এককালের কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়ের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই মঙ্গলবারের সকালটি সাংবাদিক জগতের জন্য ছিল বড় ধরনের শোকের ধাক্কা। আজীবন সৎ নির্লোভ নিরহংকার বিনয়ী ও নীতিতে অবিচল সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের অকালমৃত্যু বুকের ভিতরটা একেবারেই দুমড়ে মুচড়ে দিল।
অভিশপ্ত করোনার থাবায় ফের পৃথিবীতে প্রলয় এসেছে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেকে মারা যাচ্ছেন। ভ্যাকসিনের আগমনও সন্নিকটে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আমরা শুরুতেই পাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সব ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছেন। জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ে বীর বাঙালির যুদ্ধ অবিরাম চলছে। আমরা মরতে মরতে যুদ্ধে যুদ্ধে জন্মেছি। পরাজয় আমাদের স্পর্শ করেনি। মাস্ক ব্যবহার ও সচেতনতার গণজাগরণে গোটা দেশকে ঐক্যের কাতারে শামিল হওয়ার সময় এখন। জীবনের মূল্য সবকিছুর চেয়ে বেশি।
যেসব পরিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, স্বজন হারিয়েছে তারা জানে পরিবার ও সমাজ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কি ভয়ংকর তার চেহারা।
করোনার বড় শিক্ষা- জীবনের ভোগ-বিলাসিতা সব তুচ্ছ। সহজ-সরল-নিরাভরণ জীবনে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাই উত্তম। তবু করোনা অনেককে ক্ষমতার দম্ভ অবৈধ অর্থসম্পদ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। দেশ ও জনগণের শত্রুরা কখনো মানুষ ছিল না। মানবিকতাবোধ মৃত্যুর ভয় তাদের তাড়া করেনি। তার পরও দেশে ছোটবড় সৎ ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অনেকে সৎ আছে বলেই দেশটা এখনো টিকে আছে।
মাঝেমধ্যে চিৎকার করে জানতে ইচ্ছা করে, হে রাষ্ট্র! তুমি কি সংবিধান নামের চুক্তিনামা রক্ষা করছ? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সেই কবে শিক্ষকদের হাতে পাঠ নিয়েছিলাম। রাষ্ট্রচিন্তার দর্শন জগৎসেরা দার্শনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা দিয়েছিলেন। সেখানেই একটি রাষ্ট্রের সীমানা ও তার নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রের চুক্তিনামা হিসেবে সংবিধানের আবির্ভাব ঘটে। স্বামী-স্ত্রীর বিয়ের কাবিন থেকে বিভিন্ন বৈষয়িক বা সামাজিক চুক্তিনামা যেমন রয়েছে, তেমনি জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের চুক্তিনামা হচ্ছে সংবিধান। আমাদের রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ’৬২-এর শিক্ষা, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর গণরায়ের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্ধর্ষ সাহসী নেতৃত্ব ও তাঁর ডাকে জনগণের অংশগ্রহণে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। জীবনের ১৩টি বছর কারাগারে কাটিয়ে একটি জাতিকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে টেনে নিয়েছিলেন। এখানে তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ গোটা জাতিকে এক মোহনায় মিলিত করে। মুক্তিযুদ্ধে উদ্দীপ্ত করার, হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মোহন বাঁশি হয়ে উঠেছিল। তিনি ’৭২ সালে বিশ্বের উদার গণতান্ত্রিক জনগণের ক্ষমতার মালিকানায় আধুনিক সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। সে সংবিধান দেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষতার উচ্চারণে বিশ্বে আবির্ভূত করেনি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনাকে বিচ্ছুরিতই করেনি, সমাজতন্ত্রের নামে শোষণমুক্ত সমাজের অঙ্গীকারও করেছিলেন। গণতন্ত্র ছিল তাঁর আজীবনের সংগ্রামের ফসল যা সংবিধানকে আলোকিত