেখক: তরুন সাংবাদিক।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।