আওয়ামীদের মুখ ও মুখোশ দুটি। বিরোধী দলে থাকলে আওয়ামীদের আচার-ব্যবহার হয় অন্তরঙ্গ ও আন্তরিক।
জাতির জনকের রাজনৈতিক আদর্শে নিবেদিত রাজপথের লড়াকু আওয়ামী সৈনিক মরহুম আবদুর রাজ্জাক বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার সাফারি-গণতান্ত্রিক সেনাশাসনের রাজনৈতিক টালটামালের সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেশে ডেকে এনেছিলেন; পতিত আওয়ামী-মনোবল চাঙ্গা করার রাজনৈতিক সততায়।
প্রিয় নেতার কন্যার হাতে দল ও রাজনীতির দায়িত্ব সঁপে দিয়ে রাজপথ থেকে উৎখাত হওয়া আওয়ামী রাজনীতিকে পুনরায় রাজপথ ও জনগণের সাথে একাত্ম করে রাজনীতির মালা গাঁথার সুযোগ এনে দেওয়ার মূল কারিগর ছিলেন রাজ্জাক। ‘পরবর্তীর পরিবর্তিত পরিস্হিতির পরিপ্রেক্ষিতে’ বংগবন্ধুর স্নেহভাজন প্রিয় রাজনৈতিক সহচর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন বাকশালের পক্ষে রায় দিয়ে জানান দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের মতো সুবিশাল ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ের’ ক্ষমতাশালী সাধারণ সম্পাদক থাকার চেয়ে রাজনৈতিক বিশ্বাসের ছোট্ট ছাউনি বাকশাল অনেক সম্মানের। আদর্শের।
আবদুর রাজ্জাকের মতো দক্ষ ও সফল কোনো সাধারণ সম্পাদক কোনো রাজনৈতিক দলের নসিবে জোটেনি। কী সাংগঠনিক দক্ষতায়, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সাথে নিত্য যোগাযোগ আর দলীয় প্রবীণ ও বিজ্ঞ নেতৃত্বের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনই ছিলো রাজ্জাকের রাজনৈতিক ক্যারিশমা। আমৃত্যু কোনো রাজনৈতিক সহকর্মী, নেতা ও কর্মী কেউই রাজ্জাককে পরিত্যাগ করেননি। রাজ্জাককে পরিত্যাগ করেছিলো কেবল রাজনৈতিক কমিটমেন্টহীন, জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বুঝতে অক্ষম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আবদুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধু কন্যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আবারো আওয়ামী রাজনীতিতে ফিরেছিলেন কিন্তু রাজনীতির ‘রাজনৈতিক ম্যারপ্যাঁচে’ বরাবরই অনুল্লেখ্য নেতৃত্ব থাকাকেই পছন্দে করেছিলেন।
ছিয়ানব্বুইয়ের ‘আওয়ামীদের’ মিরাকল’ ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যের বড় একজন ছুতোর ছিলেন রাজ্জাক। মন্ত্রিত্বও মিলেছিলো। টানা পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বেও রাজ্জাকের ব্যক্তিগত সততায় সামান্যতম আঁচড় পড়েনি। সৎ আওয়ামী নেতৃত্বে উজ্জ্বল উপমা হয়েই নেতা-কর্মীদের কাছে মর্যাদাবান হতে পেরেছিলেন তিনি। ওয়ান ইলেভেন-উত্তর ক্ষমতাসীন আওয়ামী রাজনীতিতে রাজ্জাক (রা) দল বেঁধে উপেক্ষিত হয়েছিলেন। ‘সিজন্যাল বার্ড’রা’ রাজ্জাকদের মতো নিবেদিত ‘বুদ্ধিহীন’ রাজনৈতিক ‘পিলারগুলোর’ গোড়াকর্তন আওয়ামী রাজনীতিকে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে দুর্বল করেছে। একে একে গলা কাটার উপেক্ষায় পড়েছেন আমু, তোফায়েল, মান্না, সুলতান মনসুর, মুকুল বোসের মতো আওয়ামী রাজনীতির মূল কারিগরেরা। রাজনীতির চর্চা ছেড়ে আওয়ামীরা মেতেছেন ক্ষমতাসীন হবার ও থাকার ‘মূর্তিপূজায়’। রাজনীতিবিদের চেয়ে রাজনৈতিক চাঁদাবাজ, সুবিধাবাদী, চাটুকার, সত্য উচ্চারণে ভীত একদল মোসাহেবের কদর দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক, জনগণের সুখ-দুঃখের সাথে সম্পর্কিত আওয়ামী লীগ। রাজ্জাকের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চ্চা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষমতার মায়াবী হানিমুনে থাকতে পছন্দ নব্য আওয়ামীরা বেশ ‘কুশলেই’ আছেন। প্রিয় দেশবাসী, আপনারা কেমন আছেন?
সদা হাসির আবুলের উপমা এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। জনরোষ ও গণদাবিতে মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর বদলে আবুলের ললাটে বারবার জোটে প্রমোশন। দেশ ও জাতির সম্মান খোয়ানোতে ‘অভিজ্ঞ’ এক আবুলই যথেষ্ট আওয়ামী সাফল্যের ঘনসর দুধে লেবুর ফোটাঁ ঢালতে। রাজনীতির সেবক রাজ্জাক(দের) যখন মৃত্যু হয় প্রবাসের নিঃসঙ্গ একাকীত্বে তখন ক্ষমতাসীন আবুলের ক্ষমতা ও দাপটের বিস্তৃতি ঘটে বিনা অজুহাতে, বিনা ঘোষণায়।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিশূন্য নেতৃত্বের বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগই। মাঝখানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি সাধারণ মানুষ হারাচ্ছে নিজ বিশ্বাস ও চেতনার রাজনৈতিক আশ্রয়। ক্ষমতাসীন হওয়াই রাজনৈতিক চর্চার একমাত্র মঞ্জিলে মকসুদ নয়।
রাজ্জাক-আবুলের দুই গ ল্প হতে আমরা কী শিক্ষা নিলাম? দল করিও, তবে রাজনীতি করিও না। রাজনৈতিক নিবেদন রাখিও না। রাজনৈতিক বিশ্বাসতো এখন অলীক এক রূপকথা। কোথায় যাচ্ছি আমরা?
ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১০৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১১