করেছিল। সেদিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরাজিত অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অতিবিপ্লবী ও উগ্রপন্থিদের অন্ধকার রাজনীতির নাশকতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে শুধু তছনছ করেনি, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল। এসব তৎপরতায় লিপ্ত খলনায়কদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে সংবিধান নামের চুক্তিনামা ভঙ্গ করেছে। পরিবার-পরিজনসহ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংবিধানে ধরে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জনগণের সঙ্গে করা চুক্তিনামা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ খুনিদের অসাংবিধানিক শাসন কায়েম করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণœ রাখতে নির্লজ্জের ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্র জনগণের সঙ্গে সেদিন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এটা কোনো বিপথগামী সেনা সদস্যদের হত্যাকা- ছিল না। যদি বিপথগামী সেনা সদস্যদের হত্যাকা- হয়ে থাকত তাহলে সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা পদবিতে জুনিয়র খুনিদের বসানো মীরজাফর খ্যাত মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করত না। খুনিদের আইনের আওতায় না এনে, কোর্ট মার্শাল না করে, ক্যু-পাল্টা ক্যু না করে উচ্চাভিলাষী সেনানায়করা নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে রক্ত ঝরাত না। এক লাথিতে বিচারপতি সায়েমকে খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানকারীরা রাষ্ট্রপতি বানিয়ে গণবাহিনী আর সৈনিক সংস্থার সংশ্লিষ্টতার মূল নায়ক কর্নেল তাহের জিয়াকে মুক্ত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্ভট স্বপ্ন দেখে নিজের জীবনটাও হারাতেন না। খালেদ মোশাররফসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের নিহত হতে হতো না। ষড়যন্ত্রের আসল নায়ক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সংবিধান লঙ্ঘন করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেন। দীর্ঘমেয়াদি একনায়ক পাকিস্তানি ধারার আদর্শের রাজনীতি নিয়ে কঠোর নির্দয় সেনাশাসক থেকে প্রেসিডেন্ট হতেন না। হত্যার রাজনীতির রক্তের পিচ্ছিল পথে তাকেও জীবন দিতে হতো না। এই রাষ্ট্র জন্মের পর থেকেই জনগণের সঙ্গে করা চুক্তিনামা লঙ্ঘন করছে। হে রাষ্ট্র! যেখানে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাসহ সবার হত্যার বিচার ২১ বছর নিষিদ্ধ ছিল সেখানে আজ কি গর্ব করে বলতে পারি সংবিধানে বলা ন্যায়বিচার মানুষ পাচ্ছে?
হে রাষ্ট্র! যে জনগণকে সংবিধানে ক্ষমতার মালিক করা হয়েছে সেই জনগণের হাতে কি তোমার মালিকানা অর্পিত হয়েছে? গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কি স্বাধীন শক্তিশালী রূপ নিয়েছে? সমাজে বৈষম্য বেড়েছে না শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকাশছোঁয়া একটি ভাস্কর্য তাঁর ও জাতির বীরত্বের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক আগেই হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। আরবে মুসলিম দেশে দেশে এমনকি পৃথিবীর শীর্ষে থাকা মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যখন ধর্ম ব্যবসায়ীরা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয় তখন রাষ্ট্র নীরব হয়ে বসে থাকে কী করে? ইসলামী রাষ্ট্র ও তাদের ইসলামী বিপ্লবের নায়ক আয়াতুল্লাহ খোমেনির ভাস্কর্য যেখানে শোভা পাচ্ছে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে এ ধরনের হুঙ্কার যারা দিচ্ছে উগ্র হঠকারী সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে, তাদের বিরুদ্ধে আইন কেন নীরব হয়ে বসে থাকে? হে রাষ্ট্র! তোমার জন্মের