ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ জুন ২০২৪, ১৯ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

যুদ্ধটা নারী-পুরুষের, নাকি ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার

মাহবুব মিঠু, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১২
যুদ্ধটা নারী-পুরুষের, নাকি ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার

কিছুদিন আগে খবর বেরিয়েছে, ১৬ বছর বয়সী নয়াদিল্লীর মানু চোপড়া এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যা নারীকে দেবে সুরক্ষা। কোনো দুর্বৃত্ত নারীকে আক্রমন করলে ত্বক স্পর্শ করা মাত্রই প্রচন্ড বৈদ্যুতিক শকে সে কাবু হয়ে ধরাশায়ী হবে।

যন্ত্রটির সঙ্গে যুক্ত ক্যামেরা তার ছবি তুলে রেখে পুলিশকে অপরাধী সনাক্তকরণে সহায়তা করবে। যন্ত্রটি আপাত দৃষ্টিতে নারীদের বেশ সহায়ক মনে হলেও নারীদের সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট কি? যেমন গৃহে নির্যাতনের শিকার নারীকে কি এই যন্ত্র নিরাপত্তা দিতে পারবে? কিংবা রাস্তাঘাটে মৌখিক নির্যাতনের শিকার একজন নারীকে এই যন্ত্র কিভাবে বাঁচাবে। এরপরেও মানুকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সে যে মহৎ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছে তার মাধ্যমে নারী অন্তত  ঘরের বাইরেঘটা নারীর প্রতি সর্বনাশা তান্ডব থেকে অনেকটা মুক্তি পাবে।

মানুর যন্ত্রটির দুর্বলতা অর্থাৎ ঘরে নারীর সুরক্ষা এবং মৌখিক আক্রমণের শিকার থেকে নারী কিভাবে মুক্তি পাবে আমার লেখার সূত্রপাতটা সেখানেই। এক্ষেত্রে আমি পুরানো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সাঈফ রুমানার ঘটনাটিকে কেস হিসেবে ধরে আগানোর চেষ্টা করেছি।

এক সময়ের আলোচনার হট কেক এবং যে কেকের উনুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল তিনটি জীবন, সাঈদ, রুমানা ও তাদের শিশু কন্যা। সময়ের ব্যবধানে এখনও আলোচনাটা থেমে থেমে জেগে উঠলেও আগের সেই তাতানো জোড়টা নেই। মাঝে মাঝে ধপ করে জ্বলে উঠে নিভতে দেখি। অথচ এক সময়ে এক দঙ্গল আবেগী মানুষ সত্য-মিথ্যা, ন্যায়- অন্যায় এবং পরিণাম না বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রুমানার পক্ষে। কিছুদিন যেতেই সাঈদের সন্দেহজনক মৃত্যুতে আরেকদল মানুষ একই কায়দায় আবেগী তাণ্ডব চালিয়েছে সাঈদের পক্ষে। আবেগের এই তাণ্ডবে হয়ত প্রতিবারই লণ্ডভণ্ড হয়েছে তাদের দু’জনারই ছোট্ট শিশুর জীবন। এই দুই পক্ষের আবেগী মানুষগুলোর সাথে চরিত্রগতভাবে আমিনবাজারে গণপিটুনীতে অংশ নেওয়া কিংবা শিবগঞ্জে গণপিটুনী দিয়ে হত্যা করা বিবেক বর্জিত মানুষগুলোর মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখিনি।

ভয়ে নয়, তবে প্রত্যাখ্যানের সন্দেহে তখন কিছু লিখিনি। অনেকেই যখন সৌদী আরবে আট বাঙালির শিরচ্ছেদ নিয়ে আবেগী তাণ্ডবে লিপ্ত ছিল, ঠিক তখন আমি ‘স্রোতের বিপরীতে’ লেখায় ঘটনাটার একটা যৌক্তিক পক্ষ নেবার চেষ্টা করেছিলাম। মানুষ যখন আবেগের জ্বরে থরথর করে কাঁপে, তখন যুক্তিগুলো বিবেক থেকে পাখা ঝাপটিয়ে উড়ে পালায়। সন্দেহের সেই জায়গা থেকে অপেক্ষায় ছিলাম ঝড়টা থামার জন্য। মানু চোপড়ার আবিষ্কার নতুন করে বিষয়টা আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রথমেই বলে নেই যে, বিচার বহির্ভূত যে কোনো পদক্ষেপই অন্যায় এবং আইনের দৃষ্টিতে যেটা অপরাধ সেই কাজকে সমর্থন করা আরেকটা অপরাধ। রুমানার সঙ্গে যে বিষয়েই সাঈদের দ্বন্দ্বটা শুরু হোক না কেন তার একটা সামাজিক এবং আইনী পরিসমাপ্তি ছিল। কিন্তু সেই সহজ এবং গ্রহণযোগ্য পথে না হেঁটে সাঈদ রাগের বশে কিংবা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় আইনকে যেভাবে হাতে তুলে নিয়েছিল তার শাস্তিও তার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু সে পথে না গিয়ে বিচারের আগেই যেভাবে পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যু হল সেটা কি কাঙ্খিত?

