তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের করণীয় কী? আমার কাছে মনে হয়, প্রথমত নিয়ম করে আয়কর আদায় করার প্রবণতা থেকে সরে এসে মানুষকে আয়কর দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে হবে। আয়করকে বীমার মতো একটা আর্থিক বা নিশ্চয়তার পণ্য বা সেবায় পরিণত করা গেলে মানুষ অবশ্যই আয়কর দেবে।
ধরুন- প্রাইভেট সেক্টরে কর্মরত ব্যক্তি যদি বুঝতে পারে কোনো অনিবার্য কারণে সে বেকার হয়ে পড়লে পুনরায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত তার দায়িত্ব নেবে সরকার। কিংবা একজন ব্যবসায়ী, যে নিয়মিত এবং সঠিকভাবে আয়কর প্রদান করে তার দুঃসময়ে পাশে থাকবে সরকার, তবে বেশিরভাগ মানুষই আয়কর দিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। করোনাকালীন মানুষের এই উপলব্ধি আরো বেড়েছে বলে আমার বিশ্বাস।
দ্বিতীয়ত আমাদের বর্তমান আয়কর ব্যবস্থায় কোনো ব্যক্তি আয়কর দেওয়ার জন্য কোনো ধরনের প্রত্যক্ষ সুযোগ সুবিধা পায় না। আর পরোক্ষ সুবিধা ভোগ করার ক্ষেত্রে আয়কর দেওয়া আর না দেওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। এখানেও ব্যাংক বা বীমার মতো অ-আর্থিক বা বিশেষ সুবিধা চালু করা যেতে পারে। উদহারণ স্বরূপ: একটা নির্দিষ্ট সময়ে (৩ থেকে ৫ বছর) নির্দিষ্ট টাকার ওপরে আয়কর না দিলে কারো বাচ্চা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে না, পাবে না বিআরটিএ থেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বা হবে না নবায়ন, যেতে পারবে না দেশের বাইরে প্রমোদ ভ্রমণে।
সবশেষে ট্রাফিক পুলিশের মতো আয়কর আদায়ের সাথে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য প্রচলন করা যেতে পারে কমিশন সুবিধা। তাহলে বাড়বে এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্মতৎপরতা, কমে আসবে আর্থিক দুর্নীতি।
এমন অনেক ছোট ছোট উদ্যোগ নিলে মানুষের আগ্রহ বাড়বে আয়কর দেওয়ায়। কমবে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা, বাড়বে এ খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা। প্রতিবছর আয়কর আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে সরকারে কমে যাবে উদ্বেগ।
লেখক: ডিজিএম, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড