ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আমাদের ক্ষমা করবেন মওলানা

আদিত্য আরাফাত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১১
আমাদের ক্ষমা করবেন মওলানা

শুক্রবার রাত ১২টার দিকে একটি প্রাইভেট চ্যানেলের এক বড়ভাইকে (নিউজ এডিটর) ফোন দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর বললাম, ‘ভাই আপনাদের রাত ৮টা ও ১০টার সংবাদ দেখলাম...ভাষানীর ওপর কোনো নিউজ দেখলাম না...’ সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি রসিকতা করে বললেন, ‘বুঝলাম না, তুমি কি ন্যাপে যোগ দিলা না-কি!’ কিছুক্ষণ পর উনি বললেন, ‘নিউজ ভ্যালুতো বুঝো! ভাষানীর মৃত্যুবার্ষিকীর সংবাদ এতোটা নিউজ ভ্যালু দাবি করে না। না দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।

তাছাড়া ভাষানী বিএনপিরও কেউ না আওয়ামী লীগেরও কেউ না’।

এ হলো আমাদের মিডিয়ার এক সিনিয়র সাংবাদিকের মূল্যায়ন। অগ্রজ এ সাংবাদিকের ভাষানী সম্পর্কে মূল্যায়ন আমায় ভাবিয়ে তোলে। গণমাধ্যম যেখানে জাতিকে সঠিক ইতিহাস জানাবে সেখানে গণমাধ্যমে দ্বায়িত্বশীল পদে থাকা এমন ব্যক্তির কথা নিজের পেশাটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সংবাদ গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখেছি। প্রায় সব প্রাইভেট চ্যানেলের খবরই দেখা হয়েছে। না! মওলানা ভাষানীর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো চ্যানেলই মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানীর জীবনী নিয়ে স্পেশাল নিউজ করেনি। কয়েকটি চ্যানেলের সংবাদে দেখলাম স্পেশাল নিউজতো দুরে থাক স্বাধীনতার অন্যতম এ স্বপ্নদ্রষ্টার নাম পর্যন্ত বলেনি সংবাদে।

সময়ের হাত ধরে আমাদের দেশে এখন অনেক মিডিয়া হাউস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশাল বাজেটে এসেছে একাধিক চ্যানেল। কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে এ নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে চলছে প্রতিযোগিতা। কততো অনুষ্ঠান এসব চ্যানেলের। মধ্যরাতে দর্শকদের জাগিয়ে রাখতে লাইভ অনুষ্ঠানও হয়। সাজগোজ, রান্নাবান্নাসহ অনেক বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান হয় অথচ মজলুম জননেতা ভাষানীকে নিয়ে হয়নি কোনো টক শো কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠান। কোনো চ্যানেলেই মওলানাকে মূল্যায়ন করেনি। মজলুম এ জননেতাকে নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান দুরের কথা, সংবাদেও ছিলনা তার জীবনী নিয়ে কোনো স্পেশাল নিউজ।

টাঙ্গাইলে বিএনপি ভাষানীর ওপর এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও সব চ্যানেলে সেখানে ভাসানীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয়েছে, নির্দলীয়-নিরপে তত্ত্বাবধাযক সরকারের অধীনে ছাডা বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি।
বঙ্গবন্ধুর পর মওলানা ভাসানীর মতো কে আমাদের জীবনকে এভাবে প্রভাবিত করেছেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিধারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের দাবির প্রকাশ ঘটেছে, যিনি এ দেশে পাকিস্তানি দ্বিজাতিতত্ত্বের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ইতি ঘটিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির গোড়াপত্তন করেছেন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছিল যার হুলিয়া, যাঁর আহ্বানে গরিব মজলুম মানুষগুলো মেরুদণ্ড সোজা করে শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে মাঠে দাঁড়িয়েছে। সারাজীবন যিনি অধিকার বঞ্চিতদের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, বেঁচে থাকা ও কথা বলার স্বাধীনতার কথা বলেছেন অথচ স্বাধীন এ দেশে এখন তার মূল্যায়ন কই?

এসব চ্যানেল আমাদের ভাষানীকে স্মরণ না করলেও ভাষানী ছোট হয়ে যাবেন না। খাটো হবে না মওলানার অবদান। চ্যানেলগুলোকে স্বীকার করতে হবে, কোনোরকম প্রচার না করলেও কিন্তু ইতিহাসের মহানায়কেরা নিজেদের গুণেই ভাস্বর হয়ে থাকেন। মওলানা ভাসানীও তাঁর নিজ মহিমায় ভাস্বর। স্যালুট মওলানা! স্যালুট ভাষানী!

লেখক: সাংবাদিক
[email protected]

বাংলাদেশ সময় ০৭৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।