বিড়াল কখনোই এক থাবায় ইঁদুর মারেনা। বারবারের থাবায় ইঁদুরের মৃত্যুটা উপভোগ করা বিড়ালের স্বভাব।
আমাদের রাজনীতিবিদ ‘ভেজা বিড়ালেরা’ জনগণকে ভাবেন ইদুর। শত হোক ভোটার! এক থাবায় আমাদের প্রাণে না-মেরে ধনে-জনে রসিয়ে রসিয়ে এক এক করে মারেন। কখনো রাজপথে চলন্ত বাসে বোমা মেরে। কখনো দলীয় মস্তান ছিনতাইকারীর ছুরির খোঁচায় কিংবা পিস্তল-রিভলবারে অনর্থক গুলিতে। কাউকে মারেন শেয়ার বাজারের ধস নামিয়ে। চাকুরীচ্যূত করে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বাড়িয়ে নাভিশ্বাস দশা করেন শহুরে একদলকে। গ্রামে ভিন্নদলকে গলা টিপে মারেন উৎপাদিত ফসলের সাজানো দাম কমিয়ে। জনগণকে মারার আরেক হাতিয়ার ইদানীং বেশ ইস্তেমাল হচ্ছে। হাতিয়ারটির নাম সড়ক দূর্ঘটনা। সবকিছু মিলিয়ে ‘আল্লাহর মাল’ জনগণ আল্লাহর কাছে ফেরত যাচ্ছে’!
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিড়ালদের রং `অশুভ` কালো। রাজনীতির সাদা বিড়ালগুলো হয় গর্তে লুকিয়েছে। নাহয় স্রেফ টিকে থাকতে পারেনি কালো বিড়ালদের সাথে পাল্লা দিয়ে। তবে রাজনীতিতে দুই হুলো বিড়ালের থাবার নীচে বারবার মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকে ইঁদুর-জনগণ। জাতীয়াতবাদী বিএনপি আর গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ মিলে মিশে ভাগে-যোগে ইঁদুর-জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ করে। তারা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে সরকারে যেতে না-পারার যাতনায়-অভিমানে পালক্রমে সংসদের আসনে বসেন না কিন্তু সংসদ সদস্যদের সকল ডিউটি ফ্রি ও এডভ্যান্টেজড সুবিধাদি ও ভাতা নেন। সরকারি ঠিকেদারী বাগান। ইউনিফর্মের গায়ে কথায় কথায় হাত উঠানোর অধিকার হাসিল করেন । নিশ্চিত করেন জেলের ডিভিশন। অপরাধের মামলায় আদালতকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলার নামে বিব্রত করার ’দাবি’। আত্মীয়-স্বজন সহ ধনে-সম্পদে বেড়ে ওঠার নিবিড় নিশ্চয়তা।
বেগম জিয়া আপাততঃ বিরোধী ভূমিকায় আছেন কিন্তু ’কাস্টমস মেইড’ সিংহাসনতূল্য চেয়ারে বসে ভাষনে-বক্তব্যে তিনি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে কী কী করবেন এবং কতোদিন ক্ষমতায় থাকার ‘ইরাদা’ আছে ফিরিস্তি দেন। কিছুদিন কোটি কোটি টাকা খর্চার রোড মার্চে জনদূর্ভোগ বাড়িয়ে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে চেষ্টা করেছেন। বিচারের আগে ‘ফতোয়া’ জারীতে জানিয়েছেন চিহ্নিত জামায়াতী যুদ্ধাপরাধীরা ‘নিরাপরাধ’। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জামায়াতীদের বিচার করা হচ্ছে। রাজনীতির কুমড়ো ভাগে দ্বিধা-বিভক্ত জাতি নেত্রীর বক্তব্যে বিনা প্রশ্নে হ্যাঁ বলতে অভ্যস্ত। ইঁদুর-জনগণ দুই হুলো বিড়ালের লড়াইয়ে আবারো বিপর্যস্ত-সর্বশান্ত হবার নীরব প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে জাতীয়তাবাদী বেগম জিয়া নিজ রাজনৈতিক জোটভূক্ত জামায়াতের পিতা-মাতা-সর্বেসর্বা গোলাম আজমের গ্রেফতারের পর সহিংস কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা উস্কানীমূলক বক্তব্যে দেশকে বিবাদে ঠেলে দেননি। প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদের মতোই নীরব অপেক্ষায় থাকার সাহসী সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বেগম জিয়ার এই সিদ্ধান্তে আমরা ইঁদুর-জনগণ অনেক যাতনা-দূর্ভোগ থেকে রেহাই পেয়েছি। হরতাল-ভাংগচুর-জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি থেকে উদ্ধার হয়েছি। বেগম জিয়া এক বিশাল ধন্যবাদ পাওনা হলেন।
রাজনীতির ময়দানে সাদা বিড়ালের অপেক্ষায় থাকি।
ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৬৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১১