ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রুনি-সাগরকে নিয়ে একটি নিবন্ধ ও সাংবাদিকতার দৈন্য

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২
রুনি-সাগরকে নিয়ে একটি নিবন্ধ ও সাংবাদিকতার দৈন্য

এই লেখাটি কিভাবে লিখবো তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ভেবেছি। ভালো কোনো কাজ হলে প্রশংসার ভাষা অনেক।

কিন্তু কাজটি যখন নোংরামির পর্যায়ে পড়ে তখন তা নিয়ে লেখা একটু কঠিন হয়ে যায়। সাংবাদিকতার চর্চায় ব্যক্তিগত আক্রমণ পরিহার করার কথা শিখিয়েছেন শিক্ষকরা। কিন্তু আমার এই লেখায় ব্যক্তিগত কিছু কথা না তুলে ধরে পারছি না বলে পাঠকদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

‘বদলে যাও বদলে দাও’ স্লোগান দিলেও দৈনিক প্রথম আলো তার নিজের আচরণ আসলে মোটেই বদলাতে পারেনি তা আবারও প্রমাণ করেছে। এবার নিজের দীনতার নগ্ন প্রকাশ ঘটিয়েছে সংবাদপত্রটি।

বিষয়টি ‘সাগর-রুনি’র হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রসঙ্গে। এটি লিখেছেন আমাদের সবার প্রিয় কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু। তাদের লেখায় উঠে এসেছে মেহেরুন রুনি ও সাগরের জন্য কিছু আকুতি। সম্পূর্ণ মানবিক আবেদনধর্মী একটি প্রতিবাদী লেখা যা বাংলানিউজে প্রকাশিত হয়েছে গত ১৪ফেব্রুয়ারি রাতে খুন হওয়া সাগর-রুনিকে আর খুন নয়’ এই শিরোনামে।

লেখাটির একটি নাতিদীর্ঘ ইতিবৃত্ত রয়েছে: ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে এমন একটি লেখার আইডিয়া নিয়ে এর লেখকদের মধ্যে একাধিক জনের সঙ্গে আলোচনা করি। তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি, এমন কিছু একটা লিখতে যাতে সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে যেভাবে খবর আসছে তাতে এই দুই তরুণ ও যোগ্য সংবাদকর্মীর সারা জীবনের অর্জনকে কালিমালিপ্ত করার যে পাঁয়তারা চলছে সে দিকটি যেন উঠে আসে।

চাইলেই হুট করে একটি লেখা তৈরি করা যায় না, সে কারণে বিকেল নাগাদ তেমন কিছু হাতে এলো না। শেষ পর্যন্ত বিকেলে বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট জাকিয়া আহমেদকে বিভিন্ন জনের মন্তব্য নিয়ে একটি লেখা তৈরি করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করি। জাকিয়া যে কাজটি করলেন তা হয়ে উঠলো আশাতীত কিছু। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি একটি লেখা জমা দিলেন। লেখকদের নামের তালিকায় বেশ কজন  প্রিয় সাংবাদিকের নাম। মনটাই ভরে গেলো। সবার সঙ্গে কথা বলে লেখাটি তৈরি হয়েছে। মূলত তিনি এটি তৈরি করেছেন  যা সবার যৌথ একটি লেখা হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

লেখাটি পড়তে পড়তে এক জায়গায় পেলাম লেখা হয়েছে ‘সোমবার মধ্যরাত থেকে প্রতিনিয়ত আমরা আসলে রুনিকে খুন করছি। ’ এই অংশ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে লেখাটির শিরোনাম হলো খুন হওয়া রুনি-সাগরকে আর খুন নয়!তবে এই লেখার মধ্যেই ছিলো-- ``রুনির প্রতি আমরা সম্মান দিতে চাই। `` 

যৌথভাবে একটি লেখা প্রকাশের ধারার প্রবর্তক দৈনিক প্রথম আলো। এবং জনপ্রিয় এই ধারাটি এখন অনেকেই অনুসরণ করে। বাংলানিউজের এই লেখাটিও সেভাবেই প্রকাশিত হয়েছে।  

এমন একটি যৌথলেখা তৈরির ধরণ আমাদের সবারই জানা। দলের এক বা দুই জন লেখাটি তৈরি করেন এবং সেটি সকলের কাছে ই-মেইলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেখানে কারো বাড়তি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংযোজনের পরামর্শ থাকলে যোগ করে সবার যৌথ নামে প্রকাশিত হয়।

প্রাথমিকভাবে যাদের নামে লেখাটি প্রকাশিত হয় তাদের সঙ্গে এর লেখক তালিকায় পরেও যোগ করা হয় আরও তিনটি নাম। যারা এই আহ্বানে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন।

লেখাটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। কিন্তু ওই লেখা বা তার পাঠকপ্রিয়তা কোনোটিই আমার এই লেখার মূল দিক নয়। বৃহৎ এই গৌরচন্দ্রিকা এই জন্য যে, জাকিয়া আহমেদসহ অন্যান্য সংবাদকর্মীর যৌথ ওই লেখাটি নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো  যে কাণ্ডটি করছে তা পাঠককে জানানো।

১৫ ফেব্রুয়ারি জাকিয়া আহমেদ জানান, দু’একটি সংবাদপত্র তাদের লেখাটি পুনর্মুদ্রণ করতে চায়। এর মধ্যে দৈনিক প্রথম আলোও রয়েছে। কিন্তু প্রথম আলোতে অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে জাকিয়া আহমেদের নামটি থাকায় সেটি রাখতে তাদের আপত্তি রয়েছে। তাদের প্রস্তাব, জাকিয়ার নামটি বাদ দিয়ে প্রথম আলোর একজন নারী সাংবাদিকের নাম যোগ করে লেখাটি কিছুটা সম্পাদনা করে প্রকাশ করা। সহলেখকদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন, জাকিয়ার কাছে জানালেন প্রথম আলোর ভাবনার কথা।

প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিলো এমন দীনতার পরিচয় সংবাদপত্রটি দেবে না। কিন্তু ঠিক সেই কাণ্ডই করলো পত্রিকাটি। ১৭ ফেব্রুয়ারির সংখ্যার খোলা কলাম পাতায় প্রকাশ পেলো কয়েকজন সাংবাদিকের লেখা সেই আহ্বানটি ‘আসুন, আমরা তাঁদের সম্মান দিই’ শিরোনামে। যাতে বাদ পড়েছে জাকিয়া আহমেদের নাম।

লেখাটি এখানেই শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পাঠককে এটুকু জানাতে চাই প্রথম আলো এই সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছে তার ভেতরের খবর টানা-হেঁচড়া করতে চাই না। কিন্তু বাংলানিউজ যখন তার লেখাটি প্রকাশ করে তাতে প্রথম আলোর মালিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকমের অপর দুটি সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার ও এবিসি রেডিও’র দুই জন সাংবাদিকের নাম ছিলো। যা থাকবে, কি থাকবে না এমন প্রশ্নটিও বাংলানিউজের সংবাদপক্ষে বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ওঠেনি।

পুনশ্চ: জাকিয়া আহমেদ রিপোর্টিংয়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন সংবাদকর্মী। আদালত ও মানবাধিকার নিয়ে বর্তমানে যারা রিপোর্টিং করছেন তাদের মধ্যে সেরাদের একজন তিনি। সুতরাং জাকিয়া আহমেদের নাম প্রকাশ নিয়ে কোনো আকুতি থেকে এই লেখা নয় তা আশা করি পাঠক মাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন।

আমার এই লেখা কেবলই প্রথম আলোর দীনতার দিকটি তুলে ধরার জন্য।

বাংলাদেশ সময় ১৭২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।