’৭১-এর এই দিনে প্রকাশিত সকল পত্রিকায় আমাদের ৫ জনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশটি সিঙ্গেল কলামে ছাপা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল ‘৫ ব্যক্তির প্রতি সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ সকাশে হাজির হওয়ার নির্দেশ।
মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে পাকিস্তান বহির্বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছিল পুরো এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতিকারী’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করে প্রচার করতো ‘তাদের নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে’। প্রকৃতপক্ষে ’৭১-এর ২৫ মার্চ পাকবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরুর পরপর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ফলে অখণ্ড পাকিস্তানের কফিনে যে শেষ পেরেকটি ঠোকা হয়েছিল,-’৭১-এর ১০ এপ্রিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অনুসারে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুক্তাঞ্চল বৈদ্যনাথতলাকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ‘মুজিবনগর’ ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই কফিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাধিস্থ করা হয়। সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নিয়মতান্ত্রিক এবং বৈপ্লবিক অভ্যুদয়। দেশের অভ্যন্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি নিষ্ঠুর গণহত্যার খলনায়ক জেনারেল টিক্কা খান ও সামরিক শাসকদের জন্য ছিল চরম আঘাত। এরকম আঘাতের পর জেনারেল টিক্কা খান আরো হিংস্র হয়ে ওঠে এবং আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক নির্দেশ জারি করে।
আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক ট্রাইব্যুনালের রায় ভারতের মাটিতে বসে শুনলাম এবং হাসলাম। কারণ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তখন এগিয়ে চলেছে। মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে ৭টি জেলার দায়িত্বে ছিলাম আমি। পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালি। এই অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর সদস্যদের দেরাদুনে প্রশিক্ষণের পর বিমানে করে দমদম বিমানবন্দর, এরপর ব্যারাকপুরে আমার যে ক্যাম্প ছিল সেখানে তারা অবস্থান করতো। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করাতাম। কতজনের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছি, তাদের অনেকের সাথে পরবর্তী জীবনে আর কোনোদিন দেখা হয়নি। ব্যারাকপুরে আমার ক্যাম্পেই মুজিববাহিনীর জন্য ভারতীয় সাহায্য আসতো। এই সাহায্য আমি মণি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাইয়ের কাছে পৌঁছাতাম। আমাদের সাথে সমন্বয় করতেন ভারত সরকারের একটি সংস্থার পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রী ফণীন্দ্র নাথ ব্যানার্জী (যিনি ‘নাথ বাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন)। তিনি আমাদের সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন। ’৬৯-এর অক্টোবরে লন্ডনে বঙ্গবন্ধু এই ‘নাথ বাবু’র সঙ্গে মিটিং করেছিলেন। ‘নাথ বাবু’ মুক্তিযুদ্ধে অক্লান্ত পরিশ্রম ও আমাদের অপরিসীম সাহায্য করেছেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এসে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানকালে তিনি আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁর অবদান স্মরণ করছি।
পাকিস্তান সামরিক শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রতি যে কী নিষ্ঠুর ছিল তা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এবং এই মামলার রায় থেকে উপলব্ধি করা যায়। আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। ভাবতে কতো ভালো লাগে জাতির জনকের নির্দেশিত পথেই আমরা প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, ‘তোমাদের জন্য আমি সব রেখে গেছি। যে নির্দেশ আমি দিয়েছি। সেই নির্দেশিত পথে তোমরা পরিচালিত হও। বন্ধু রাষ্ট্র ভারতে গেলে তোমরা সর্বাত্মক সাহায্য পাবে। ’ ভারতে গিয়ে চিত্তরঞ্জন সুতার (সূত্রধর) যে বাড়িতে অবস্থান করতেন অর্থাৎ ‘সানি ভিলা, ২১ নম্বর রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কোলকাতা’, সেই বাড়িতেই আমরা অবস্থান করেছি। সেখান থেকেই মুজিব বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের যুদ্ধ পরিচালনা করেছি। চিত্তরঞ্জন সুতার ছিলেন বামপন্থি নেতা। তিনি জীবনে বহুবার কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। ’৭০-এর নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগে যোগদান করে স্বরূপকাঠি থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিক