ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জাহাঙ্গীরনগর: আমার ক্যাম্পাস আমাকে বড় করেছে

মাহবুব মিঠু, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১২
জাহাঙ্গীরনগর: আমার ক্যাম্পাস আমাকে বড় করেছে

সেই অনেক বছর আগে। ঢাকা থেকে আরিচা হয়ে গোপালগঞ্জে বাসে চেপে যাচ্ছি।

ঢাকা এসেছিলাম বেড়াতে। মফস্বল শহরে বড় হওয়া আমার মতো কিশোরদের কাছে ঢাকার সব কিছুই ছিল বিস্ময়ে ভরা! বাসে চেপে যেতে যেতে তাই চোখে পলক ফেলে কোন দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ হারাতে চায়নি। চোখ বড় বড় করে তাকাতে তাকাতে হঠাত দেখলাম সবুজ গাছের সারি দিয়ে লাল ইটের একটা দালান উকি মারছে। সংগে থাকা অগ্রজ ফুফাতো ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, এটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পরে জেনেছি ওটা ছিল মীর মশাররফ হোসেন হল।

ওমা! বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো সুন্দর হয় কখনো! চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলাম যতোক্ষণ না ক্যাম্পাসের সীমানা শেষ হয়। তখন থেকেই কেন জানি জাহাঙ্গীরনগর ছিল আমার স্বপ্নের ক্যাম্পাস। এরপর হাইস্কুল এবং কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে কেমন করে যেন সেই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা হয়ে গেলাম বেশ কয়েকটি বছরের জন্য।

জাবি ক্যাম্পাস শুধু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বরণীয় নয়। বরং এই ক্যাম্পাসের সবুজ প্রান্তর থেকে অনুকরণীয় অনেক আন্দোলন, বিভিন্ন সময়ে জাতিকে আলোড়িত করেছে। সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম অন্যায়ের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে থাকলেও, সেই শুরু থেকেই দেখেছি জাবি ক্যাম্পাস সেটা থেকে একটু আলাদা। দেশের মোটামুটি বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সেই আশি এবং নব্বইয়ের দশকে স্বাধীনতা বিরোধী শিবিরের হাতে রক্তাক্ত হলেও তখন এই জাহাঙ্গীরনগরই ছিল ব্যতিক্রম। দলমত নির্বিশেষে সকল মত ও পথের ছাত্রছাত্রীরা মিলে পরপর দুবার তাদের কালো থাবাকে থামিয়ে দিয়েছিল। সারা দেশে যখন ছাত্রদল শিবিরের সংগে সহঅবস্থানকে কিছুটা হলেও মেনে নেয়, সেখানে এই জাহাঙ্গীরনগরই ছিল ভিন্ন। ছাত্রদল ক্ষমতায় থেকেও কখনো শিবিরকে গেড়ে বসতে প্রশ্রয় দেয়নি। শিবিরের আক্রমণে যখন ছাত্ররা পর্যুদস্ত হবার মতো, ঠিক তখনই তাদের পাশ এসে জীবনের ঝুকি নিয়ে অসীম সাহসে ছাত্রী বোনেরা রুখে দেয় শিবিরের অগ্রযাত্রাকে। জাহাঙ্গীরনগরের বোনেরা সব সময়ই যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সিপাহসালার।

এই সেই জাহাঙ্গীরনগর যেখানে ছাত্রলীগের ধর্ষনের সেঞ্চুরীয়ান মানিকের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে এসেছিল প্রতিবাদ জানাতে। সারা দেশের নির্যাতিত মেয়েরা লড়াইয়ের প্রেরণা পেয়েছিল এই ক্যাম্পাসের সাহসী মেয়েদের কাছ থেকে। ততকালীন প্রশাসনের বিরোধীতা সত্ত্বেও এবং সরকারের সহযোগী ছাত্র সংগঠনের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে লড়াকু মেয়েরা ধর্ষনসহ সব প্রকারের নারী নিপীড়ক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছিল।

আজ আবারো ক্যাম্পাস জেগে উঠেছে ছাত্রলীগের হাতে নিহত সহপাঠি হত্যার প্রতিবাদ জানাতে। তাদের সংগে যোগ হয়েছে শুভ বুদ্ধির শিক্ষক এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা। দলীয় লেজুড়বৃত্তির ভিসি এবং সন্ত্রাসের মদদদাতা ও সন্ত্রাসী, শিক্ষক নামের কলংক, নিজ সহকর্মীকে পেটানো প্রক্টর আরজু মিঞ্রার পদত্যাগের দাবীতে। জানি, এবারও ওরা হঠবে না দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত। (সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করেন প্রক্টর আরজু মিঞা)

এমন একটা ক্যাম্পাসের ছাত্র হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। হে ক্যাম্পাস, তুমি আমাকে অনেক বড় করেছ। অনেক বড়। শুধু আমি কেন? এই ক্যাম্পাসের আদরে বেড়ে ওঠা সকল মানবতার পক্ষের ছাত্রছাত্রী আজ তোমার কারণে গর্বিত। তুমি নিজে বড় হয়ে বড় করেছো আমাদের সবাইকে। সালাম তোমাকে।

[email protected]

বাংলাদেশ সময় ১৪৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।