রেণু মানে রেখে যাওয়া সাহস অথবা সময়
রেণু মানে দেখে যাওয়া ভালোবাসার জয়...
স্বাধীনতা সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ পেরিয়ে মুজিব হয়তো সাঁতরে পেরিয়ে যেতে পারতেন, হয়তো পারতেন না।
সমস্ত প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়ালেন রেণু, পেছনের ঢেউজলে ছোঁয়া বালিতে রেখে এলেন পায়ের ছাপ, ভাসলেন তরী হয়ে, নাবিক রওনা হলেন পাল তুলে-
ঐ যে দূরে যেখানে স্পষ্ট নয় দুচোখ, স্বাধীনতা সেখানে।
এরপরের ইতিহাস অজানা নয় কারও। কিন্তু জানা হয়নি তারও অনেক আগে, যেমন জেনেছি তার বেশ খানিকটা পরে।
আমাদের সাথে তো আসলে পরিকল্পিত পরিকল্পনার হত্যা হত্যা খেলা শুরু হয়েছিল পুনরায়, সমস্যাটা সেখানেই বেঁধেছিল। হত্যা করা হয়েছিল বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, বলিষ্ঠ উচ্চারণে যুদ্ধকে শুদ্ধ সঙ্গীতে রূপান্তরিত করা এক জাদুকরকে। এরপরে যদিও পুনরায় আশা করা সুসাহস নয়, কখনও পরিনাম শুধু মৃত্যু। কারণ যারা বাঙালি জাতির স্রষ্টার বুকে বন্দুক তুলতে পেরেছে তারা মানুষ নয়, আর অশরীরি অসত্যের বিরুদ্ধে সেই জাতি আর দাঁড়াতে পারে না, যাদের সাত মার্চের সেই তর্জনী হুঙ্কার বন্ধ করে দেওয়া হয় চিরতরে।
শেখ হাসিনার বুকে এত সাহস কীভাবে জন্মালো এমন প্রশ্ন শৈশবে জেগেছে। অনেকেরই জেগেছে হয়তো। ‘আপন জনের রক্তের দাগ থেকে জন্মানো এ সাহস’, নতুবা একজন নারী এতটা সাহসী হয় এমন প্রশ্ন জাগাও অস্বাভাবিক নয়! কারণ সেদিন দৃশ্য ছিল অপরিষ্কার।
ইতিহাস ছিল শয়তানের হাতে লেখা সৃষ্টিকর্তার আত্মজীবনীর মতোন। আমাদের জানতে দেওয়া হয়নি শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বহমান নদী পর্যন্ত ঠিক কতগুলো যোগসূত্র। এখন জানতে পারছি আর অনেক কিছুই, জানছি প্রতিদিন।
ঠিক তেমন জেনেছি কন্যার সাহসের খনির দিশা। শেখ হাসিনার বুকে সাহসের প্রতিধ্বনি লেখা হয়েছিল রেণুর নামে। সুতরাং এই গর্জন এবং অর্জন কাঙ্খিতই। ‘পরিস্থিতির প্রিয় সন্তান’ অর্থাৎ প্রতিকূলতায় যে সন্তান যোদ্ধা হয়ে ওঠে, আমাদের মা, বঙ্গবন্ধুর রেণু তাইই ছিলেন।
এর আগে তো কোনদিন রাজনীতির মাঠে তাকে দেখা যায়নি। বাঙালি বধূ যেমন হন, ঠিক ছিলেন তেমনই। ভাতের টেবিলে সুপরিচিত উপস্থিতি ছিল তার। স্বামী, শশুর, শাশুড়িসহ প্রত্যককে নিজ হাতে খাইয়ে আনন্দে ভাসা বাঙালি বধূর সেই চিরায়ত রূপ।
কীভাবে এল এতটা সাহস যা রেণুকে ‘রাতারাতি’ রণাঙ্গনের অগ্রযোদ্ধায় রূপান্তরিত করলো? রাতারাতি? উহু রাতারাতি নয়। বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের সূত্রপাত মুহূর্তের নয়। এর পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ নির্মমতার গল্প। যে নির্মমতায় রেণু হয়ে উঠেছিলেন রণতরী, আর বঙ্গবন্ধু সেই রণতরীর সাহসী নাবিক, যার যাত্রা পথ ছিল বাংলাদেশের দিকে।
হ্যাঁ।
বঙ্গমাতার অবদান অস্বীকার করে বাংলাদেশ লেখার কোন উপায় নেই। জেল জীবনে মুজিবের রাজনীতিতে নেমে এসেছেন নিজের গহনা বিক্রির টাকা হাতে দাঁড়িয়েছেন অসহায় কর্মীদের পাশে। শুধু তাই নয়, আমরা যে অসমাপ্ত আত্মজীবনী কিংবা জেলজীবনে পিতার লেখা বিবিধ বই পড়ছি তা লেখার পেছনের একমাত্র প্রেরণার নাম বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিব, অর্থাৎ রণাঙ্গনের রেণু।
সমুদ্র জলে রেণু-মুজিব একসাথে কখনও কি পা ভিজিয়েছিলেন? খুব জানতে ইচ্ছে করে...। এই প্রশ্নের উত্তর না পেলেও উৎসাহ পেয়েছি, এক অলৌকিক আলোচনার মতোন।
হে জননী
আজ আপনার জন্মদিবসে বাংলাদেশের মুক্ত খামে এক আকাশ ভালোবাসা পাঠালাম...
শুভ জন্মদিন বঙ্গমাতা।
-ইতি
ইশতিয়াক আহমেদ জয়। সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কক্সবাজার জেলা শাখা