প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে কোনো খবর ঘটার সাথে সাথেই বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটে যায় সবখানে। এর যেমন ভাল গুণ আছে তেমনি খারাপটাও কম নয়। খবরের সাথে মানুষের প্রতিক্রিয়াটা ন্যায় অন্যায়ের গণ্ডি পেরিয়ে সংক্রমিত হয়। এর ফলে খবরের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের অনেক সময় পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। সংক্রমিত আবেগ তখন যে কোনো একটা পক্ষে চলে যায় এবং সেই পক্ষটা ন্যায় কিংবা অন্যায়ের নয়; সত্য কিংবা মিথ্যার নয়, চলে যায় কোনো দল বা ব্যক্তির প্রতি অন্ধ সমর্থনে। রুমানার ঘটনার বেলাতেও সেটাই ঘটেছে। সাঈদের বিপক্ষে এক দল মানুষের চিৎকারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত প্রভাবিত হয়েছে। সে কারণে (সাঈদের বাবার ভাষ্য মতে) আত্মপক্ষ সমর্থনে যতবারই সাঈদের বাবা বিভিন্ন মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছেন ততোবারই তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি তাকে নিষ্ঠুরের মত বলা হয়েছে, একজন ক্রিমিনালের বাবাও একজন ক্রিমিনাল। সেটা কি করে হয়? তেমনি রুমানা কি সত্যি সত্যি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল কিনা, সাঈদের বক্তব্যের কোনো সত্যাসত্য নির্ণয়ের চেষ্টা করেনি।

অন্যদিকে, সাঈদের মৃত্যুর সুযোগে মানুষের সহানুভূতিকে পুঁজি করে কেউ কেউ পুরুষ আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করছে। ভুলে গেলে চলবে কি করে আমাদের পরিবারেও কোনো না কোনো মেয়ে হয় মা হিসেবে, না হয় বোন হিসেবে, না হয় স্ত্রী হিসেবে, কন্যা হিসেবে কিংবা অন্য কোনো সম্পর্কে রয়েছে। পুরুষ হিসেবে সাঈদের অপমৃত্যু ঘটনাটিকে এমনভাবে পুঁজি করা ঠিক নয় যার প্রভাবে নারী নির্যাতনকারীরা আবারো অপরাধ ঘটানোর সুযোগ পায়। মনে পড়ে, রফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীর ডান হাতের পাঁচটি আঙুল কেটে নিয়েছিল। কারণ স্ত্রী জুই, কলেজে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। এখনো সারা দেশের এমন কোনো পাড়া মহল্লা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কোনো নারী নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ কাউকে না কাউকে ইভটিজিংসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এই একাবিংশ শতাব্দীর যুগেও সালিশের নামে নারীদের হেনস্থা করা হচ্ছে।  

যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে কয়েকটি বিষয় ঘটতে পারে। হয় এক পক্ষ সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং অপরপক্ষ অপরাধী। কিংবা উভয়েই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তদন্তের আগেই আমরা রুমানার পক্ষ নিয়ে তার কোনো অপরাধ ছিল কিনা সেটার প্রমাণকে বাধাগ্রস্ত করেছি। জোর দিয়ে বলবো, রুমানার যদি ইরানী ছেলের সঙ্গে কোনো অনৈতিক সম্পর্ক থেকেও থাকে, তথাপি তাকে নির্যাতন করে সাঈদ ভয়াবহ অপরাধ করেছে। কিন্তু সত্যটা বের হয়ে আসলে এ ধরনের একটা অনৈতিক সম্পর্কের কারণে রুমানা একটা সামাজিক শাস্তি পেত। যেটা সমাজে ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে ঠেকাতে সহায়তা করত। সেদিকে না গিয়ে প্রকারান্তরে দু’টো সর্বনাশা বিষয় ঘটে গেছে।

