ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আমরা কি সেবাদাস না মুক্তিপ্রবণ?

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১২
আমরা কি সেবাদাস না মুক্তিপ্রবণ?

সিডনি থেকে: আমাদের দেশের মতো রাজনীতিপ্রবণ দেশের উপমা দুনিয়ায় খুব কম। কিছু হলেই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত নড়ে ওঠে।

যারা এ জাতীয় প্রবণতাকে সচেতনতা বা সমর্থক মনে করেন আমি তাদের দলে নই। রাজনীতি বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, কিন্তু কাহাঁতক।

চল্লিশ বছর ধরে পরিচিত চেহারা, মুখ আর পাল্টে যাওয়া চরিত্রগুলোর অদল-বদল এইতো চলে আসছে। এ নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি বা ঢেউ তোলার আসলেই কোনো কারণ দেখি না।

এশিয়ার অনুন্নত নামে পরিচিত রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত কয়েকটি দেশ ভ্রমণের সুযোগ ঘটেছে। কোথাও এমনটি চোখে পড়েনি। কম্বোডিয়ার মিডিয়া, থাই মিডিয়া, নেপালের মিডিয়া, শ্রীলঙ্কার মিডিয়া এমনকি জনমানসেও রাজনীতির এতো প্রভাব বা প্রতিপত্তি চোখে পড়ে না।

আমরা আর আমাদের একদা অভিন্ন রাষ্ট্র পাকিস্তানেই শুধু এতো মাতম। পাকিস্তানতো জাহান্নামের আগুনে পুড়তে পুড়তে এখন শেষ ধাপে। আমরা সেদিক থেকে অনেক অগ্রগামী ও শান্তিপ্রিয় দেশ। এই যে কথাটা বলতে পারছি, এর পেছনে অবদান কাদের? কাদের কল্যাণে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল? মন্ত্রী-মিনিস্টার, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী না পর্বত বিজয়ী, নোবেল জয়ী, ক্রীড়া বা সংস্কৃতিতে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের জন্য এই সম্মান?

চিন্তা করে দেখুন তো, তাদের কি দিয়েছি আমরা? ধরে বেঁধে অপমান আর তিরষ্কার! দেখে শুনে মনে হবে জগতে তাদের মতো অপরাধী বা তস্কর আর দ্বিতীয়টি নেই!

ড. ইউনূসের মান-অপমানের চূড়ান্তকালে একদল অতিথি এসেছিলেন সিডনি থেকে। তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি। ভ্রদলোকদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল ড. ইউনূস বা গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া বঙ্গদেশের সব মানুষ আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানই হাজী মহসীনের দাতব্যখানা!

চোর, গুণ্ডা, বদমায়েশ আর বাটপাড়ে ভর্তি রাজনীতি নোবেল জয়ীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে এটাই তো স্বাভাবিক। হিমালয় জয়ী মুসা, হরি ধানের হরি কাপালিক বা বৃক্ষপ্রেমী সোবাহানকে দিয়ে আমাদের প্রাণে উচ্ছ্বাস- এ সম্ভার বা খুব জোর এক রাতের।

ক্রিকেট বা যে কোনো অর্জনও সাময়িক আনন্দের। যতো আনন্দ, বেদনা, ক্ষোভ আর দ্রোহের উৎস বা অাঁধার হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতি।

এ অবস্থা স্বাস্থ্যকর কিছু নয়। বিশেষত, হাসিনা-খালেদা বা এরশাদের মত নেতা-নেত্রীদের দেশে।

আমি জীবনেও বিএনপি করি না, করবো না। তবু ছাত্রদলের এক নেতার কথা চিরকাল মনে রাখবো। ঠাট্টাচ্ছলে হাসতে হাসতে  বলছিলেন ‘জানেন দাদা, আমাদের দলে কেউ যোগ দিলে আগেই বলে দেই, ‘ভাই শীর্ষ পদের আশা নিয়ে আইসেন না কিন্তু, এটা ফ্যামিলির। ’ তার সাহসের তারিফ করি।

ছাত্রলীগ এমন সত্য কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে। হাতে অস্ত্র, চোখে আতঙ্ক, মনে উত্তেজনা আর বাহুতে ক্ষমতা থাকলে কেউই সত্য বলতে পারে না। ছাত্রদলও পারবে না। এই রাজনীতি পরিবার, বলয় বা মাফিয়ার বাইরে পা রাখতে পারবে না। একদা অবদান রাখা জীবনবোধ হারানো বয়স্কজনদের ভিড়ে ঠাসা রাজনীতি তারুণ্যকে না পারছে পথ দেখাতে, না পারছে নিয়ন্ত্রণে নিতে।

সে সত্যটা বলার সাহসও নেই আমাদের। আচ্ছা এ দেশ ও দেশের জনগণের জন্ম কি নেতা-নেত্রীদের সেবা ও ধন্য ধন্য করার জন্য?

কালমার্কস ধর্মকে আফিম বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে রাজনীতিই যেন সেই আফিম বা নেশা। তার নেশায় ঝিম ধরে থাকা অবশ এই জাতিকে চাবুক মেরে জাগানোর মতো মানুষ বিশেষত নেতৃত্বের বিকল্প  নেই।

শুধু রাজনীতি যে জীবন নয়, সেটা জানানো বা বোঝানোর জন্যও রাজনীতিবিদহীনতা প্রয়োজন। অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও অন্যান্যধারাকে সফল রাখতেই তা করতে হবে।

আমরা নিশ্চয়ই কোনো দল, নেতা-নেত্রী বা ক্ষমতা বা বিরোধিতার সেবাদাস নই। আমরা বাংলাদেশী মুক্তিপাগল এক স্বাধীন জাতি। তাই প্রমাণিত হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।