অ্যাটাকইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স থিয়রিতে ছোটবেলায় হাতেনাতে ধরা খেলে আমি প্রথমে ‘খোদার কসম’ খেয়ে নিজের অন্যায়, অপরাধ ও কুকর্মকে ‘জায়েজের’ চেষ্টা চালাতাম। ব্যর্থ হলে নারীর চিরন্তন অস্ত্র কান্নার ইস্তেমালে দ্বিধাহীন মাততাম।
আজকাল স্বঘোষিত আল্লামা সাঈদীকে দেখি আমার বাল্য ভূমিকায় অভিনয়ে। সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে কিছু পেশ হওয়া মাত্র ’আল্লাহ’র আরশ’ কেঁপে ওঠার ধমকি দেয়। সাঈদীর কাতারে যুক্ত হয়েছে জাতীয় ‘বেয়াদপ’ সাকাচৌ। সাঈদীর ‘বাতচিতে’ ‘অসহায়’ ক্ষোভ থাকলেও উদ্ধতপনা অনুপস্হিত। সাকার কথাবার্তা কেবল উস্কানীমূলকই নয় বরং ইরিটেটিংও। দুনিয়ার সব কিছুকে অসম্মান করার মতো তাছিল্যপূর্ণ। এদের কথাবার্তায় মালুম হয় অপরাধের ‘চল্লিশ সাল বাদ’ বিচারের মুখোমূখি করাটই যেন বাংগালী জাতির ‘অপরাধ’!
জাতির স্মৃতিতে এখনো জ্বলজ্বল একাত্তরের দুঃসহ দিন। বিভিষীকাময় রাত। রাস্তার দু’ধারে কাকে-কুকুরের কামড়ানীর মনুষ্য মৃতদেহ। প্রাণের ভয়ে পলায়নরত নারী-বৃদ্ধ-শিশুর উদয়াস্তু উর্দ্ধশ্বাস নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা। রাতের সুমশান অন্ধকারে স্বাধীন বাংলা বেতারের ‘জল্লাদের দরবার’ শোনার বিপুল প্রতীক্ষা। বিবিসি- রেডিও মস্কো আর আকাশবাণীর ইথার তরংগে বারবার ঘুরে আসা। বাবা-মা’র আতংকিত মধ্যরাতঃ কখন দরোজার টোকা দেয় রাজাকার-আল বদর।
যুবতী কন্যারা বাড়ীর পেছনের বাশঁঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। বুটের শব্দেই লুকোয় হিমশীতল পানা পুকুরে। রাজাকার-আল বদরের পালা ধর্ষন শেষে পাকি বাহিনীর নারকীয়তায় মৃত বাংগালী নারীদের মৃতদেহ চাপা দিয়ে বাধ্য আমিন মোয়াজ্জিন আল্লাহর কাছে আকুল পানা চায় দুই চোখ ভিজিয়ে। থমথমে চারিদিকের নীরবতা ভেংগে চলে কেবল আর্মির দু’একটা জীপ। রাজাকার আল বদরের ‘শিকার সন্ধানী’ টহল। সব মিলিয়ে এটাই ছিলো বাংগালীর একাত্তর।
রাজাকার আল বদরদের বীভৎস অত্যাচারের খবরের জন্যে বেশীদূর যেতে হয়না। আল বদরদের মুদ্রিত মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম, বিবিসি, এপি’র সংবাদ ভাষ্যে- ষোল মিলিমিটারের ডকুমেন্টারিতে সবই আছে। প্রমানের জন্যে রায়ের বাজার বধ্যভূমি সহ দু’একটি বধ্যভূমি সফর আর একজন বীরাংগনার স্বাক্ষীই যথেষ্ট। কিন্তু মানবতা বিরোধীদের বিচারের নামে মাসের পর মাস পেরিয়ে চলে তদন্ত আর স্বাক্ষী প্রমানের তোড়জোড়। মধ্যিখানে যুদ্ধাপরাধীরা ধনে-মানে-আইনী সহায়তায় হৃষ্টপুষ্ঠ হয়। অনেকটা ওয়ান ইলেভেনের মতোই ব্যর্থতার পথে ধাবিত হয় এই বিচার। ওয়ান ইলেভেনের প্রাথমিক এ্জেন্ডা ব্যাপক জনসমর্থন পেলেও শেষাবধি খাকীরা’ সব গুলিয়ে ফেলেছিলেন। রাঘব বোয়াল ‘ডাকাত’দের ধরতে গিয়ে ঘরে শূন্য মদের বোতল, দুটি বিলিফের ঢেউ টিন আত্মসাতের মামলা ঠুকেছেন। ফলে মূল অভিযোগগুলো শেষাবধি ‘খেলো’ ঠেকে। যুদ্ধাপরাধীদের মানবতার বিরুদ্ধে ঘটানো অপরাধের ’বিচার ‘জাষ্টিস ডিলেইড মিনস জাষ্টিস ডিনাইড’কে সত্য প্রমাণকরে।
বর্তমান সরকার বারবার হুংকার দিয়ে জানাচ্ছেন, এই মেয়াদেই এদের বিচার হবে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে দীর্ঘায়িত এই বিচারের বিপক্ষে অবস্হান নিচ্ছেন ‘মুক্তিযোদ্ধাদের’ দল বিএনপি। ঈমান বিক্রিতে লাইন দিচ্ছেন ‘খ্যাতনামা’ বীর বিক্রম-বীর উত্তমেরা। সাকাচৌ’দের উদ্ধত কথাবার্তায় মালুম হয় তারা ‘রাজনৈতিকভাবে’ অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। অর্থ-বিত্ত আর আইনী পৃষ্ঠপোষকতায় (ব্যারিস্টার-উকিলদের) সাকা-সাঈদীরা অনেক আত্মবিশ্বাসী। তাদের কথাবার্তার সরকার-আদালত কতটুকু অপমানিত বোধ করেন জানিনা, জানি জনগণ অপমানিত-অসম্মান্নিত বোধ করেন।
একাত্তরের মানবতা বিরোধী হত্যা-ধর্ষন ও অত্যাচার-অপরাধ কী আন্তর্জাতিক আইনের মাপ কাঠিতে সংগঠিত হয়েছিলো। পাকিদের ঘৃণ্য স্হানীয় দোসররা কেন আন্তর্জাতিক মানের বিচার পাবে? তারাতো স্হানীয়। তাদের সাথে আন্তর্জাতিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। পাকি হানাদারদের বিচার জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মান ও পরিপ্রপ্রেক্ষিতেহতে পারে কিন্তু দেইল্যা রাজাকার আর খুনী খোকইন্যার(সাকচৌ) বিচার কেনো আন্তর্জাতিক মানে হতে হবে? কোন গুনে? তাদের বিচারতো হওয়া উচিত পিরোজপুর আর রাউজানের প্রচলিত গ্রাম্য বিচারের মানদন্ডে।
সংবাদপত্রের পাতায় এই দুই জোকারের কথাবার্তা পড়ে হুশ পাই না। মনে হয় রাষ্ট্রীয় রিসোর্সের অপচয়। ব্যাটাদের ঢাকা স্টেডিয়ামে দাঁড় করিয়ে দিনে দিনে বিচার শেষে সাজা শুনিয়ে দিলে কী অন্যায় হয়? অবশ্য তার আগে ওদের কিছুক্ষণের জন্যে পাবলিকের রুদ্ধরোষেরসামনে ছেড়ে দিলে তাদের পাপের কিছুটা পায়শ্চিত হতো? ঠিক একাত্তরের রাজাকার আল বদর ক্যাম্পের টর্চারের মত?
ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১১