ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মোটা লাভের টোপ, নাকি বাতকা বাত?

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১২
মোটা লাভের টোপ, নাকি বাতকা বাত?

জীবনের দীর্ঘ একটা সময় কেটেছে মেসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে মফস্বলের আমি এসে দ্বারস্হ হয়েছিলাম সালু ভাইর কমলাপুর বাজার মসজিদের উল্টোদিকের একটা টিনশেড মেসে।

প্রাতঃক্রিয়ার জায়গায় দরোজার বদলে ছিলো চটের পর্দা। লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে ক্রমাগত সংগীত চর্চায় জানান দিতে হতো ভেতরে কেউ আছ। বাইরে বদনা হাতে অধৈর্য লাইন তখন আমার হেঁড়ে গলার শ্রোতা।

দ্বিতীয় দফা বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন শেষে। সামান্য সাব এডিটরের চাকুরিতে বাড়ি ভাড়া করার সাধ ও সাধ্য কোনটাই ছিলো না। ঠিকানা ফকিরাপুলের করিম মিয়ার চারতলা মেস। প্রতি ফ্লোরের চারটি রুমের জন্যে একটি গোসলখানা ও একটি মাত্র শৌচাগার। এক রুমে আমরা মাত্র দু’জন থাকলেও অন্য রুমগুলোতে গড়ে চারজন। কেউ কেউ আবার শেয়ারিংয়ে সংখ্যাটা ছয়-আটে উন্নীত করতেন। আমার পাশের কামরায় থাকতেন কুমিল্লার প্রতিবেশী উপজেলা নাংগলকোটের নান্নু। বেচারা তখন লাগেজ ব্যবসায়ের সেকেন্ডহ্যান্ড বায়ার জীবনে হাঁটি হাঁটি। ‘লুকিং ফর শত্রুজ’ বাবরেরা তখন কাস্টমসের মায়া-মহব্বতে  হংকং-সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক -দুবাই থেকে প্রসাধনী সামগ্রী বিনাশুল্কে ঢাকা বিমানবন্দরের দরোজা পার করার ক্যারিয়ার মাত্র। বিনিয়োগকারী বড় বড় রুই কাতলা সেইসব চোরাই পণ্য চড়া দামে বিক্রি করতো নান্নুদের মতো কম পুঁজিঅলাদের কাছে। নান্নুরা ঘুরে ঘুরে সেইসব পণ্য নগদে-বাকীতে সরবরাহ করতেন বিভিন্ন দোকানে। তখনো জোনাকির পাশে চোরাচালান পণ্যের মার্কেটটি জমে ওঠেনি।

বাকিতে বিক্রির টাকা কখনো সময় মতো আসে না। ফলে নান্নুকে প্রায়শঃই হাত পাততে হতো বিভিন্ন জনের কাছে। ‘ধার ফেরত না-দেবার বিরল গুণের অধিকারী’ বাগ্মী নান্নু মোটা মুনাফার লোভ দেখিয়ে শিকার গাঁথতেন বড়শিতে। দুই হাজার টাকায় দুই হাজার লাভ! লোভনীয় লভ্যাংশের অফার এড়ানো কারো পক্ষেই সম্ভব হতো না। অবাক আমি একদিন নান্নুর কাছে প্রশ্নটা পেড়েছিলাম। আমার কাছে আপদমস্তক সৎ থাকা নান্নু হেসে জানালেন, ‘ভাই ফেরত দেবার নিয়তেতো টাকা ধার নেই না। ফেরতই যদি দিতে না হয় তাহলে পচিশ-পঞ্চাশ- একশ পার্সেন্ট লাভের ঘোষণা বা কমিটমেন্টে অসুবিধা কি?’ কাজ হাসিল হয়তো। ধারদাতাও খুশী হয়। ’

‘উদ্ধত ও অহংকারী ড. ইউনুসের সাথে বর্তমান সরকারের বনিবনা নেই বলেই জানি। দেশের রাজনীতিকদের মতো ড. ইউনূসেরও সব কিছুতেই একা একা খাই খাই। তীব্র লবিংয়ের জোরে নোবেল প্রাপ্তির পর ইউনূসের অহংবোধ আকাশচুম্বী হয়েছে মাত্র। ভাবে-সাবে বারাক ওবামা!  কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা ছাড়াই ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের পদে চিরস্হায়ী থাকার ‘বায়নায়’ ছিলেন। ‘এক ঘর মে দো পীর নেহি হোতা’ নীতিতেই গ্রামীণ থেকে ড. ইউনূসকে ‘আইনের দোহাইয়ে’ ঘাড় ধাক্কা দেওয়া হয়। ড. ইউনুসও সরকারের বারংবারের অনুরোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদেশে বন্ধুদের প্রভাবের দাপট দেখাতে ব্যস্ত ছিলেন বেশি।

সেই দা-কুমড়ো সম্পর্কের ড. ইউনূসকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বানানোর জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী খুব ভালোভাবেই জানতেন মার্কিন নাগরিক ভিন্ন এই পদের মনোনয়ন বেশ দুর্লভ, অপ্রত্যাশিত ও প্রায়-অসম্ভব। তবু তিনি অনুরোধ জানিয়ে সবাইকে অবাক করছিলেন।

নান্নু ফেরত না দেবার মনোবৃত্তিতে মোটা লাভের টোপ ফেলতো। কাজটা হবে না জেনেই কী প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব? বাতকা বাত? প্রধানমন্ত্রী যদি ডঃ ইউনুসকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্য ভাবেন, তাহলে ‘গুণী’ এই মানুষটিকে আইন সংশোধনের মাধ্যমে কেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হয় না? বিশেষভাবে যোগ্যদের জন্যে সব সময় আইন-কানুন, রীতিনীতি শিথিল করার রেওয়াজ দুনিয়া জুড়েই আছে।

সদিচ্ছা কথায় নয়, কাজেই প্রমানিত হয়।

ইমেলঃ [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।