ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে হত্যা মামলার তদন্তও!

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১২
প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে হত্যা মামলার তদন্তও!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে। তাকে এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মও দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া কি শোভন হবে? না কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী কোন হত্যা মামলার তদন্ত তদারকি করেন? অবাক কাণ্ডটি দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশে!

‘সাগর-রুনি’ নামে দেশের মেধাবী সাংবাদিক দম্পতি বিদেশ থেকে ফিরে খুন হয়ে গেলেন! বাংলাদেশের বাঘা গোয়েন্দারা এই হত্যা রহস্যের কুলকিনারা করতে না পেরে এখন আরেক জজ মিয়া খোঁজার পথে আছেন!

মাদকাসক্ত হালকাপাতলা একজনকে চোর সাজিয়ে সাগর-রুনির বাসার কাটা গ্রিলের ভিতর দিয়ে ঢোকানো-বের করার সফল রিহার্সাল হয়েছে! চোর বেটা ঘরের দামি জিনিসপত্র গয়নাগাটি-নগদ টাকাকড়ি নিলো না, নিলো ল্যাপটপ, আইপড! যাওয়ার আগে দু’জনকে কুপিয়ে মেরে চলে গেলো!

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা, আইজিপির আশাবাদ সবকিছু এর মাঝে অসত্য-অকার্যকর প্রমাণিত! প্রতিবাদে সারাদেশের মানুষজনের সঙ্গে সাংবাদিক সমাজের ফুঁসে ওঠা দেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলে দিলেন, ‘এই মামলার তদন্ত ধামাচাপা পড়ার সুযোগ নেই।

কারণ, খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তদারকি করছেন মামলার তদন্ত! এর মানে কি দাঁড়ায়? এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর আর আস্থা নেই প্রধানমন্ত্রীর! কিন্তু তাকে বাদও দিতে পারছেন না, তার কাজকর্মের দায়িত্বও অতঃপর নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন!

এমনিতে সরকার প্রধান হিসাবে মন্ত্রীদের কাজকর্মের সব দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর ঠিক আছে। অথবা এই প্রধানমন্ত্রী এবার সবকিছুর লাগাম-নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে সে রকম দেখে দেখে মন্ত্রীও নিয়েছেন। কিন্তু এরাও একের পর এক নিজেদের দায়দায়িত্ব সব যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর দিকে ঠেলে-ধাক্কিয়ে দিচ্ছেন, এসবের পরিণতি দেশ আর সরকারকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা কি তারা ভাবতে পারছেন?

শেয়ার কেলেংকারির তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানালেন, কেলেংকারির কুশীলবদের হাত অনেক লম্বা। তিনি কিছু করতে পারবেন না। রিপোর্ট দেবেন প্রধানমন্ত্রীকে।

এরপর সবাই দেখলো-জানলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে রিপোর্ট জমা হয়েছে এবং শেয়ার কেলেংকারির বিচার হয়নি। এরপর থেকে পুরো বিষয়টি নিয়ে এতদিন আড়ালে-আবডালে অনেক কথা হতো। এখন কথা হয় প্রকাশ্যে।

শেয়ার মার্কেটের অবস্থা আর স্বাভাবিক হয়নি। আস্থা ফিরে আসেনি বাজারে। পুঁজি হারিয়ে সেখানে এখন আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। এখন আবার প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে চাপলো সাগর-রুনি’র হত্যা মামলার তদন্ত। এটি এখন কোথায় গিয়ে পৌঁছ‍ুবে কেউ জানে না।

বিদেশে বসে দেশের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করি বলে অনেকে কটাক্ষ করেন। আসলে দেশে থাকার সৌভাগ্য সবার হয় না। আর বিদেশে এতকিছু সামাল দিয়ে দেশ নিয়ে ভাবার সময় বের করা কঠিন। হয়তো না করলেও চলে। কিন্তু পারি না যে! এমনই অবিচ্ছেদ্য শেকড়ের সম্পর্ক!

এই শেকড়ের টানেই দেশে ফিরে গিয়েছিলেন সাগর-রুনি। দেশে ফেরাতে তারা খুন হয়ে গেছেন! বাবা-মা’কে হারিয়ে চিরদিনের জন্য এতিম হয়ে গেছে মেঘ! এখন এসব প্রসঙ্গ না, ডিম আগে না মুরগি আগে’ বিতর্কের মতো অন্য নানা বিষয় নিয়ে ভীষন বিতর্ক চলছে!

