মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) একজন সুস্থ মানুষকে ১২-১৪ দিনের ব্যবধানে যেভাবে নাস্তানাবুদ করে দিতে পারে তার ভয়াবহতা আক্রান্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের অনুভূতির বাইরে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে বিষয়টি আমরা অবহেলা করে আসছি, সেটা হলো- মানুষ ও করোনা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা।
ধর্ম, বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে সকলকে এক কাতারে এসে করোনাকে প্রতিপক্ষের রূপ দেওয়া উচিত ছিল। অনেকেই হয়তো নিজেদের নিরাপদ মনে করে নিশ্চিন্ত ছিল। বাস্তবে ট্রান্সমিশন শুরু হলে কেউ যে রক্ষা পাবে না, তা অনুধাবন করা উচিত ছিল। সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
মতভেদ, উঁচু-নিচু ভুলে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে জনগণের সার্বিক ঐক্যের মাধ্যমে, মানবতার কাতারে দাঁড়িয়ে মহামারি মোকাবেলা করতে হবে। এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হলো- জীবন রক্ষায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ভাইরাস সনাক্তকরণ এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ। প্রয়োজনীয় সতর্কতার মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ডাক্তার-নার্সদের উৎসাহিত করতে মোটিভেশনাল কার্যক্রম নিতে হবে। হাত ধোয়ার পাশাপশি সবার জন্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচলিত বিভিন্ন ভেষজ পদ্ধতি অনুসরণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নির্দেশনা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করতে বিশেষ উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
নিয়মিত কিছু স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুসরণ রুটিনের মধ্যেই নিয়ে আসতে হবে। নির্দিষ্ট এলাকা লকডাউন থাকা অবস্থায় সবাই ঘরে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আক্রান্ত এলাকায় ঘুরাঘুরি মানে সংক্রমণ নিজেদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া। মনে রাখতে হবে, আপনার এলাকার সুরক্ষার জন্য এলাকায় কেউ প্রবেশ করবে না। ঠিক আপনার সুরক্ষার জন্য আপনি ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের বাতাসে যেভাবে ধূলিকণা ভেসে বেড়ায়, ধূলোর সাথে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাতাসের সাথে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে এই ভাইরাস। তখন পরিস্থিতি হবে বিধ্বংসী। আমাদের আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান সিঙ্গাপুরের গবেষণার ফলাফলকে কোনভাবেই প্রভাবিত করে না।
এই মহামারিতে শুধু সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই মুখ্য। আমাদেরকে স্বাস্থ্য এবং খাবারের বিষয়টি ছাড়া অন্য সব কর্মকাণ্ডে প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সময়টা উপভোগের নয়, বিষয়টি আপনার একান্ত ব্যক্তিগতও নয়। সুতরাং সামাজিক সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ যা সৃষ্টিতে আমরা অনেকাংশে ব্যর্থ।
আজকে যারা শপিংমলে ভিড় করছেন তারা চিকিৎসাকর্মীদের ব্যস্ততাকে দ্বিগুণ করে দিচ্ছেন। ভয় হয়, এ জাতিকে সচেতন করে তুলতে তুলতে এ জাতির বিনাশ না হয়ে যায়। মহান আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
জীবনের পাশাপাশি জীবিকার বিষয়টি গুরত্বপূর্ণ। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। সরকার চাইলে বিশেষ ব্যবস্থায় আরও কিছু মানুষকে সহায়তার আওতায় নিয়ে নিলে জীবিকার প্রশ্নে খানিকটা চাপ কমতো। প্রত্যেক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব।
যেহেতু দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে, সুতরাং খাদ্য সহয়তা না দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিকদের জন্য ডিজিটাল আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে মাসে নির্দিষ্ট অংক নগদ সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এ ব্যবস্থা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী মাসে একবার সবাই আবেদন করতে পারবে, প্রাপ্তির সাপেক্ষে এক মাসের জন্য আইডি ব্লক থাকবে।
ওএমএস ব্যবস্থার সাথে সাথে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রয় ব্যবস্থা প্রসারিত করা হলে বাজারের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই ব্যবস্থার ত্রাণ বিতরণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা যাবে। পাশাপাশি জীবিকার প্রশ্নে ত্রাণ গ্রহণে অপ্রস্তুত ব্যক্তিরা কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পাবে। ব্যক্তি পর্যায়ে ত্রাণ প্রদানকারী এবং প্রতিষ্ঠানকে সরকারি ত্রাণ তহবিলে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। শ্লোগান হবে একটা ‘আমরা মানুষ আমাদের শত্রু মহামারি করোনা’।
এই যুদ্ধ মহাপ্রলয়ংকারী, অফুরন্ত রসদের অধিকারী প্রতিপক্ষ করোনা। নেই কোনও যুদ্ধ বিরতি কিংবা আপোষের সুযোগ। প্রতিকার একটাই- এক শ্লোগানের নিচে বাংলাদেশ। জাতির সব মেধা এক করে এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে ঐক্যমত প্রয়োজন। সময় অনেক গড়িয়েছে। আর এক মুহূর্ত নষ্ট করা যাবে না।
লেখক: সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২০
এসি/টিসি