এক, রুমানার বিরুদ্ধে যদি সাঈদের অভিযোগ সত্য না হয়ে থাকে তবে সারা জীবন রুমানার উপরে কিছু মানুষের ঘৃণা থাকবে। কারণ বিষয়টা সত্যমিথ্যা যাচাই হয়নি। সেই সুযোগে সন্দেহটা থেকেই গেল। এবং এই কথিত ঘটনাকে ব্যবহার করে পুরুষ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলতেই থাকবে। দুই, রুমানার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে মিডিয়া যেভাবে ঘটনাটা এড়িয়ে গেছে তাতে সমাজ একটা ধারণা করতে পারে যে, এ ধরনের ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। ফলে সমাজে এর একটা সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব আছে।

কেউ কি বিষয়টি নারী কিংবা পুরুষ, এই পরিচয়ের ফ্রেমের বাইরে গিয়ে ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত কিংবা সত্য-মিথ্যার আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করেছিল? না পত্রিকা, না অন্য কেউ? কিংবা নারীবাদের নামে র্যাডিক্যাল ফ্যামিনিজম চালু করে কেউ কি সমাজে সেই পুরানো লিঙ্গ বিবাদ পুণরায় টেনে আনতে চাইছে? কিংবা পুরুষ পক্ষপাতিত্বের যুক্তিকে উস্কে দিচ্ছে? অথবা সাঈদের সন্দেহজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কেউ কি পুনরায় পুরুষকে নারীর মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছে? জানি, এই সব হাজারো প্রশ্নের উত্তর ঘেটে সাঈদকে যেমন ফেরানো যাবে না, ঠিক তেমনি রুমানাও ফিরে পাবে না তার হারানো চোখ। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের উভয়ের সন্তান আর কখনো মা বাবার সেই স্নেহ মাখা সুন্দর গৃহখানি ফিরে পাবে না।

নারীর অধিকার রক্ষার নামে যেমন কিছু পুরুষ বিদ্বেষী র্যাডিক্যাল নারীবাদীরা পুরুষকে বিপক্ষ বানাতে চাচ্ছে। ঠিক তেমনি সেই সুযোগে পুরুষতান্ত্রিক কিছু মানুষ নারীকে আবারো পিছনের দিকে ঠেলে দিতে তৎপর। বিভিন্ন দর্শন নিয়ে নারীবাদ এখন সারা বিশ্বে সোচ্চার। শুরুটা হয়েছিল সেই মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট (১৭৫৯-৯৯) Mary Wollstonecraft (1759-1799) সালে লিবারেল নারীবাদের মাধ্যমে। এদের দাবি ছিল নারীর সম-অধিকার পুরুষের মত। সম-অধিকারকে “অর্থহীন ধারণা” বলে সমালোচনা করে নারীর পশ্চাতপদতার জন্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে দায়ী করে পথচলা শুরু হয় র্যাডিক্যাল ফ্যামিনিজমের। এটা অনেকটা ডিম আগে না মুরগি আগের মত যুক্তি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কেন তৈরি হয়েছে উত্তর খুঁজলে সেখানে নারীর প্রতি অসম

আচরণকেই কারণ হিসেবে পাওয়া যাবে, যেটা লিবারেল নারীবাদীরা দূর করার চেষ্টা করছেন। র্যাডিক্যাল নারীবাদের সমস্যা হচ্ছে এরা পুরুষকে সহযোদ্ধা না ভেবে প্রতিপক্ষ ভেবে সমস্যা সমাধানে ততপর। এই ধারার আন্দোলনকারীরা মনে করে পৃথিবীর সব পুরুষেরা নারীর প্রতি আধিপত্য এবং বৈষম্য সৃষ্টিকারী। তাই এদের বৈষম্যহীন সমাজে সৃষ্টির ধারণা হচ্ছে নারীর জন্য পৃথক এবং সার্বভৌম সমাজ তৈরি করা। এ কারণেই এই ধারার নারীবাদ থেকে লেসবিয়ানের মত কনসেপ্ট তৈরি হয়েছে যাতে এমনকি নারীদের যৌনকর্মের জন্য পুরুষের প্রতি নির্ভরশীল হতে না হয়।

আমাদের দেশেও নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে দু’টো পক্ষ খুবই শক্তিশালী । এক পক্ষ নারীর অধিকারের নামে পাশ্চাত্যের সামাজিক ধ্যান ধারনাকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। অন্যপক্ষ, সেই সুযোগে নারীকে আবারও গৃহের মধ্যে শেকল পড়ানোর চেষ্টায় আছে।