কে মরেছে আগে, রুনি না সাগর, কার কারণে কে মরলেন, সাগরের কারণে রুনি, না রুনি’র কারণে সাগর, সাগরের গায়ে এতগুলো কোপ, রুনি’র গায়ে কোপ কম পড়েছে কেন, এমনসব উদ্ভট বিতর্ক!

সিন্ডিকেটেড রিপোর্টের মাধ্যমে মৃত রুনি’কে একদলা কলঙ্ক দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে! মামলা ডিবিতে পাঠানোর পর সিআইডি বলেছে, ‘অকুস্থলে মিডিয়াসহ নানা শ্রেণী-পেশার লোকজন হুড়মুড় করে ঢুকে পড়াতে হাতের ছাপসহ সব আলামতই অস্পষ্ট!

এতদিন পর সবার মনে পড়েছে ভিসেরা রাখার দরকার ছিল! এমন আমাদের সবকিছুই কেমন যেন ক্যাজুয়াল! হয়তো একটি ঘটনার পর এভাবেই প্রায় সব সময়ই কাজকর্ম করে পুলিশ! লোকজনকে ধরে-পিটিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করিয়ে মামলা সাজায়! কিন্তু এ ঘটনাটিতে মিডিয়া আর দেশের মানুষজনের নজর মাথার ওপর দেখে আর তা পারেনি! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বটি নিযেছেন প্রধানমন্ত্রী!এখন তাকেই নিতে হবে সবকিছুর দায়!

শুধু এই হত্যা মামলা না, তার সরকার যে ভালো চলছে না, স্বরাষ্ট্রসহ অনেক মন্ত্রী যে ভালো করছেন না, এর কারণে তার মন্ত্রণালয় চলছে এমন লেজেগোবরে, এর সবকিছুর দায়-দায়িত্বই প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হচ্ছে অথবা তা তাকে অলরেডি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে!

সালেহা খালার কান্নাই শুধু সহ্য করার না! সাগরের মা। সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। টেলিফোনে নানা সময়ে লম্বা আলাপ হয়েছে, আমার মতো আরো অনেকে মজা করে ছোটখাটো সাগরকে সালেহা খালার ব্যাটা নামে ডাকতেন! সাগরের বাবার মৃত্যুর পর নানাভাবে ছেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছিলেন সালেহা খালা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার অবস্থা বুঝি শুধু মায়েরাই অনুভব করতে পারবেন।

মাছরাঙ্গা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় মেঘে’র জন্য কিছু করবেন। এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষও কিছু করবেন, রুনি’র সন্তানের জন্য। সাগর-রুনি’র ওপর নির্ভরশীল মায়েদের কথাও যেন ভুলে না যাওয়া হয়। জোড়াখুনের পর সাগর-রুনি’র সংসারটিও আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। বিদেশে এমন পেশাজীবী বাবা-মা’র বাচ্চাকাচ্চা স্কুলের আগে-পরে আর্লি এন্ড ডে’কেয়ারে থাকে। আর সাগর-রুনি’র সন্তান মেঘ থাকতো তার নানী তথা রুনি’র মায়ের কাছে। মা-বাবা’কে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে এখন মেঘকে এই নানীর কাছে অথবা নানীর সংসারেই থাকতে হবে আরও দীর্ঘদিন! প্রধানমন্ত্রী তার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। হত্যা মামলাটি আপাতত যে পথে, সেটি যেন সঠিক পথে থাকে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, মেঘের জীবনটা একটু সিরিয়াসলি দেখুন। তার নামে একটি ভালো ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যবস্থা, দরকার হলে দেশে অথবা বিদেশে ভালো একজন সাইকোলজিস্টের অধীনে তার দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যার ব্যবস্থা করা গেলেও খুব ভালো হয়।

সাগর-রুনি’র করুণ মৃত্যুর বিষয়টি থিতু হয়ে আসার আগেই এ ব্যবস্থাগুলোর অগ্রগতি চাচ্ছি। আরও সব ব্যর্থতা চিহ্নিত হবার আগেই। প্লিজ!!!

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।