ছিলেন এবং আমাদের সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন। তাঁর অমর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য খরচ হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ২১ হাজার টাকা। বাকি ৪ হাজার টাকা ইউনাইটেড ব্যাংকের ভোলা শাখায় জমা ছিল। পাকিস্তান সরকার তা বাজেয়াপ্ত করে। দেশ স্বাধীনের পর ফেরৎ পেয়েছিলাম। সেদিন অভিযুক্তদের মধ্যে ৪ জন ব্যক্তিই আজ প্রয়াত। জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমেদ উভয়েই ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সশস্ত্র বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের গুলিতে শহীদ হন। মুজিবনগর সরকারের তথ্য ও বেতার উপদেষ্টা আবদুল মান্নান-স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সরকারে স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন-কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। কবি-সাংবাদিক-শিল্পপতি হিসেবে সুপরিচিত ‘দি পিপল’ পত্রিকার সম্পাদক নিভৃতচারী সজ্জন মানুষ জনাব আবিদুর রহমান ইতোমধ্যে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। এখন বেঁচে আছি কেবল আমি। যে প্রশ্নটি আমায় নিয়তই তাড়া করে, সেদিন কেন আমাদের সাথে আবিদুর রহমানকেও পাকিস্তান সামরিক সরকার জড়িত করেছিল? আসলে সামরিক সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চেয়েছিল। কারণ আবিদুর রহমান সম্পাদিত ইংরেজি পত্রিকা ‘দি পিপল’ ছিল জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নির্ভীক কণ্ঠস্বর। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীতে অবস্থিত ‘দি পিপল’ পত্রিকার দপ্তরটি ’৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে গ্রেনেড ও ট্যাংক হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় পাকবাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর অফিসটির ধ্বংসস্তূপ থেকে পত্রিকাটির দু’জন কর্মীর পোড়া কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। কতো ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি। বিভীষিকাময় ২৫ মার্চ কালরাতে গ্রীন রোডে অবস্থিত ‘চন্দ্রশিলা’ নামক যে বাসায়-আমি এবং প্রয়াত শ্রদ্ধাভাজন নেতা আবদুর রাজ্জাক-থাকতাম, পাকবাহিনী তা ধ্বংস করে দেয়। সেখানে সংরক্ষিত ’৬৯-এর গণআন্দোলনের দুর্লভ ছবি, দেশি-বিদেশি খবরের কাগজ ও দলিলপত্রাদি ভস্মীভূত হয়।
আজ যখন পাকিস্তান সামরিক আদালতের যে নির্দেশের উপর স্মৃতিচারণ করছি, তখন মনে পড়ছে, যে বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম করেছি, যুদ্ধ করেছি, পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী যেখানে আমাদের অবর্তমানে ১৪ বছর সাজা দিয়েছে, সেই বাংলাদেশেও আমাকে অন্তত ৭ বার কারাগারে যেতে হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একনাগাড়ে ৩৩ মাস ময়মনসিংহ এবং কুষ্টিয়া কারাগারে বন্দী ছিলাম। ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী অবস্থায় আমাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল। ৩ মাস আমি সূর্যের আলো দেখিনি। এ সময় আবিদুর রহমান ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী ছিলেন। তাঁকে ২০ মাস কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। ’৮২-এর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর আমাদের এক কর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করলে সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম এবং আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করে সাভার থানায় আটকে রাখে। একই বছরে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাকে গ্রেফতার করে চোখ বেঁধে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে ৮ দিন, এরপর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ দিন রেখে সিলেট কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছিল। ’৮৪তে গ্রেফতার করে কুমিল্লা কারাগারে ৬ মাস বন্দী করে রেখেছিল। ’৮৭তে ভোলা থেকে আমাকে গ্রেফতার করে বরিশাল কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী রাখা হয়েছিল। ’৯৬তে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আমাকে গ্রেফতার করে রাজশাহী কারাগারে ফাঁসির আসামির মতো দিন কাটাতে হয়েছে। ২০০২-এ চিকিৎসা শেষে বিদেশ থেকে ফেরার পর গ্রেফতার করে প্রথমে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ১ রাত পরে কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসির আসামি এরশাদ শিকদারকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল সেই কক্ষে রেখে ১২ দিন পর কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জীবনে জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছি। সবচেয়ে