ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যক্রমের গুরুত্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২০
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যক্রমের গুরুত্ব

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা অগ্রগামী সৈনিক, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারাই আছেন রোগীর পাশে। বিভিন্ন দেশে করোনা ঝুঁকির মধ্যে চিকিৎসা দিয়ে প্রশংসিতও হচ্ছেন তারা। এরপরও গুটিকয়েক স্বাস্থ্যকর্মীর দায়িত্বে অবহেলা এবং ঢালাওভাবে এই পেশার মানুষ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পুরো স্বাস্থ্যখাত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা ভাইরাসটিকে ফিরিয়ে দিতে পারবো। তবে রোগটির চেয়েও বিপজ্জনক হলো নেতিবাচক মনোভাব পোষণ।

 

এ অবস্থায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্সসহ যেসব স্বাস্থ্যকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এ সময়ে যারা কাজ না করে নিজেদের সুরক্ষার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের প্রতি তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।  

২০১৫ সালের সরকারি স্বাস্থ্য বুলেটিনের হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৪টি জেলায় ৪০-৬০ভাগ পর্যন্ত চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতিসহ আরও কিছু জিনিসের ঘাটতি রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে তা ফুটে উঠেছে। সরকারের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিতও হয়েছে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। বেড়েছে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের হার।  

বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সরকারিভাবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও এখন রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১৫ হাজার হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার গত ১০ বছরে ৭৪ ভাগ কমে গেছে। একইসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে পোলিও এবং ধনুষ্টংকারমুক্ত ঘোষণা করেছে। নতুন ওষুধ নীতি প্রণয়নের ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৪৫ দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে।  

করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় বাংলাদেশের সরকারি চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি শুরু থেকে দেখছি, সরকারি চিকিৎসকরা কোনো গাফিলতি করেননি। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তারা এগিয়ে এসেছেন। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি থাকলেও জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন। আমি মনে করি তারা বড় অবদান রেখেছেন’।  

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, আপনারা সামনে থেকে সেই যুদ্ধ করে চলেছেন। সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী যারা কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে চিকিৎসাসেবা দিতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন, তাদের তালিকা করার জন্য এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। উৎসাহের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ সম্মানীও দিতে চাই। সে জন্যই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সরকারি পদমর্যাদাভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার বীমা করে দেওয়া হবে। আর কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এই বীমার অঙ্ক হয়ে যাবে পাঁচগুণ’।  

তিনি আরও বলেছেন, করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার প্রয়োজন আছে। কোভিড-১৯ রোগ নিয়ে ভয় থাকতে পারে। কিন্তু একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব থাকে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার। আর তাদের সুরক্ষার জন্য সবকিছু দিয়ে যাচ্ছি। দেশে পিপিই তৈরি করছি, বিদেশ থেকে আনছি। একজন রোগী এলে তার চিকিৎসা করতে হবে। তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। অ্যাপ্রোন পরে নেন, মুখে মাস্ক লাগান, হাতে গ্লাভস দেন, অথবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, হাত ধুয়ে রোগী দেখেন। রোগী কেন ফেরত যাবে? 

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর আমরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিশেষ কর্মযজ্ঞ দেখেছি সারাদেশে। সিএমপি’র উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ফ্রি বাস সার্ভিস। এছাড়া ডিএমপি, কেএমপিও নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরা জনসমাগম রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ত্রাণ সহায়তা দেওয়া ও প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাস প্রকোপের কারণে ফোনে রোগীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চালু হওয়া টেলিমেডিসিন সেবায় চিকিৎসকদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ পাওয়ার পর জড়িতদের সতর্ক বার্তা দিয়েছেন পুলিশ।  

করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে নিজের আগের চিকিৎসক পেশায় ফিরেছেন আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে নয়। প্রতি সপ্তাহে তিনি এক শিফটে করোনা রোগীদের সেবা দেবেন। এছাড়া সুন্দরী প্রতিযোগিতার মুকুট খুলে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে সরাসরি যুদ্ধে নামছেন ২০১৯ সালের মিস ইংল্যান্ড ভাষা মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন পেশায় যুক্ত আছে চিকিৎসকরা।  

করোনা মোকাবিলায় অনেকে যখন ফিরে যাচ্ছেন তাদের পুরনো কাজের জায়গায়, সেখানে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রিধারী বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে এসব দৃষ্টান্ত অনুকরণীয় হতে পারে। সর্বোপরি কিছু মানুষের অপেশাদার মনোভাবের জন্য চিকিৎসা পেশায় যারা দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন- তাদের সমালোচনা করাও নৈতিকতায় পড়ে না। এই কঠিন সময়ে আমাদের উচিৎ, তাদের উৎসাহ দেওয়া। সবকিছু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা। কারণ, তাদের মনোবল ভেঙ্গে গেলে, তা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। বলা যায়, এখন এক খারাপ সময় অতিক্রম করছে সারা বিশ্বের মানুষ।  

সমাজের সব পেশার মানুষই করোনা মোকাবিলায় কাজ করছে। কিন্তু এদের মধ্যে সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যাংকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেশি ঝুঁকিতে। এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, উদ্যোক্তা, বেসরকারি শিল্প-কলকারখানা মালিককে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বউদ্যোগে ভূমিকা রাখতে হবে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২০ 
টিসি/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।