নেপথ্যে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহীদের রক্ত ও মা-বোনের সম্ভ্রমহানির যে বেদনা জাতির হৃদয়ে হাজার বছর ধরে ক্রন্দন করবে, তারা এসব দেখার জন্য জীবনদান করেননি। এটা বরদাশত করা যায় না। করোনা মহামারীতে সবার জন্য সভা-সমাবেশের বিধিনিষেধ থাকলেও এদের এ উগ্রমূর্তি নিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করার সুযোগ কেন দেওয়া হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারসাম্যের রাজনীতি করছেন। কওমি শিক্ষার জন্য অনেক ইতিবাচক কাজ করেছেন। তাঁর আমলেই আলেম-ওলামারা সর্বোচ্চ হজে গেছেন। আলেম-ওলামাদের আমরাও সম্মান করি। কিন্তু রাজনৈতিক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানি আইএসআইর প্রেসক্রিপশনে যারা সাঈদীর মুক্তি থেকে জনমত গড়তে ওয়াজ করেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা দেন তা গ্রহণ করি না। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ, গ্রেনেড বোমা ১০ ট্রাক অস্ত্র উলফাকে সহযোগিতা ও একুশের ভয়াবহ হামলা নিয়ে বিস্তর লিখেছি। পরিণতিতে জঘন্য গুজব ছড়িয়ে আমার বাস করা অ্যাপার্টমেন্টে সঙ্ঘবদ্ধ শক্তি ভয়াবহ আক্রমণ ও তান্ডব চালিয়েছে। এসব পরোয়া করে সাংবাদিকতায় আসিনি। যেমন ’৭৫-এর পর জীবনের মায়া নিয়ে বড় দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির মিছিলে নামতে পরোয়া করিনি। আজ গোটা দেশ আওয়ামী লীগ হয়ে যেতে পারে, ক্ষমতার লোভ-মোহে দেশের চেনা দুর্নীতিবাজ অর্থ পাচারকারীদের ঘুষখোর তদবিরবাজদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়নি। আপাদমস্তক মর্যাদার সঙ্গে সাংবাদিকতা করা আমার অ্যাকাউন্ট তল্লাশি করা হয়েছে গোটা দেশের ব্যাংকগুলোতে। বলেছিলাম, ব্যাংক হিসাব জনগণের সামনে উন্মোচন করে দিন। কিন্তু সব ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাংক ও সম্পদের হিসাব বের করুন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন সম্প্রতি বলেছেন, রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে সর্বোচ্চ অর্থ পাচার করেন সরকারি কর্মচারীরাই। এ নিয়ে প্রতিবাদ আসেনি। তিনি বলেছেন, কানাডায় আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের সম্পর্কে গোপনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়িঘর যেমন বেশি তেমনি তাদের পরিবারও বাস করছে। রাষ্ট্রের কাছে জিজ্ঞাসা, এই অনৈতিক সুযোগদান কীভাবে ঘটে? সংবিধান এখানে কোথায় থাকে? তিনি আরও বলেছেন, তাঁর কাছে আসা ২৮টি ঘটনার মধ্যে চারজন রাজনীতিবিদ ছাড়া বিদেশে অর্থ পাচারকারী ও ছেলেসন্তান রাখা ২৪ জনই গার্মেন্ট মালিক। সুইজারল্যান্ডে যাদের টাকা তাদের নাম তারা দিতে চায় না। এটা সত্য, দেশে দেশে ৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দেশে দেশে বেগমপাড়া আজ। রাষ্ট্রের এত প্রতিষ্ঠানকে জনগণের টাকায় হাতি পোষার মতো কেন তবে পুষতে হবে?
হে রাষ্ট্র! জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কতটা পালিত হচ্ছে? ধর্ষণ, হত্যা, নিরপরাধ মানুষের ওপর অত্যাচার, ব্যক্তিগত হিংসা-আক্রোশে মিথ্যা মামলায় জেল খাটানো থেকে হয়রানি, গ্রাম পর্যন্ত মানুষের জায়গাজমি দখল কীভাবে ঘটে? পুলিশি হেফাজতে মৃতের সংখ্যা গত ৫০ বছরে অনেক। শেখ হাসিনার আমলে সেদিন একটি মাত্র বিচারে সাজা হয়েছে। কোথায় মানুষের নিরাপত্তা? জনগণ ক্ষমতার মালিক মানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। বিচারপতিদের পরই বঙ্গবন্ধু এমপিদের মর্যাদার জায়গা রেখেছিলেন। এরশাদ আমল থেকে বিএনপি পর্যন্ত ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ তাঁর বক্তৃতায় বারবার পরিষ্কার করেছেন। যেখানে সচিবরা ও এমপিদের স্যার ডাকার কথা সেখানে অনেক জেলায় ডিসিরাও ডাকতে চান না। হে রাষ্ট্র! তোমার চুক্তিনামা তখন কোথায় থাকে?
