‘মানুষের সমস্ত প্রয়োজন দুরূহ করিয়া দিয়া ঈশ্বর মানুষের গৌরব বাড়াইয়াছেন। মানুষকে দুঃখ দিয়া ঈশ্বর মানুষকে সার্থক করিয়াছেন।
চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে
বেদনায়, বেদনায়,
সত্য যে কঠিন তব, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে।
-কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার
আমার এ ধূপ না পোড়ালে
গন্ধ তাহার নাহি আসে
আমার এ দ্বীপ না জ্বালালে, নাহি পাই আলো
এই করেছ ভাল নিঠুর, এই করেছ ভালো।
অমনি করে হৃদয়ে মোর
তীব্র দহন জ্বালো।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘তুলে শবে ফেরাগ্ ছে ঘাবড়া না আয় জিগর
ওহ রাত কওনছী হ্যায় জিচকী ছেহের না হু’
-জিগার মুরাদাবাদী
রাতের অন্ধকার দেখে কখনও ঘাবড়াইওনা
এমন কোন রাত্র আছে, যার সুপ্রভাত নাই?
তুন দিয়ে বাদে বাহরী ছে না ঘাবড়া আয় ওকাব,
ইয়ে বহতী হ্যায় তুঝে উচা উড়ানে কে লিয়ে।
-ইকবাল
বসন্তের মৃদুমন্দ সুখময় হাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। হে ঈগল পাখি। এখন কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়ে গেছে। তুমি কিন্তু ভয় কোরো না। মনে রাখবে এ ঝড় তোমাকে আরও উপরে নিয়ে যাবে।
Deeper is the night, closer the dawn. – Henry Wordsworth
রাত্র যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটবর্তী।
শীতকাল এলে, শীতের প্রকোপ যত বেশিই হোক না কেন, আমরা ধরে নিতে পারি, এরপরই বসন্তকাল আসবে। অর্থাৎ দুঃখের পর সুখ আসবেই।
ইউসুফে গোম গাস্তা বাজে আয়দ ব কেনানে গম মখোর
কোলবায়ে আহজানে শওয়াদ রোজে গুলিস্তাঁ গম মখোর।
গরছে মনজিল বছ খতরানাকাস্ত ও মকছুদ না পদিদ
হীচে রায়ে নিস্ত কারা, নিস্ত পায়া গম মখোর
হাফেজা দর কুনজে ফিকর ও খালওয়াতে মবহায়ে তার
তাবুয়দ ওয়ারদতে দোয়া ও দরছে কোরআঁ গম মখোর।
-হাফিজ
১. হারানো ইউসুফ আ: আবার কেনানে ফিরে আসবে,
দুঃখ করোনা
আহাজারীর জীর্ণ কুটির আবার ফুল বাগানে পরিণত হবে,
দুঃখ কোরো না।
২. ওহে প্রাণ! ধ্বংসের স্রোত হতে অস্তিত্বের বুনিয়াদ গড়ে উঠে
হযরত নূহ আ: এর মতো মহাপুরুষ যদি তোমার নৌকার কাণ্ডারি হয়,
তুমি তুফানের ভয় কোরো না।
৩. যদিও তোমার গন্তব্যস্থল অতীব কণ্টকাকীর্ণ এবং
তোমার লক্ষ্য অনিশ্চিত,
তবুও তুমি জেনে রাখো, এমন কোনো রাস্তা নেই
যার শেষ নেই।
সুতরাং দুঃখ কোরো না।
হে হাফেজ! যত দিন তুমি তোমার ফকিরীর
অন্ধ প্রকোষ্টে (খানকায়)
কোরান তেলাওয়াত এবং আল্লাহর দরবারে
দোয়া করার অভ্যাস জারি রাখবে
ততদিন তুমি দুঃখ কোরো না।
হাফিজের কবিতার মর্মার্থ হলো বিধাতা চিরদিন কাউকে দুঃখের সাগরে নিপতিত করেন না। দুঃখের পর সুখ আসবেই। অবশ্যই আসবে তাই আমাদের সবাইকে বিনম্র হৃদয়ে বিধাতার আরাধনা, এবাদত বন্দেগি এবং মানবসেবায় নিজেদের সমর্পিত করতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। সব ধরনের দুঃখ যাতনা অতিক্রম করতে পারবো।
পৃথিবীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অতিমাত্রায় লাভ করে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যাই। তাই বিধাতা মাঝে মধ্যে আমাদের কিছু দুঃখ যাতনা দিয়ে তার দিকে মানবজাতিকে ফিরিয়ে আনেন।
‘If goodness lead him not, yet weariness may toss him to my Breast.’ - George Herbert
বিধাতার অভিপ্রায়- সুখের দিনে তুমি আমায় ভুলে গেলেও, দুঃখের দিনে তোমায় আমি আগলে রাখি।
করোনা ভাইরাস অকালে অনেক মূল্যবান প্রাণ হরণ করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আল্লাহপাকের অপার কৃপায় অচিরেই মানবজাতি এ মরণব্যাধির হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে ইনশাল্লাহ।
আমাদের করণীয়:
১। তওবা করা- খালেছ দিলে বেশি বেশি, আল্লাহর দরবারে।
২। দান খয়রাত, ছদকা করা সামর্থ্য অনুসারে। অসহায় মানুষের দুঃখ যাতনা লাঘব করার মানসে।
৩। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য তনয়া শেখ হাসিনার নির্দেশিত উপদেশগুলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।
৪। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সমস্ত উপদেশাবলী পালন করা।
৫। নিজেদের সম্পূর্ণভাবে ঘরে আবদ্ধ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
৬। সরকারি/বেসরকারি ত্রাণসামগ্রী সততার সঙ্গে যথোপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানো।
বাংলাদেশের ইতিহাস মহাবিশ্বের বিস্ময়কর ইতিহাস। ৯ মাসে কোনো জাতি তার স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এটা শুধু বাঙালিরাই করতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ১৮ মিনিটের ভাষণ সমস্ত জাতিকে একাকার করেছিল- যার ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের মহান বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
এ-জাতি ইনশাল্লাহ মরণব্যাধি করোনাকে জয় করে বিশ্ব ইতিহাস রচনা করবে। আল্লাহ আমাদের সব মানবজাতিকে রক্ষা করুন।
লেখক: আলহাজ সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
চেয়ারম্যান, পিএইচপি ফ্যামিলি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২০
এএ