দুঃখ লেগেছে, ২০০২-এ যখন কাশিমপুর কারাগার থেকে আমাকে কুষ্টিয়া কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, আরিচা ফেরিঘাটে একটি পতাকাবাহী গাড়ি দেখলাম; জানলাম স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ গাড়িতে করে যাচ্ছেন। ভাবলাম, যে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, সংগ্রাম করেছি, সেই দেশের মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-আমার হাতে হাতকড়া, আর স্বাধীনতাবিরোধী মুজাহিদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা! আবার, ২০০৭-এ ১/১১-এর মধ্যে আমাকে, আমার স্ত্রী ও মেয়েসহ দুর্নীতি মামলার আসামি করা হয়েছিল। এই দুঃখ রাখবো কোথায়? জীবনে এসব সহ্য করতে হয়েছে। যখন ’৮২তে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদকালে আমার চোখ ছিল বাঁধা! তখন ভাবছিলাম পাকিস্তান আমলেও সেই ’৬৯-এর ১৭ সেপ্টেম্বর আমরা যখন সামরিক আইন ভঙ্গ করেছিলাম, তখন ‘সামারি মিলিটারি কোর্টে’ আমাকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমার চোখ ছিল খোলা। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে? কর্নেল আকবর, আমি দেখতে পেয়েছি একজন কর্নেল আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। যে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখে ভাবতাম, একদিন বাংলার সন্তানেরাই হবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর প্রধান-সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, পাকিস্তান আমলে জিজ্ঞাসাবাদের সময় চোখ ছিল খোলা, আর স্বাধীন বাংলাদেশে জিজ্ঞাসাবাদের সময় চোখ ছিল বাঁধা। কোন কিছুতেই কোন দুঃখ নেই! কেননা, এই ক্ষুদ্র জীবনে এমন এক মহান নেতার সান্নিধ্য পেয়েছি যে, জীবন আমার ধন্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর সবকিছুই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে বীজ তিনি রোপণ করেন, তা বাস্তবায়নে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ’৪৮-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং পরিশেষে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। ’৭০-এর নির্বাচনের পরপরই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সামরিক শাসকগোষ্ঠী বিজয়ী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তখন থেকেই তিনি স্থির করেন রাজনৈতিক ঘটনাধারাকে এমনভাবে নিয়ে যাবেন যে, ওরা হবে আক্রমণকারী আর আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সারা বিশ্বের সমর্থন পাবেন। যাতে কোন পক্ষই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগ তুলতে না পারে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা। শ্রী চিত্তরঞ্জন সুতারকে বঙ্গবন্ধু ভারতে পাঠিয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জন সুতার বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ভারতে গিয়ে আমাদের জন্য সব ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানেই বঙ্গবন্ধু ক্ষান্ত হননি। সিরাজগঞ্জ থেকে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত সদস্য আমার প্রিয় বন্ধু ডা. আবু হেনাকে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ভারতে পাঠিয়েছিলেন। আবু হেনা যে পথে গিয়েছিলেন ও যে পথে ফিরে এসেছিলেন, ঠিক সেই পথেই ২৯ মার্চ কেরানিগঞ্জ থেকে দোহার-নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সারিয়াকান্দি-বগুড়া হয়ে ৪ এপ্রিল আমরা ভারতে পৌঁছাই। সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামান ও শেখ ফজলুল হক মণি। আর ডা. আবু হেনা ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক। মুক্তিযুদ্ধের ৯টি মাস আবু হেনা আমাদের সাথে থেকে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
মনে পড়ে, ১৭ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান তুলেছিলাম, ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’; ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’; ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’; ‘আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’; ‘আমার নেতা তোমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব’; ‘জয় বাংলা’। শত-সহস্র মুক্তিযোদ্ধা কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সমবেতভাবে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেছে মুজিবনগরের আম্রকানন। সেদিন আমার পরিবার-পরিজন জানতো না আমি কোথায় আছি, কিভাবে আছি বা আদৌ বেঁচে আছি কিনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের মহিমান্বিত সে-সব দিনের কথা ভাবলে গর্বে আজও বুক ভরে ওঠে।
লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এমজেএফ