স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণে সংবিধান পরিষ্কার বললেও রাষ্ট্র তুমি নির্বিকার! উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতাহীন করে ইউএনওকে ক্ষমতাবান করে রেখেছ।
চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আইয়ুব আমল থেকে এখনো চাল চোর গম চোর বানিয়ে ধরা হয়। সরকারি কর্মচারীদের অপরাধ মাফ হয়ে যায়। কিছু মন্ত্রী-এমপিও রয়েছেন ব্যক্তিত্বহীন। সচিব দেখলে স্যার ডাকা শুরু করেন। এদের সংসদে আসার যোগ্যতা নেই। এমপিদের অধিকার সম্পর্কে তাদের এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মশালা করা উচিত। ইদানীং অনেক জায়গায় একদল সচিব ক্ষমতার দম্ভে মন্ত্রীদেরও আমলে নিতে চান না। এটা গণঅসন্তোষ তৈরি করে। রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শাসন দুর্বল করে। গণমাধ্যমের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক থাকবে তথ্যমন্ত্রীর। ড. হাছান মাহমুদ একজন ভদ্র-বিনয়ী সজ্জন মানুষ। গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। সেখানে তাঁকে রেখে রাষ্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্র সবকিছু নিয়ে মিডিয়ায় মাথা ঘামালে মিডিয়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর ইমেজেরই ক্ষতি করবেন।
জি কে শামীমের পর শেখ হাসিনার কঠোর অভিযানে মাফিয়া গোল্ড বা গোল্ডেন মনির ধরা পড়েছে। এমন রাজকীয় কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হয়েছে যে, বিএনপি জমানায় তার উত্থান ঘটলেও এই সরকারের আমলেও তার অপরাধের সঙ্গী অনেক ঊর্ধ্বতনরা ছিলেন। হে রাষ্ট্র! কুম্ভকর্ণের ঘুমে ছিলে কি তুমি? সংবিধান লঙ্ঘন করে এমন মাফিয়াকে হৃষ্টপুষ্ট কর যে, কাপড়ের দোকানের কর্মচারী থেকে হাঁড়িপাতিল ব্যবসায়ী থেকে রাস্তায় গুলি খেয়ে মরা সন্ত্রাসী মুরগি মিলনের ক্যাশিয়ার থেকে আজকের মাফিয়া গোল্ডেন মনিরের ব্যাংকে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। রাজউকের অসংখ্য প্লটসহ ঢাকায় ২০০ প্লট রয়েছে তার। ওপর নিয়েছে। একটি হাউজিং কোম্পানির মালিকানা কিনেছে। সোনা চোরাচালান থেকে সব অপকর্মে বিত্তশালী এই গোল্ডেন মনির বিদেশে অর্থ পাচার করেছে হিসাবহীন। গাউছিয়ায় ছিল তার সোনা বিক্রির হটস্পট। ২৫টি অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা সে লেনদেন করেছে। তাকে গ্রেফতারের সময় ১ লাখ টাকা, ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি, মদসহ কত কিছু মেলে! ব্যাংকে আছে ৫০০ কোটি টাকা। রাস্তার চোরদের হাতে অর্থসম্পদ তুলে দিতে কি দেশটা স্বাধীন? হে রাষ্ট্র! তোমার ব্যর্থতায় চুরির দায়ে সাধারণ দোকানের কর্মচারীর চাকরি যাওয়া গোল্ডেন মনিরকে নিয়ে আজ সংবাদ শিরোনাম হয়। হে রাষ্ট্র! জি কে শামীম আর গোল্ডেন মনিরদের সংখ্যা কত? লুটেরার সংখ্যা কত?
ম্যানশন আকৃতির আলিশান বাড়ির সামনের ড্রাইভওয়েতে বিশ্বনন্দিত ব্র্যান্ডের গাড়ি। পেছনে নোঙর করা স্পিডবোট। কখনো লং ড্রাইভ কখনো লেকে ঘোরেন তিনি। টরেন্টোর গার্ডিনার এক্সপ্রেস ধরে ৪০ কিলোমিটার দূরে সিনেমাটিক জীবনযাপন করেন কিছু বাংলাদেশি। অনেক বছর ধরে তারা সেখানে বাস করেননি। ব্যবসাও করেননি। জীবনের সংগ্রাম জানেন না। তাদের অধিকাংশই দৃশ্যমান আইনে কয়েক বছরে বাড়িগুলো কেনা। এদের অনেকে এ দেশের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। গত ৫৬ মাসে যে টাকা সেখানে পাচার হয়েছে কয়েক বছরেও তা হয়নি। বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দেয়নি। সেখানে তাদের রাজকীয় জীবন। সব অপরাধীর গুরু কারা হে রাষ্ট্র! তুমি কেন ব্যর্থ? জনগণ ক্ষমতার মালিক। শোষণমুক্ত সমাজের চুক্তির কী হলো? ঢাকার বিভিন্ন সরকারি প্লট কারা পেয়েছে কারা পায়নি? এ কেমন বৈষম্য! সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অঢেল সম্পদের মালিক হয়। সরকারি জায়গাও পায়। রাষ্ট্র তুমি তখন কোথায় থাকো?
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন