আমরা এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম, হয়তো বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য ইতালির দরজা আবার খুলবে। অবশেষে ইতালিতে নতুন ৩০,৮৫০ জনের মতো অনুপ্রবেশকারীর জন্য গেজেট ঘোষণা হয়েছে।
সারাদিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে অনেকে এসএমএস করেছেন এবং বিভিন্ন গ্রুপের দালালদের পোস্টে আমাকে মেনশন করেছেন। কাজের ব্যস্ততার জন্য আমার একটু দেরি হয়েছে সবার উত্তর দিতে।
ইনবক্সে ইনবক্সে ছড়িয়ে গেছে ‘ঐ তাড়াতাড়ি কর, ইতালিতে নতুন করে স্পনসর ডিক্লেয়ার করেছে’, ‘তাড়াতাড়ি দালালকে জায়গা জমি বিক্রি করে টাকা অ্যাডভান্স করো এবং পাসপোর্ট দাও। ’
অন্যদিকে ইতালির খবর প্রকাশের পর দালালদের প্রচারণা যেন ঈদ উৎসবের মতো শুরু হয়ে গেছে ফেসবুকে। ‘যিনি আগে টাকা জমা দেবেন, পাসপোর্ট দেবেন, তিনি সবার আগে ইতালিতে আসবেন। তাড়াতাড়ি ইনবক্সে আসেন। ’
এক সূত্রে জানা গেল- ইতালিতে গেজেট ঘোষণা হতে না হতেই বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো একদিনের মধ্যে জমা নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার পাসপোর্ট। তাহলে বাকি ৩ মাসে কয় লাখ পাসপোর্ট জমা নেবে তা ধারণার বাইরে। ইতালি যেসব দেশ থেকে কর্মী নেবে সে তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরও আছে আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, ভারত, বসনিয়া, ফিলিপাইন, মিশর, কোরিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, জাপান, মালি, মলদোভা, মরক্কো, কসভো, মন্তেনেগ্রো, পাকিস্তান, মেসিডোনিয়া, সেনেগাল, সার্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তিউনিশিয়া ও ইউক্রেন।
সবকিছু দেখার পর বাংলাদেশি ভাইদের কিছু জিনিস জানানোর জন্যই আমার আজকেই এই লেখা।
আবেগে জায়গা জমি বিক্রি করে দালালকে টাকা দেওয়ার আগে, যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন তা নিচে তুলে ধরলাম।
১. অধীনস্থ নন-ইইউ কর্মী, মৌসুমী এবং অ-মৌসুমী এবং স্ব-কর্মরত কর্মীদের সর্বোচ্চ কোটা যা মাধ্যমে এই বছর ইতালিতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে ৩০,৮৫০ জন।
২. অনিয়মিত, স্ব-কর্মসংস্থানযুক্ত কর্মসংস্থান ও কনভারশনের জন্য ১২,৮৫০টি প্রবেশাধিকার, স্বকর্মসংস্থান বলতে বোঝায়, ইতালিতে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ইউরো বিনিয়োগ করার ক্ষমতা আপনার আছে।
৩. কৃষি ও ট্যুরিস্ট-হোটেল সেক্টরগুলিতে বেসরকারি কর্মসংস্থানের জন্য ১৮,০০০ জনকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। এই খাতে কৃষি খামারে কাজ, হোটেল সার্ভিস থেকে শুরু করে ব্রেকফাস্টে কর্মরত কর্মচারী ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। এসব কাজে ৬ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত ইতালিতে থাকা যাবে। এরপরে আপনাকে ইতালি ছাড়তে হবে। মানে মৌসুমী কাজের ভিসা। এটা আগের মতো স্পন্সর ভিসা নয়।
১৩ অক্টোবর ২০২০ সকাল ৯টা থেকে, আবেদন ফরমগুলো পূরণের জন্য অ্যাপ্লিকেশনটি https://nullaostalavoro.dlci.interno.it ওয়েবসাইটে ডেডিকেটেড আইটি পদ্ধতিতে অ্যাক্সেসের মাধ্যমে সবকিছু আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
৪. শ্রম ও সামাজিক নীতি যে দেশগুলোর ঘোষিত হয়েছে সেই কোটা অঞ্চল এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশগুলোর মধ্যে ভাগ করা হবে। যে কোটায় ১৮ হাজার নতুন প্রবেশকারী নেওয়া হবে, তাদের আবেদন ২৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে পাঠানো যাবে। এখানে মনে রাখতে হবে ৯টা মানে ৯টা। ২-১ মিনিটের ব্যবধানে হাজার হাজার আবেদন পড়ে যাবে। অতীতে দেখা গেছে, ইতালির বিভিন্ন বাঙালি দোকানগুলোতে সারারাত জেগে কম্পিউটারের সামনে সবকিছু রেডি করে বসে থেকেছে লোকজন। ঠিক নয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই আবেদন সেন্ড করা হয়েছে। ইতালির ইতিহাসে এরকমও আছে, সময়ের ওপর ভিত্তি করেও অনেকের ভিসা বের হয়েছে।
৫. ২২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ১২,৮৫০ জনের কোটার আবেদন গ্রহণ করা হবে।
৬. ৩১ ডিসেম্বর অন্য সব প্রবেশাধিকার কোটাগুলোর আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ।
মোট ৩১টি দেশের জন্য এবং তারও অধিক দেশের জন্য সব কোটা বিভিন্নভাবে ভাগ করা আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কোটার মাধ্যমে কতজন বাংলাদেশিকে নেবে ইতালি? যত্ন করে নিজেই অংক করে দেখুন।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার আবেদন পড়বে। ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশি দালালরা বাংলাদেশের লক্ষাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে ধান্ধা শুরু করবে। কারণ আগের মতো এখানে স্পনসর ঘোষণা করেনি।
আরেকটু বুঝিয়ে বলি, যেহেতু কোটা কথাটি চলে এসেছে, সে ক্ষেত্রে অনেক দালাল দশ থেকে বিশ জনের মতো মানুষের কাছ থেকে টাকা নেবে। সে ক্ষেত্রে একজন সফল হতে হবে কিনা সন্দেহ। যদি প্রতি দালাল গড়ে একজন লোক আনতে পারে, সে ক্ষেত্রে উনি কত জনের কাছ থেকে পাসপোর্ট এবং টাকা নেবেন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে সে জায়গায়।
৬ মাস ১ বছর অসহায় মানুষের টাকা আটকে রেখে পরে ফেরত না দেওয়া অথবা ফেরত দিলেও নানান বাহানা দেখানো দালালদের কাজ। এদের পাল্লায় পড়ে প্রবাসের স্বপ্ন দেখা একটি ছেলের জীবন এবং সংসার ধ্বংস হয়ে যায়।
তাই না বুঝে দালালের হাতে ভিটে মাটি বেচে টাকা দেবেন না। এসব ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য লোক ছাড়া কারো হাতে টাকা পাসপোর্ট দেওয়াও উচিত নয়।
লেখক: ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশি