জীবাণু অস্ত্রের গবেষণা বা জৈব অস্ত্রের গবেষণা একটি উন্নয়নের পরিচায়ক হলেও তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সন্ত্রাসীরা এই জীবাণু অস্ত্র বা জৈব অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, মার্কিন বিরোধী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস সংগ্রহ করছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের দোসর দেশগুলোতে জীবাণু প্রয়োগ করতে পারে। ২০১৫ সালের এক বক্তৃতায় বিল গেটস বলেছিলেন- আগামী কয়েক দশকে কোনো যুদ্ধ নয়, লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে ভয়াবহ সংক্রামক কোনো ভাইরাসের কারণে; মানুষ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নয়, প্রাণ হারাবে ক্ষুদ্র জীবাণুতে।
উল্লেখ্য, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীরা এন্ত্রাক্স, গ্ল্যানডার্স, কলেরা ও ফাংগাস নামীয় ভাইরাসগুলো জৈব অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিল। ১৯১৬ সালে স্ক্যান্ডিনেভীয়ার যোদ্ধারা ইম্পেরিয়াল রাশিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে ফিনল্যান্ডে এন্ত্রাক্স জীবাণু ব্যবহার করে। ১৯৯৩ সালে জুন মাসে জাপানে অম শিনরিকিও নামের একটি সংগঠন এন্ত্রাক্স জীবণু ছড়িয়ে হামলা করেছিল। এছাড়া ভারতে প্রথম জৈব সন্ত্রাসের ঘটনাটি ঘটে ১৯৩৩ সালের ২৬ নভেম্বর ‘পাকুড় হত্যা মামলা’ নামে পরিচিত এ ঘটনায় পাকুড় রাজবাড়ীর ছোটকুমার অমরেন্দ্রচন্দ্র পান্ডের ওপর হাওড়া রেলস্টেশনে প্লেগ জীবাণু ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। শিকাগোর ডিপল ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ল এর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ব্যারি কেলম্যান জানান, বায়োটেরোরিজম প্রতিরোধের প্রধান সমস্যা হচ্ছে বায়োসায়েন্সের আইনগত দিক দেখাশোনা ছাড়া পুলিশ কী করতে পারে।
বাংলাদেশে নতুন ধরনের রোগ সঠিকভাবে শনাক্তকরণ, দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোগের চিকিৎসা ও প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ, সংক্রমণ প্রতিরোধসহ জনসাস্থ্য বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষণে বাংলাদেশে গ্লোবাল ডিজিজ ডিটেকশন (জিডিডি) সেন্টার কাজ করছে যা আমেরিকা ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সহযোগিতায় গঠিত হয়। আমাদের দেশের সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, নির্মূল) আইন, ২০১৮ এ শুধুমাত্র ভাইরাস সংক্রমিত হলে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সংক্রামক ব্যাধির কথা গোপন রেখে রোগের বিস্তার ঘটালে কি শাস্তি হবে, মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিলে বা সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশ পালন করতে অসম্মতি প্রকাশ করলে কী শাস্তি হবে এসব বিধান রাখলেও যদি কোনো সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কোনো বায়োটেরোরিজম বা জৈব সন্ত্রাসের কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়, সেক্ষেত্রে তার বিধান কী হবে তা সুনির্দিষ্ট নয়।
গ্রিক শব্দ 'করোনে' মানে 'মুকুট' এবং লাতিন শব্দ 'করোনা' মানে 'মালা' থেকেই করোনা ভাইরাস নামটি এসেছে। অনেকে ধারণা করছে- করোনা ভাইরাসটি বায়োটেরোরিজমের অংশ হতে পারে। যদি বায়োটেরোরিজমের অংশ নাও হয় তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের বায়োটেরোরিজম বা জীবণু সন্ত্রাস হবে না এর নিশ্চিয়তা নেই বা কেউ হলফ করে বলতে পারে না। তাই আমাদেরকে শিগগরিই প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র আগ্নেয়াস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য বিনিয়োগ করা বা তা প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াকে শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য করা যাবে না।
বায়োটেরোরিজম বা জৈব সন্ত্রাস হতে কিভাবে আমরা রক্ষা পাবো তা নিয়ে আমাদের গঠনমূলক চিন্তা করতে হবে। আমরা জৈব সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য যতটুকুই না ব্যয় করবো তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি অর্থনৈতিক ও ইকোসিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতি হবে যদি আমরা জৈব সন্ত্রাসের আক্রমণে পতিত হই। সন্ত্রাসবাদের এমন কোন বিধিবিধান নেই যে, সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড করতে কোন পদ্ধতিতে সে তার বেআইনী বা সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করবে। আমাদের উচিত আগ্নেয়াস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্র মোকাবেলার পাশাপাশি জৈব সন্ত্রাস বা জীবাণু সন্ত্রাস মোকাবেলায় সমান পদক্ষেপ হাতে নেওয়া।
লেখক: আইনজীবী, জর্জ কোট, চট্টগ্রাম।
[email protected]