সারা বিশ্বে বিভেদের এই সংস্কৃতি শুধু নারী পুরুষভেদেই নয়। আরো অনেক পরিচয়েও সেটা হয়ে থাকে। এই বিভেদের সীমারেখা মুছে ফেলার জন্য অন্ধভাবে কোনো পক্ষ অবলম্বন করা সমীচীন নয়। পক্ষটা অবলম্বন করা দরকার ন্যায়- অন্যায়, সত্য-মিথ্যার আলোকে। সেটা না করলে বিভাজনটা থেকেই যাবে। বরং পরিধি আরো বাড়বে। যেমন পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নারীবাদ কি পেরেছে নারীর ভিতরগত অর্ন্তদ্বন্দ্ব কিংবা বিভাজনকে ঠেকাতে? নারীবাদের মত কনসেপ্টগুলোও কি পাশ্চাত্য আধিপত্যমুক্ত? সেখানে কি বিশ্বের অন্য সংস্কৃতির নারীর ইচ্ছা কিংবা স্বপ্নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে? নাকি বিশ্বের সব স্থানের, সব নারীকে পাশ্চাত্য নারীর সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে? সর্ষের ভিতরেই যেখানে ভূত, সেখানে ভূত তাড়াতে নারীদেরইতো এগিয়ে আসতে হবে। সেই ভূত তাড়াতেই আফ্রিকান নারীরা এলিস ওয়াকারের মত প্রথিত আত্ম মর্যাদাশীল নারীদের নেতৃত্বে ব্লাক ফেমিনিজম নামে নতুন নারীবাদ ‘ওমানিজম’ চালু করেছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে পাশ্চাত্যে উদ্ভূত নারীবাদ জেন্ডার ভিত্তিক বিভাজনের কথা তুলে ধরলেও সেখানে রেসের প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এলিস ওয়াকার যুক্তি দিয়েছেন, শুধু মাত্র বর্ণের কারণে আফ্রিকান নারীরা সাদা নারী কর্তৃক সৃষ্ট নারীবাদী ধারণাতেও বৈষম্যে শিকার হচ্ছে।

পাশ্চাত্যে আঠার বছর পরে পরিবারের যে কেউ স্বাধীন ইচ্ছেমতো জীবন যাপন করতে পারে। আমাদের দেশের মতো পারিবারিক মূল্যবোধ এতটা গাঢ় নয়। নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে মুখে গর্ব করে কাজে এবং চিন্তায় পাশ্চাত্যের সব কিছুকে যাচাই বাছাই না করে গ্রহণ করাটা কপটতা ছাড়া কিছুই নয়।   বাঙালির বা বাংলাদেশির  একটা নিজস্ব সংস্কৃতির রূপরেখা দরকার। যেখানে আমাদের মন্দটাকে বিসর্জন দিয়ে সেই “ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়” এর মত মায়া এবং মমতা মেশানো একটা সমাজ উপহার দিতে পারি সকলে মিলে। যেখানে নারী পুরুষের দৈহিক বিভাজন ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় বৈপরীত্ব থাকবে না।

সনাতনী সমাজ ব্যবস্থায় নারী যে অরক্ষিত সেটা আবারো নীলফামারীর ইউএনও কাউসার নাসরিন নারী হয়ে প্রমাণ করলেন একজন কলেজ ছাত্রীকে পতিতা আখ্যা দিয়ে। ঠিক তেমনি তথাকথিত অতি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়ও নারীর অবস্থান ভঙ্গুর। কিছুদিন আগে ব্রাজিলের রিয়েলিটি টিভি শো ’বিগ ব্রাদারে’ এক প্রতিযোগিকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠে। নারীর অধিকার রক্ষায় এবং নারী সুরক্ষায় যেমন মানুর আবিষ্কৃত যন্ত্রের প্রয়োজন আছে, তারচেয়ে বড় দরকার কঠোর আইন এবং নারী পুরুষের সম্পর্কের উন্নয়ন। পক্ষ অবলম্বন করে কারো অনৈতিক কাজকে সমর্থন যোগানো যেমন অন্যায় ঠিক তেমনি সেটাকে পুঁজি করে পুরানো পুরুষ আধিপত্যবাদকে বৈধতা দেবার চেষ্টা করা ভয়ানক অন্যায়।

[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।