ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আব্দুর রাজ্জাককে মন্ত্রী করুন, প্লিজ!

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিংএডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১
আব্দুর রাজ্জাককে মন্ত্রী করুন, প্লিজ!

বেশ কিছুদিন আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের চিকিৎসা কিংবা শারীরিক অবস্থার কোনো আপডেট আমরা জানি না। সবশেষ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত লন্ডনের হাসপাতালে তাকে দেখতে যাওয়ার সূত্রে মুক্তিযুদ্ধের এ নেতার চিকিৎসার কিছু তথ্য প্রকাশ পায়।

সেই সময় বাংলানিউজ ওই নেতার যে ছবিটি ছাপে, তা দেখে অনেকে চোখের পানি সামাল দিতে পারেননি। আশা করা হয়েছিল, বর্ষীয়ান এ নেতার শারীরিক অবস্থা-চিকিৎসার বিষয়-আশয় নিয়ে নিয়মিত মেডিক্যাল বুলেটিন দেবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তা দলটি এখনও করেনি বা করছে না! মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের সংগঠনটির কাছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠকের জন্য এতটুকু সৌজন্য বা করণীয় আশা করাটা দোষের কী?
 
খবর বেরিয়েছে, বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থানরত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে তাড়াতাড়ি দেশে ফেরত আসতে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অবশেষে হয়তো ভাগ্যে মন্ত্রিত্বের শিকে ছিঁড়ছে আমাদের এই সিলেটি দাদার! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করছি, এই সুযোগে আব্দুর রাজ্জাককেও আবার মন্ত্রী করুন। এতে করে জীবনের এই সময়ে তার জন্য রাষ্ট্রের অনেক কিছু করার আইনগত ও সামাজিক দায়িত্ব সৃষ্টি হবে। যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়ার সুযোগ গড়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের এই নেতার। মন্ত্রিসভায় কাকে নেওয়া হবে না হবে এটি প্রধানমন্ত্রীর এক্তিয়ার। আমরা শুধু তার বিবেচনার জন্য অনুরোধটি রাখলাম। জীবনের শেষ মুহূর্তেও খালেদা জিয়ার করুণা পাননি আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে খালেদা জিয়ার নিষ্ঠুরতাকে অনুসরণ করবেন না।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পদত্যাগ গুঞ্জন অথবা গুজবকে কেন্দ্র করে শাসকদলের অন্দরমহলের কিছু তাপ-উত্তাপ ইদানিং বাইরে আসছে! দলের সাধারণ সম্পাদকের নাম ধরে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে পরাজিত শামীম ওসমানের একটি ধৃষ্ট কটু মন্তব্যের পর পদত্যাগের খবরটি আসে। দলের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে আসীন একজনকে এভাবে বলতে পারেন না নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতা শামীম ওসমান। এটি একটি দলের চেইন অব কমান্ডের বিষয়। এর জন্যে শামীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দেখে মনোঃক্ষুন্ন হতে পারেন সৈয়দ আশরাফুল। কিন্তু শেখ হাসিনার ‘স্নেহাস্পদের তথ্য’টি জেনেশুনে তিনি কী এ ব্যাপারে অভিমান করতে পারেন? আওয়ামী লীগ-বিএনপির সাধারণ সম্পাদক-মহাসচিবগিরি করতে কী করা যায় বা যায় না সে জ্ঞান কী বাইরের কাউকে সৈয়দ আশরাফুলকে দেওয়া মানায়?

অথবা ঢাকায় থাকা সত্ত্বেও পদত্যাগের খবরটির ব্যাপারে নিজে ‘সত্য না’ বলে বেশ দেরিতে কথা বলেছেন সৈয়দ আশরাফুল! তার এই দেরিকে কেন্দ্র করে দলের হাইকমান্ডে কী এর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন এক পরিস্থিতির? ওবায়দুল কাদেরকে সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে বিশেষ কিছু সাংগঠনিক দায়িত্ব। আওয়ামী লীগের মতো দলে সাধারণ সম্পাদক ঢাকায় থাকতে এ ধরনের দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়ার কথা নয়।

এমনিতে সৈয়দ আশরাফুলকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলা হয় পার্ট টাইমার! পরিবারকে সময় দিতে প্রায় লন্ডনে চলে যান। ঢাকায় থাকলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের অফিসে বসেন কম। আমাদের দেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে বরাবর সংগঠন গোছাতে দলের সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়। নিকট অতীতের ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। সৈয়দ আশরাফুলই সম্ভবত মন্ত্রণালয়কে কাজে লাগিয়ে সংগঠন গোছানোর চেষ্টা করেননি! অথবা ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের পুরো সংগঠনটি ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে ঢুকে পড়াতে তার আলাদা করে সংগঠন গোছানোর কিছু নেই?

অনেকের মতে আগামীতে ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর এর ‘ঠ্যালা’ বুঝবে আওয়ামী লীগ! সৈয়দ আশরাফুল অবশ্য একাধিকবার বলেছেন, তার নেতৃত্বের মন্ত্রণালয় আগে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকলেও এখন তা আর হচ্ছে না! কিন্তু যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব সিটি থেকে শুরু করে মফঃস্বলের সব পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় রাস্তাঘাট, টিআর, কাবিখা থেকে শুরু করে টাকার যত কিছু যে মন্ত্রণালয়ের অধীন, মন্ত্রী নিজে দুর্নীতি মুক্ত হতে পারেন, আর সবাইতো ফেরেশতা হয়ে যাননি বা নেই! আর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগতো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম বা রামকৃষ্ণ মিশনের মতো কোনো সেবা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও না। এ দল ক্ষমতায় এসেছে, আবার আসতে চায়। আবার আসতে পাবলিককে কাজ দেখাতে হবে, সংগঠন লাগবে। দলের নেত্রী এসবের প্রথম হিসাব চাইবেন সাধারণ সম্পাদকের কাছে। সৈয়দ আশরাফুলের কাছে কী সে সব হিসাব আছে না দলের কে কোথায় আছেন না আছেন তা তিনি জানেন? তা তিনি জানেন শেখ হাসিনা উপদেষ্টাদের দিয়ে সরকার আর গণভবন থেকে দল চালান বলে আলাদা বাড়তি কিছু তার জানার বা চেষ্টা করারও দরকার নেই? ওবায়দুল কাদেরকে কী আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসবে তৈরি করা হচ্ছে? এ প্রশ্নটির উত্তরও শেখ হাসিনার কাছে।
 
ফজলুল বারী: সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।