ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মমতার ভূগোলজ্ঞান ও বাংলাদেশ

অজয় দাশগুপ্ত, সিডনি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১২
মমতার ভূগোলজ্ঞান ও বাংলাদেশ

ভূগোল খুব কঠিন কোনো বিষয় নয়। অংক, পদার্থবিদ্যা, পারমাণুবিজ্ঞান এমনকি সাহিত্যের মত জটিল কিছু নয়।

সোজাসাপটা হিসাব। অমুক দেশের তুমক আয়তন, অত জনসংখ্যা, ভৌগলিক সীমানা, জলবায়ু ইত্যাদি। প্রতিবেশী দেশ বা সংশ্লিষ্ট দেশের অবস্থা ভূগোল পড়ে জানতে হয় না। এমনিতেই জানা হয়ে যায়।

ছেলেবেলা থেকে জানি বাংলাদেশের তিনদিকে ভারত। বঙ্গোপসাগর আর মিয়ানমার ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে না আছে সীমান্ত না আছে ভৌগোলিক স্পর্শ। এই যে বাংলাদেশ একদা তার পরিধি ঐ বঙ্গ তথা পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভাষা সংস্কৃতি আচার ও ধর্ম ভেদে প্রায় অভিন্ন এক জাতিসত্তা। বঙ্গভঙ্গের সময় আলাদা হলো পূর্ববাংলা ও পশ্চিমবঙ্গ। নিকটতম প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ হলো ভারতের অঙ্গরাজ্য। আর পাকিস্তানের প্রদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশ থেকে কালক্রমে পরাধীনতার দাসত্বমুক্তিতে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। কিন্তু কী আশ্চর্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেনই না বাংলাদেশ কোথায় অবস্থিত! সেমিনারে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তান বর্ডারে। ’

কোথায় পাকিস্তান? কোথায় বাংলাদেশ? পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রী মমতার এই অজ্ঞতা কি সত্যি ক্ষমাযোগ্য?

তিনি না কি পরিবর্তনের ঢেউ তুলে ক্ষমতায় এসেছেন। সে পরিবর্তনের কাণ্ডারির এই যদি ইতিহাস বা ভূগোলজ্ঞান, তাহলে তরী ডুবতে কি বেশি সময় লাগবে?

আমাদের দেশের নেতা-নেত্রীরা ভারত বন্দনা তো বটেই পশ্চিমবঙ্গের বন্দনায়ও কম কিছু নন। কম যায় না সংস্কৃতির মানুষজনও। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ এলে উপহার আর ডেট দিতে দিতেই প্রাণান্ত। অন্যদিকে সে মানুষজনই ঐ বঙ্গে একই অতিথির বাড়ি থেকে শুকনো মুখে ফিরে আসতে আসতে শোনেন ‘আরেকবার এলে খেয়ে যেতে হবে কিন্তু’। ভজনা আর বন্দনার ছড়াছড়ি শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে আমজনতার মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। মমতা ব্যানার্জী ভোটে দাঁড়ানো থেকে জেতা অব্দি বঙ্গদেশের মিডিয়ার মাতম দেখে মনে হত আমরাই বুঝি নির্বাচনে লড়ছি। এখন আক্কেলটা হয়েছে তো!

দিদি বাংলাদেশই চেনে না। এ ভুল অমার্জনীয়। জানতে ইচ্ছে করে, এ জন্যই কি বর্ডারে এতো গোলাগুলি? ফেলানীর লাশ ঝোলে কাঁটাতারে?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনাদের শেখানো রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশীয় কায়দায় বলি, আপা এ বক্তব্য সুখবর কিছু নয়, যে মেধা ও প্রজ্ঞা না থাকলে পাশ্ববর্তী দেশের অবস্থান জানা যায় না তার নাম অজ্ঞতা। এতে আপনি তো বটেই আপনার রাজ্যও খেলো হয়ে পড়ছে। আর শুনুন, বাংলাদেশ বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির একক রাষ্ট্র। একে চিনতে না পারা বা পাকিস্তানের বর্ডারে বলে নিজের বাঙালি পরিচয়কেই খেলো করলেন আপনি। অবশ্য হিন্দির আগ্রাসনে সে পরিচয় প্রায় ঘুচে যাবারই পথে। হয়তো সে কারণেই সবকিছুতে পাকিস্তানের গন্ধ খুঁজে পান। আপা আমাদের নাম জয়বাংলা, বাংলার জয়!!!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ১৯ জানুয়ারি ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।